Site icon দৈনিক এই বাংলা

এবার ভুতুড়ে মামলা আনোয়ারায়

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি ::

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অবরোধকে কেন্দ্র করে ভুতুড়ে মামলা করা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। চট্টগ্রাম শহর,  সীতাকুণ্ড ও পটিয়া ছাড়া কোথাও কোন গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা না ঘটলেও আনোয়ারা উপজেলায় সামনে আনা হয়েছে ভুতুড়ে ঘটনা। উপজেলার অত্যন্ত জনবহুল চাতরী চৌমুহনী বাজার এলাকায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় ১৭ বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামী করে নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলাটিতে সাবেক সাংসদ ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য সরওয়ার জামাল নিজামের অনুসারী আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া চৌধুরী জকু, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মোহাম্মদ ফারুকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।গত সোমবার (৩০অক্টোবর) আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দীন এ মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে বিএনপির সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শাস্তি সমাবেশ শেষে কালাবিবির দিঘী মোড়ে এসে পৌঁছালে বিএনপির নেতাকর্মীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে।

অতচ আনোয়ারা উপজেলার জনবহুল এ এলাকায় এ ধরনের হামলা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাংচুরের কোন ঘটনা স্থানীয় কারো চোখে পড়েনি। থানায় গিয়ে ভাংচুর করা গাড়ির কোন খোঁজ মেলেনি। স্থানীয় ড্রাইভারদের সাথে কথা বলেও ভাংচুরের শিকার হওয়া গাড়ির খোঁজ মেলে নি।

স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘চৌমুহনী ও কালাবিবির দিঘির মোড়ে গাড়ি ভাঙচুর কিংবা ককটেল বিস্ফোরণের কোন ঘটনাই ঘটেনি।’

এ ঘটনা ও মামলার বিষয়ে বাদি নাছির উদ্দীনের কাছে জানতে চাওয়া হলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। মামলাটিকে গায়েবি বলে দাবি করেছেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার বাদি নাছির উদ্দীন অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায় কয়েকমাস আগে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মাদকসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

মামলার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সোহেল আহমদ বলেন, ‘ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা ৪৫ জনের বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় বুধবার তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ‘

মামলার এজাহারে  উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক জাগির আহমদ (৫০), বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন মেম্বার (৪৫), তারেক মেম্বার(৪২), আবদুল গফুর প্রকাশ ক্রাফ গফুর (৪৮), মো. মানিক (২৫), মো. হৃদয় (২৫), মিজানুর রহমান ফরহাদ (৩৫), আবদুল মাবুদ (৪৬), শাহেদুল ইসলাম (৫২), ফারুক হোসেন (৩৮), খালেদ মোশারফ সোহেল (৩৮), মো. সেলিম (২৫), মো, জাকারিয়া প্রকাশ জকু (৫৫), রফিকুল ইসলাম ( ৫০), সালাউদ্দিন সুমন (৪২), মো. নুরুল কবির রানা (৪০) ও মো. সুমন (২৪) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০/৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।

এদিকে,  চৌমুহনী বাজারে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় আনোয়ারায় ওই সময় কোন ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। কোন ধরনের মিছিল কিংবা পিকেটিংও দেখেননি তারা ।

মামলাটির বাদি নাছির উদ্দীন মামলা করার জন্য  আনোয়ারা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাপত্র সংগ্রহ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, আহত না হবার পরও মামলার জন্য চিকিৎসাপত্র দেয়া হয়েছে তাকে। সুত্রমতে, দাগী আসামি নাছিরকে দিয়ে জোর করে  এই ভুতুড়ে  মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ হাসপাতালে কোন রোগী আসলে আমরা চিকিৎসা দেই । যদি মারামারি বা দুর্ঘটনায় আহত হয় তবে সেটি হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতায় আহতেন নাম লেখানো হয়। আহত হওয়া ছাড়া চিকিৎসা পত্রের বিষয়টি সম্পর্কে আগামীকাল নিশ্চিত হয়ে জানাবো। ‘

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সরোয়ার হোসেন মাসুদ বলেন, হঠাৎ বিএনপির যুগ্ম আহবায়কসহ অজ্ঞাত নামা অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। আনোয়ারায়  এই ধরনের কোন ঘটনা ওইদিন ঘটেনি। আমাদেরকে আন্দোলন থেকে হাটানোর জন্য বিএনপি নেতা কর্মীদের ঘরে ঘরে পুলিশ দিয়ে হয়রানি  করা হচ্ছে। ‘

 

Exit mobile version