Site icon দৈনিক এই বাংলা

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল, সংঘাতের ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক ||

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের হলেও সেই দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিলো বর্ণবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের কারণেই। দীর্ঘ ও জটিল এই বিরোধ নিরসনে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের সেই চুক্তির ফলশ্রুতিতে  তখনকার পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেলেও,  ফিলিস্তিনিরা তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে আসলে গত ত্রিশ বছর যাবত।

১৯৯৩ সালের সেই চুক্তিতে  উভয় পক্ষের মধ্যে যে বোঝাপড়া হয়েছিলো তাহলো- ফিলিস্তিনিরা স্বশাসনের আংশিক অধিকার পাবে এবং ইসরায়েল প্রথমে পশ্চিম তীরের জেরিকো এবং তারপর গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। এর পরিবর্তে, ইসরায়েলি রাষ্ট্রের বৈধতা স্বীকার করে নেবে পিএলও। ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠন করে গাজা ও পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় সীমিত স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়।

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে মিসরকে পরাজিত করার পর গাজা এবং পশ্চিম তীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ইসরায়েল। দখল করা ভূমিতে অবৈধভাবে ২১টি ইহুদি বসতি নির্মাণ করে ইসরায়েল। গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের ৫৮ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই কংক্রিট ও স্টিলের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মিসরের সঙ্গে গাজার রয়েছে  আরও ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত । ভূমধ্যসাগরের তীরে গাজার উপকূলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ইসরায়েলি নৌবাহিনী কোনো জাহাজকে এই উপকূলে আসতে দেয় না।

২০১৮ সালের ১৪ই মে,   ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীতে অর্ধ শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থাপনের নজির স্থাপনের মধ্য দিয়ে।মুলত ১৯৪৮ সালের এই দিনটিতে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের জন্য নতুন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা দেন তৎকালীন  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পরিকল্পনার  সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো– পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বসতিকে অনুমোদন দেয়া। কারণ পৃথিবীর  বেশিরভাগ দেশ মনে করে এসব বসতি অবৈধ।

ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার দিনটি ফিলিস্তিনিদের কাছে   ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়ের দিন। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি সেদিন ইসরায়েলে তাদের বাড়ী-ঘর থেকে উচ্ছেদ হয়েছিল। প্রতিবছর দিনটিকে তারা ‘নাকবা’ দিবস হিসেবেই পালন করেন। বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই দিনকেই দূতাবাস স্থাপনের জন্য বেছে নেয়।

গেল শনিবার নির্যাতিত  ফিলিস্তিনিদের আচমকা জ্বলে ওঠাকে ইসরায়েলের জন্য বিশাল সামরিক ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক বিপর্যয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অর্ধশতাব্দী আগে ১৯৭৩ সালে ‘ইয়ম কিপ্পুর’ যুদ্ধে যখন মিসর আচমকা ইসরায়েলে আক্রমণ করে, তখনো কেউ এতটা বিস্মিত হয়নি। এবারকার হামলায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হতবাক হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদের আচমকা জ্বলে উঠার বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না দখলদার বাহিনীর। সারা বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। যদিও এটি নতুন কিছু নয়। ১৮৫৪ সালে এক দল শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান উগ্রপন্থী প্রোটেস্ট্যান্ট জাফায় (বর্তমান তেল আবিবের পাশের একটি এলাকা) ‘আমেরিকান মিশন কলোনি’ গড়ে তুলেছিল। ১৮৫৮ সালে তাদের সেই অবৈধ বসতিতে আদিবাসী ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধমূলক আক্রমণ করেছিলেন।

সেই সময়ও যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএস ওয়াবাশ নামের একটি বাষ্পচালিত নৌবহর পাঠিয়েছিল। তৎকালীন অটোমান শাসকেরা যেন মার্কিন নাগরিকদের হত্যার বিচার করেন, সেই দাবিতে তারা ফিলিস্তিনের উপকূলে আমেরিকান পতাকা উড়িয়েছিল। এর দুই দশক পর ফিলিস্তিনের উপকূলে ঘাঁটি গাড়া ধর্মান্ধ জার্মান প্রোটেস্ট্যান্ট উপনিবেশবাদীদের রক্ষার দাবিতে জার্মানরাও একই কাজ করেছিলো।

কয়েক দশকের মধ্যে গেল শনিবার হামাস আকস্মিকভাবে ইসরায়েলে হামলা চালায়। দিনটি ছিল ইহুদিদের ছুটির দিন। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা রকেট হামলা চালানোর পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথ ব্যবহার করে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পড়ে।তারা কয়েক ঘণ্টা ইসরায়েলি শহর ও সেনাচৌকি অবরুদ্ধ করে রাখে। অভিযানে বেশ কিছু ইসরায়েলি নিহত হয়। কিছু ইসরায়েলি নাগরিককে জিম্মি করে গাজায়ও নিয়ে যায় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানির উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি বলেছে, “এই অভিযান… প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর স্বঃতস্ফূর্ত আন্দেলন এবং ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের পূর্ণ অধিকারের সুরক্ষাসহ ইহুদিদের যুদ্ধংদেহী ও উস্কানিমূলক নীতির বিরুদ্ধে তাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।”

Exit mobile version