বিশেষ প্রতিনিধি :::
একদিকে সরকার বিরোধী ৩৮ টি দলের মহা সমাবেশ, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশ -এই দুইয়ে রাজধানী ঢাকার মানুষের মাঝে সৃস্টি হয়েছে আতন্ক। বিএনপির সমাবেশের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিনটি সহযোগী সংগঠনও একইদিন একত্রে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সমাবেশের সময় যাতে কোন ধরণের ‘সংঘাত বা সহিংসতা’ না হয়, সেজন্য উভয় দল পরষ্পরকে সতর্ক করে নানা বক্তব্য ও বিবৃতি দিচ্ছে।
সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের ১ দফা দাবিতে আগামীকাল রাজধানীতে বিএনপি আয়োজিত মহাসমাবেশ দলটির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হবে বলে জানা গেছে দলীয় সূত্রে।সমাবেশে ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে দলটি।
এরইমাঝে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে আজ রাত থেকেই কার্যত অচল হতে যাচ্ছে দেশের সড়ক ও নৌ যোগাযোগ।যদিও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ঢাকামুখী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের স্রোত ঠেকাতে অঘোষিতভাবেই এই নির্দেশনা পালন করা হবে। এতে জনদুর্ভোগ বাড়বে বলে মনে করেন যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। গত বছর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করেছে বিএনপি। প্রতিটি সমাবেশের আগে অঞ্চলভিত্তিক পরিবহন ধর্মঘট দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের আগেও একই চিত্র দেখা যায়। প্রাসঙ্গিক কারণে এবারও বিএনপির কর্মসূচিতে জনসমাগম ঠেকানোর চেষ্টা অমূলক কিছু নয়।
শ্রম আইন কিংবা সড়ক পরিবহন আইনে পরিবহন মালিকদের ধর্মঘট ডাকার কোনো বিধান নেই। পরিবহন মালিক চাইলে তার ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের যথাযথ পাওনা পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে।
অন্যদিকে শ্রম আইনে দাবি-দাওয়া আদায়ে শ্রমিকদের ধর্মঘট ডাকার সুযোগ আছে। তবে দাবিগুলো অন্তত ১৫ দিন আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার বিধান রয়েছে। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে যেসব ধর্মঘট সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিকভাবে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
জনভোগান্তি প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কারণে যানবাহন বন্ধ হয়ে গেছে, জনভোগান্তি তৈরি হবে; এটাই স্বাভাবিক। এ কাজটি করা কোনোভাবেই ঠিক নয়। অতীতে দেখেছি—এসব কর্মসূচির কারণে জরুরি রোগী পরিবহনও সম্ভব হয়নি। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশের দিন ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৩টি সহযোগী সংগঠনও। একইদিনে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থাকায় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগের এক সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে লক্ষ্য করে সীমান্ত দিয়ে ‘অস্ত্র কেনা ও মজুতের’ অভিযোগ তোলেন।এই বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, রাজপথে একটা সশস্ত্র সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি করা হতে পারে। এর অংশ হিসেবেই ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা এমন কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তাঁর (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে তাঁরা নতুন চক্রান্ত শুরু করেছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। অথচ অস্ত্র নিয়ে যা কিছু হচ্ছে, তার সবই সরকার ও সরকারি দল করছে।’
আগামীকাল ঢাকায় কী হবে- এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পরিকল্পনা সাজিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। বিশেষ করে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকা দলগুলোর কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে তারা।
এইবাংলা /হিমেল