Site icon দৈনিক এই বাংলা

বাংলাদেশে নির্বাচনের আগেই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির শঙ্কা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

::: কূটনীতিক প্রতিবেদক :::

রাজনৈতিক সমঝোতা না হবার কারনে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে   যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে । বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে মধ্যপন্থি, ধর্মনিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র। ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।’

২০১৮ সালের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, সহিংসতা ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এমন আইন ও নীতিমালা গ্রহণ করেছে, যেখানে বিরোধী দলগুলোর রাজনীতি করার জায়গা নেই। এ ছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ১৬০টিরও বেশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ মূল্যায়ন করে ২০২৩ সালের এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশের ঋণ নেওয়া, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গ প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগের কারণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের মধ্যে কৌশলগত অবস্থান এবং বড় শ্রমশক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়নের উপকরণ, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব, শ্রম আইনের শিথিল প্রয়োগ এবং দুর্নীতি বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। এই সীমাবদ্ধতা কমাতে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে উন্নতি করছে।

তবে বাংলাদেশ এখনো তার বিদেশি বিনিয়োগ নীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, শ্রম, মেধা সম্পত্তির অধিকার (আইপিআর) এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু সেগুলো কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। গত এক দশকে অগ্নিনির্বাপণ ও নিরাপত্তার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে শ্রমিকদের স্বাধীনতা ও দর-কষাকষির অধিকার সীমিত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশগত অনেক সম্মেলনে বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে। কিন্তু এর পরও ঢাকা বায়ুদূষণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ শহরগুলোর একটি।

এরআগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেবে না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিপক্ষে যারাই কাজ করবেন, তাদের ওপরই ঘোষিত ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে দেশটি।

বিএনপির অবস্থান নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘কেবল বাংলাদেশেরই নয়, ওয়াশিংটন কোনো দেশেরই কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নেবে না। যুক্তরাষ্ট্র বৈধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দেয়।’

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা মানবাধিকারের ওপর যে কোনো বিধিনিষেধের বিরোধিতা করি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করে এমন যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।’

‘গত ২৪ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ভিসা নীতি জারি করার সময় স্পষ্ট করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে এই ভিসা বিধিনিষেধগুলো প্রযোজ্য হবে।’

গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র। বলেন, ‘এর মধ্যে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার ব্যবহার করে জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার থেকে বিরত রাখার মতো কাজ রয়েছে।’

Exit mobile version