Site icon দৈনিক এই বাংলা

অবিবাহিত যুবকদের জন্য ছলনাময়ী ব্যাংকারের ফাঁদ

গুলনাহার ও নাদিরা শিমু ||

নওশীন সুন্দরী, উচ্চ শিক্ষিত, ব্যাংক কর্মকর্তা। স্বামী, সন্তানও রয়েছে। কিন্তু প্রেমের জাল বিছিয়ে সুদর্শন অবিবাহিত  যুবকদের নিজের ভোগ বিলাসের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করাই যেন তার নেশা। চট্টগ্রামের একটি অনলাইন পোর্টালে ভিকটিম সেজে ব্যক্তিগত ছবি সরবরাহ করে তরুন চিকিৎসক  রাকিবুল আহসান ফয়সালকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে অনুসন্ধানে।

রাকিবুল আহসান ফয়সাল সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৮ এমবিবিএস সম্পন্ন করেন৷ ২০২১ সালের জানুয়ারীতে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় ব্যাংকার নওশিন রুমার সাথে। পরিচয়কালীন সময়ে নিজেকে অবিবাহিত হিসেবে উপস্থাপন করলেও বছর ঘুরতেই রাকিব জানতে পারেন মেয়েটি বিবাহিত, রয়েছে স্বামী ও সন্তান। 

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রামের মুরাদপুর শাখায় কর্মরত আছেন নওশীন রুমা ( ছদ্মনাম) ।  অবিবাহিত সেজেই প্রেমের ফাঁদে ফেলেন ডাক্তার রাকিবকে। রুমার ব্যক্তিগত পরিচয় পত্র, এনআইডি, পাসপোর্ট কোথাও নিজের স্বামীর কথা উল্লেখ নেই। হাতে আসা পাসপোর্ট অনুযায়ী,  রুমা জরুরি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে  উল্লেখ করেছেন আলতাফুন নাহার নামের এক মহিলার নাম। ঠিকানা উল্লেখ করা আছে হালিশহরের এসওএস চিলড্রেন ভিলেজ।

অনলাইন পোর্টালে ভিকটিম সেজে ডাঃ রাকিবের চরিত্রহনন করে নিউজ করিয়ে বিশ লক্ষ টাকা হাতানোর পরিকল্পনা ছিলো রুমার। এই কাজে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন একটি জাতীয় দৈনিকের এক শিক্ষানবিশ প্রতিবেদক এবং দুবাই প্রবাসী এক রাজনীতিবিদ।

অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে প্রতিবেদকের। প্রায় দেড় বছর আগে  ইসলামি ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখায় এক কোটি  বিশ লাখ টাকার দুটি  এফডিআর করেছিলেন ডা. রাকিবের মা হাসিনা আক্তার । ইস্টার্ন ব্যাংকে চাকুরি করার সুবাদে অসাধু উপায়ে সেই এফডিআরের তথ্য জেনে নেন ব্যাংক কর্মকর্তা নওশীন। নওশীন এরআগেই হস্তহত করেছিলেন রাকিবের বাবা – মা’র ন্যাশনাল আইডি কার্ড। বিনা অনুমতিতে কোন গ্রাহকের ব্যাংকিং তথ্য জানার চেষ্টা করা আইনী অপরাধ হলেও ইস্টার্ন ব্যাংক সেই নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করে নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাকিরের সাথে সম্পর্কের বয়স সাড়ে তিন বছর হলেও রুমা বিয়ে করেছেন পাঁচ বছর আগে। শুরুতে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিলেও শেষ পর্যন্ত রাকিব জেনে যান তিনি বিবাহিত, এক সন্তানের জননী। গেল সাড়ে তিনবছর থেকে রাকিবের পরিবার থেকে কোন বিয়ের সম্মন্ধ এলে নওশীন রুমা তাকে নিজের স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফোন করতেন। ভাঙতেন পারিবারিকভাবে তৈরি হতে যাওয়া  সম্পর্ক। 

বিষয়টিকে নিজের স্বামী ও সন্তানের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। কেউ কেউ আবার তাকে বিকৃত যৌনচারিতায় আসক্ত নারী হিসেবেই তার আচরন বিশ্লেষণ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও ইন্টার্ন শেষ করার পর চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হসপিটালে চাকরিতে যোগ দেন। সেখানেই আরেক অবিবাহিত চিকিৎসকের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হয় ডাঃ রাকিবের। সে বন্ধুত্ব পারিবারিকভাবে বিয়ের কথাবার্তা পর্যন্ত এগুলেও রুমা প্রতারণার শিকার হয়ে সেই চিকিৎসককে বিয়ে করতে পারে নি রাকিব। করোনাকালীন সময়ে লিমিটেড ব্যাংকিং কার্যক্রমের সুযোগে ডাঃ রাকিবের সাথে  প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি করেন চতুর বিবাহিত রমনী নওশীন রুমা ( ছদ্মনাম) । 

