Site icon দৈনিক এই বাংলা

বিএনপি নেতাদের কাঁধে মামলা, রাজপথ দখলে রাখতে চায় আ. লীগ

আহসান ফয়সাল ||

অক্টোবর মাসে সরকার পতনের আন্দোলন জোরদারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলো। সরকারও বিরোধী দলের রাজপথের আন্দোলনে কৌশলগত ছাড় দিচ্ছে। তবে সেই সাথে নতুন ও পুরোনো মামলার ভার বাড়ছে বিএনপি নেতাদের কাঁধে। রাজপথের আন্দোলনে চূড়ান্ত উত্তাপ ছড়ানোর আগেই ফের মামলার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে বিএনপি নেতারা।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারাদেশে তারুণ্যের সমাবেশ,  রোড়মার্চ কর্মসূচি,ঢাকায় ছাত্র কনভেনশনের পরে সরকারের তরফ থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে  গতি বাড়ানো হয়েছে । দ্রুত ফেলা হচ্ছে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ;শেষ করা হচ্ছে বিচারিক প্রক্রিয়াও। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতার অভিযোগে করা মামলাগুলোও সচলের উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩৪৩ মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৩ হাজার ২৭০ জনকে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ২৫০ জন। একই সময়ে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় মামলা তথ্য ও সংরক্ষণ সেলের তথ্যমতে,  ২০০৯ থেকে গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত গত ১৪ বছরে সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৩৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই সকল মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৯২ জন। বিএনপি কার্যত এখন মামলার পাহাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আন্দোলন দমানোর কৌশল হিসেবে সরকার বিএনপি নেতাদের পুরোনো মামলা নাড়াচাড়া করছেন। ওয়ান-ইলেভেনে দায়ের করা মামলায় গত ৩০ মে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের রায় বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। সেই আদেশে টুকুর বিরুদ্ধে ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। ওই রায়ের পর আত্মসমর্পণের আমান উল্লাহ আমানের ঠাঁই হয়েছে  কারাগারে। অন্যদিকে মামলার রায় ঘোষণার আগে থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে রয়েছেন টুকু। এখনও তিনি চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজন। এর আগে ভিন্ন ভিন্ন মামলায় রাজশাহী জেলা বিএনপি সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদকে তিন বছর, যুবদল নেতা ইসহাক সরকারকে ২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সুত্রমতে, রাজপথে বিএনপি নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার আগেই পুরোনো রাজনৈতিক মামলাকে সক্রিয় করে দ্রুতগতিতে নিষ্পত্তির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। অনেক মামলায় বিএনপির সিনিয়র নেতাসহ মধ্যম ও তৃণমূল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাজার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এর মধ্যে গত সপ্তাহে  ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৫ সালের একটি মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, জোট নেতা আহসান হাবিব লিঙ্কন, বিএনপির গ্রাম সরকারবিষয়ক সহসম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, সহপ্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ শামীমুর রহমান শামীমসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ৪ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।একই সপ্তাহে  মেট্রোপলিটনের আরেক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিএনপির ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের একটি মামলায় রায় ঘোষণা করেন। এতেও প্রত্যেককে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সমঝোতার কৌশল হিসেবে মামলাকে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারে আওয়ামী লীগ। এরআগে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে গোপনে দফায় দফায় বৈঠক হয় দুই দলের শীর্ষনেতাদের সাথে। সুত্রমতে, বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি ছাড়ার শর্তে বিদেশে যেতে রাজি না হবার কারণে বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, শুধু আমান ও এ্যানী নন, সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে গেছেন, বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, হবিগঞ্জের আহ্বায়ক ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জিকে গউস, সহ-ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল আলম মিলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, ঢাকা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মোসাব্বিরসহ অনেকে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, ‘ এসব মামলার উদ্দেশ্য এখন স্পষ্ট। বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে আমাদের চেয়ারপারসনকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মামলা দেয়া হচ্ছে। হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। সরকার পুরো দেশটাকে একটা কারাগারে পরিণত করেছে। ‘

অতীতে নির্বাচনের চার-পাঁচ মাস আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকত জনপদ। তবে এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় নানাভাবে গণসংযোগ চালিয়ে গেলেও, প্রধান ‘বিরোধী দল’ বিএনপি নেতাকর্মীরা আছেন অনেকটা ‘দৌড়ের’ মধ্যে।

সরকারের শেষ সময়ে এসেও দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে মফস্সলের বেশির ভাগ নেতাই এখন মামলার চক্রে। এমনও নেতা রয়েছেন যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে পাঁচশোর কাছাকাছি । কোন কোন নেতাকে সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসই কাটাতে হচ্ছে আদালতের বারান্দায়,  একটির পর একটি মামলার হাজিরা দিতে

Exit mobile version