::: তানভীর আহমেদ :::
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে সারাদেশে তারুণ্যের সমাবেশের পর এবার বিএনপির অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক দলের সমাবেশে পুনরাবৃত্তি হলো এক দফার ঘোষণা। চট্টগ্রামে শ্রমিক দলের বিভাগীয় সমাবেশের স্থান নিয়ে জটিলতায় পড়ে বিএনপি। বিএনপির ‘তারুন্যের সমাবেশ’ কাজির দেউড়ীতে করার অনুমতি দিলেও এবার পুলিশের আপত্তিতে নুর মোহাম্মদ সড়কে সরে যেতে হয়েছে তাদের।
রবিবার সমাবেশের জন্য আগের মতোই দুটি লরি এনে লরিতে সমাবেশের মঞ্চ বানানো হয় বেলা এগারোটায়। মঞ্চের চারিদিকে টানানো হয়েছে বড় বড় ব্যানার।
দুপুর ২টার দিকে নগরের কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনের সামনে শুরু হওয়া শ্রমিক জনতার সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিক দলের নেতা কর্মী সমর্থকরা। চট্টগ্রাম মহানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছেন সমাবেশে।
শ্রমিক জনতার এই সমাবেশকে ঘিরে নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা।তারা বলছেন, সরকার পতনের এক দফা দাবির মধ্যদিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণের পথ সুগম হয়েছে। চলমান আন্দোলনের বাঁক ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো একটি জনসমাগম শ্রমিক জনতার এই সমাবেশ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে চলা সমাবেশে ‘ মির্জা ফখরুল’ মঞ্চে আসেন বিকেল তিনটায়। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন অরণ্যেরোধন।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন মানে মানে সরে যান, এখনো সময় আছে। তা না হলে জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সরিয়ে দিতে বাধ্য হবে।
তিনি বলেন, বন্দুক দিয়ে, হুমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে আর কাজ হবে না। অনেক অপরাধ করেছেন, জুডেশিয়াল কিলিং করেছেন, ১ লাখ ২৪ হাজার মামলা দিয়ে ৪০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামী করেছেন। কেউ ক্ষমতায় চীরস্থায়ী থাকতে পারে নি। নমরুদ, ফেরাউন এমনকি এরশাদ স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় আকঁড়ে থাকতে ব্যর্থ হয়েছেন। আপনিও (শেখ হাসিনা) পারবেন না। ক্ষমতার এ মসনদ কারো জন্য পার্মান্টেট নয় মানে মানে সরে পড়েন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম একটি ঐতিহাসিক স্থান এখান থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এইখানে তিনি জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করেছেন, প্রীতিলতার এই চট্টগ্রামের মানুষ অবৈধ লুটেরা সরকারকে কি বার্তা দিতে চায় তা সারা বিশ্বে পৌছে দিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ আমাদের মতো করে সবাইকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে।” এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনও বলে তারা ভোট কাকে দেবে। “যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে।” ভোট কেন্দ্রে যেতেই দেয় না।’
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলে তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০২১ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে, আমি কোনও বাধা দেবো না। আমরা ভাবলাম, বোধ হয় শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। আগের রাতে ভোট হয়ে গেলো। এখন আবার বলছে আমরা সুন্দর ভোট করবো। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে। তাদের কী আবদার!
মির্জা ফখরুল বলেন, আগের বার তারা ইলেকশনের আগে জনগণকে বলেছিল নির্বচিত হলে ঘরে ঘরে চাকুরি দেবে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে চাকুরিতো কেউ পায়নি বরং ঘরে ঘরে বেকার বেড়েছে, চাউলের কেজি ৯০ টাকা হয়েছে। এ সরকার যতদিন থাকবে মানুষের দুর্ভোগ তত বাড়বে। তাই ভালো ভালোই পদত্যাগ করে মানুষকে মুক্তি দিন, না হয় জনগণ তাদের হারানো ভোটাধিকার আদায় করে নিতে বাধ্য হবে।
আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আর কোনও সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি। আবারও বলছি, ভালো ভালোয় পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন। ‘
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আট বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। রাষ্ট্র মেরামতের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ৩১ দফা দিয়ে আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।’
তিল ধারনের জায়গা না থাকা শ্রমিক জনতার সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও।
নির্বাহী কমিটি সদস্য, বিএনপি তরুন নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরী বললেন ‘ উই উইল টেক ব্যাক বাংলাদেশ ‘
এদিকে, সমাবেশকে ঘিরে পুরো শহরে সতর্ক অবস্থানে ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নেন দলের কার্যালয়ের আশপাশে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মীর নাসির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, বান্দরবান বিএনপির নেতা ম্যামাচিং।
এইবাংলা /শিমু