জানা যায়, পরিচয় ও সম্পর্কে জড়ানোর  এক বছরের মাথায় রাকিবের মোবাইল ফোনের মেমোরি কার্ড চুরি করে নেন সুচতুর রুমা। সেই মেমোরী কার্ডে থাকা বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে অন্য মেয়ের সাথে   পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিবাহের প্রস্তাবে বিঘ্ন ঘটান রুমা। উদ্দেশ্য একটাই, রাকিবের মায়ের জমানো টাকা। 

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুনরায় রাকিবের মোবাইল ফোন থেকে মেমোরি কার্ড চুরি করে নেয় রুমা। এভাবে গেলো মাসে ( সেপ্টেম্বর)  ডাঃ রাকিবের কাছ থেকে সেসব ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে টাকা আদায় করার ফাঁদ পাতেন। সেই কাজে সম্পৃক্ত করেছেন রাকিবের বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো পুরোনো সেই নারী চিকিৎসককে ( ন্যাশনাল হসপিটালের সহকর্মী) । অনলাইনে ছবি ও কথোপকথন ছড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনায় জড়ানো হয়েছে ঢাকার আরেক নারীকে, যার সাথে ডাঃ রাকিবের সাথে  সরাসরি কোনদিন দেখাই হয় নি।

জানতে চাইলে ডাঃ রাকিব জানান, ‘ মোবাইল ও ওয়ার্ডসআপে কথা বলা ছাড়া ঢাকার মেয়েটির সাথে কোনদিন দেখাই হয় নি। তবে বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়েছিলো রুমা। ওই মেয়ের সাথে নিজ থেকেই যোগাযোগ রেখেছেন রুমা। 

এক বছর আগে রাকিবের সাথে পরিচয় হওয়া আরেক জন মেয়ের সাথেও সখ্যতা গড়ে তুলেন রুমা।

সেই ভুক্তভোগী নারীর চ্যাট হিস্ট্রি অনুযায়ী অনলাইন পোর্টালের এক প্রতিবদককে দিয়ে বলানো হয়েছে ডাঃ রাকিব এক হিন্দুবোনের ( প্রতিবেদকের বোন)  সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছেন। উত্তর না পেয়ে মেয়েটিকে বলা হয়, ‘ রাকিবের কারণে প্রতিবেদকের হিন্দুবোনের ডিভোর্স হতে যাচ্ছে। ‘প্রতিবেদক একপর্যায়ে  মাঝরাতে ( রাত দুইটা) সেই মেয়ের মাকেও বিরক্ত করতে থাকে। রুমার পরিকল্পনা অনুযায়ী  প্রতিবেদক তার সনাতন ধর্মকে ঢাল বানিয়ে হেনস্তা করতে থাকে এশিয়ান ইউমেন ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্রী ( সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুযায়ী নাম গোপন রাখা হয়েছে)  ও তার মাকে।

জানতে চাইলে রাকিব জানান , যেহেতু রুমার সাথে অসম সম্পর্ক থেকে বের হতে হাঁসফাঁস করছিলেন,   গত বছরের শেষ দিকে  রাকিব  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে আসছিলেন। এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির সেই ছাত্রীর ( অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী) সাথে। সেই পরিচয়ও মেনে নিতে পারে নি রুমা। রাকিবের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে  নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে সেই মেয়েকেও।

নারীদের প্রায়শই ছলনাময়ী বলেন থাকেন পুরুষরা। যদিও এই বিশেষণ নিয়ে নারীদেরও আপত্তির শেষ নেই। নারীরা নাকি ৬৪টি ছলাকলার অধিকারিনী। প্রায়ই বির্তকের জন্ম দেয় এই প্রবাদটি। রুমার ক্ষেত্রে সেই প্রবাদের নিরেট সত্যতা সামনে এসেছে। জানা,  গেছে রুমার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী সদর হলেও বড় হয়েছেন চট্টগ্রামের একটি শিশু পল্লীতে।

একটি অনুলাইনে ডা: রাকিবের চুরি হওয়া ছবিসহ সংবাদ ( রুমার দেয়া ছবি নিয়ে  ভিডিও কনটেন্ট)  প্রকাশের পর থেকে একটি চক্র রাকিবকে চাকরিচ্যুত করার জন্য ডেলটা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর সামসুল ইসলামকে চাপ প্রয়োগ করেন। ওউ প্রতিষ্ঠানের দাবি,  সুনাম বাঁচাতে ডেলটা হাসপাতাল থেকে রাকিবকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রুমার দেয়া ছবি আর ভিডিও, পূর্বপরিচিত মেয়েদের সাথে কথোপকথন রেকর্ড করে বানানো হয় রগরগে ভিডিও কনটেন্ট। সেই ভিডিও কনটেন্ট ফেসবুকে আপলোড দেয়া হয়েছে ২২ শে সেপ্টেম্বর। সাংবাদিকতার নিয়ম রীতি অনুযায়ী অভিযুক্তের বক্তব্য যুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সরকার অনুমোদিত এই অনলাইন পোর্টালে  রগরগে ভিডিও কনটেন্ট বানানোর সময় মানা হয় নি সেই রীতি। কর্মক্ষেত্রের ভিডিও দিয়ে সেরে নেয়া হয়েছে অভিযুক্তকে  আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবার দায়িত্ব।

ডেলটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্দিষ্ট দুটি গণমাধ্যমের ( একটি অনলাইন, একটি বেসরকারি টেলিভিশন)  উপর্যুপরি ফোনের কারণে  ২৪ শে সেপ্টেম্বর ডাঃ রাকিবকে ডেলটা হাসপাতাল থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষকর্তারা বলছেন, সুনামহানি থেকে বাঁচতে তদন্ত কমিটি গঠন করা ছাড়াই তার চাকরিচ্যুতি ঘটানো হয়েছে।

১লা অক্টোবর  চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায়  তিনজনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন ডাঃ রাকিব আহসান ফয়সাল। জিডি করার খবর পেয়ে উল্টো রাকিবকে জোর করে বিয়ে করার হুমকি দিয়েছেন মুঠোফোনে। মুঠোফোনের কথোপকথন অনুযায়ী রুমা কর্মস্থল ইস্টার্ন ব্যাংক ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা দায়ের করবে।

জানা যায়,  সর্বশেষ ৯ ই অক্টোবর ব্যক্তিগত ব্যাংকিং তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ করে ব্যাংকটির জোনাল হেড মেজবা উদ্দিন আহমেদের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন রাকিব। কিন্তু সেই কর্মকর্তা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় তিন ঘন্টা বসিয়ে রেখে খবর দেন নওশীনকে। রবিবার ( ৯ ই অক্টোবর)  বেলা পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত রাকিবকে ধরার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়  ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে।  ইবিএল’ কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষারত  নওশীন রুমার ( ছদ্মনাম) ভিডিও চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বার বার মুঠোফোনে কারো সাথে কথা বলছেন ওই নারী ব্যাংক কর্মকর্তা।  এক পর্যায়ে রাকিবের লিখিত  অভিযোগ পত্র ঝুলিয়ে রেখেই ব্যাংক ত্যাগ করতে দেখা যায় জোনাল হেড মেজবাকে।

পরিকল্পিতভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে তরুন চিকিৎসকের  চরিত্রহনন ও চাকরিচ্যুত করা,  ব্যক্তিগত ব্যাংকিং তথ্য জেনে অর্থ হাতানোর বিষয়টিকে মানবাধিকারের চুড়ান্ত  লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন ( আইএইচআরসি) বাংলাদেশ চাপ্টারের প্রেসিডেন্ট এমএ হাসেম রাজু।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার পাবার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে। অভিযুক্ত প্রমাণিত হবার পর যেমন কোন চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করা অপরাধ, তেমনিভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের উর্ধতন ব্যাংক কর্মকর্তা ওই নারীর ( তাদের কর্মকর্তা)  বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহন না করে অপরাধ করেছেন। ‘

জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা আ.লীগ নেতা ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান বলেন,  ওই নারী ব্যাংক কর্মকর্তা বিবাহিত, বাচ্চা আছে – তিনি নিজেই অবিবাহিত এক চিকিৎসকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে স্বামী – সন্তানের সাথে  বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ, ডিসিপ্লিনারী ছাড়া কাউকে চাকরিচ্যুত করা মানে অভিযোগ সামাজিকভাবে প্রমাণ করে দেয়া।

সোহরাওয়ার্দী হসপিটালের সাবেক পরিচালক ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহবায়ক  অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া মনে করেন, ওই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে চরিত্রহনন এবং পরিকল্পিতভাবে ব্ল্যাকমেইল করার বিষয়টি স্পষ্ট। অবিবাহিত একটি ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক  কোন মেয়ের সাথে সম্মতিক্রমে  সামাজিক সম্পর্কে জড়াতে পারবেন না-  এমন কোন আইন আছে? ‘

এদিকে,  রাকিবের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে মিথ্যা তথ্য দেবার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন। অনুসন্ধানে পাওয়া রাকিব ও রুমার  কথোপকথনের রেকর্ড অনুযায়ী সংবাদ চাপা দিতে মেয়েটি রাকিবের কাছে বিশ লাখ টাকা দাবি করেছেন। পরে দুটি  গণমাধ্যমের নাম উচ্চারণ করে রাকিবের কাছ থেকে  পাঁচ লাখ টাকা দেবার দাবি করেন রুমা। দেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যমের হেডলাইন ( কথোপকথন অনুযায়ী প্রতিবেদন রেডি)  সরাতে বিকাশে কিছু টাকা দেবার কথা বলতে শোনা যায় ওই ব্যাংকারের কল রেকর্ডে। 

 

Exit mobile version