Site icon দৈনিক এই বাংলা

” হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির ব্যবহার”

আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :-

নাটোরসহ উত্তরাঞ্চলে এক সময় গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ঢেঁকি ছিল। কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এক সময় ঢেঁকিতে ধান ভানার মনোরম দৃশ্য চোখে পড়তো। এখন আর গ্রাম বাংলায় ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখে পড়ে না। গ্রামীণ এই ঐতিহ্যটি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে জানালেন স্থানীয়রা।

নাটোরের শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সুবিধ মৈত্র অলোক বলেন, এক সময় এ অঞ্চলের সব স্থানেই ঢেঁকি দিয়ে ধান ভানার কাজ হতো। গ্রামীণ জনপদে ধান ভানা ও চালের গুঁড়া বা আটা তৈরির কাজ হতো এই মাধ্যমে। চলনবিল অধ্যুষিত এই কৃষি জনপদে অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ঘরে আসতো নতুন ধান। তখন শুরু হতো নতুন চাল ও চালের গুঁড়া তৈরির কাজ। সেই চালের গুঁড়া থেকে পিঠা-পুলি, ফিরনি-পায়েস তৈরি করা হতো। চালের রুটি-মাংসের ঝোল এই সময়টাতে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করত। আর এসবের আয়োজনর অন্যতম উপাদান ছিল এই ঢেঁকি।

নাটোরের নাট্যজন অ্যাডভোকেট সুখময় রায় বিপলু বলেন,- ‘পারিবারিক- সামাজিক বিভিন্ন উৎসব তথা নববর্ষ, নবান্ন, বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে ধান ভেনে আটা তৈরি করা হতো। ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দে মুখরিত ছিল বাংলার জনপদ। কিন্তু এখন ঢেঁকির সেই শব্দ শোনা যায় না।

শহরে তো বটেই, আজকাল অনেক গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও ঢেঁকি শব্দটি শুনেছে, কিন্তু ঢেঁকি দেখেনি। একটা সময় কানে ঢেঁকির শব্দ না থাকলে মনে হতো না এটা সমৃদ্ধ জনপদ। কাক ডাকা ভোরে ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে ঘুম ভাঙত বাড়ির মানুষের। আজ সেই ছন্দময় জীবন নেই গ্রামের। হাজার বছরের ঐতিহ্য ছিল ঢেঁকি।

গ্রামাঞ্চলে প্রায় বাড়িতেই একটি করে ঢেঁকিঘর ছিল। গৃহস্থ বাড়ির নারীরা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তখন কদরও ছিল এর। গরিব নারীরা ঢেঁকিতে শ্রম দিয়ে আয়-রোজগারের পথ বেছে নিতেন। ঢেঁকিতে কাজ করাই ছিল দরিদ্র নারীদের আয়ের প্রধান উৎস। ধানকলের ব্যাপকতায় এই ঢেঁকি বিলুপ্ত হওয়ায় পথে। গ্রামের বাড়িগুলোতে এখন ঢেঁকি কালেভদ্রে চোখে পড়ে।’

সমাজসেবী ও সংগঠক রফিকুল ইসলাম নান্টু জানালেন, আধুনিক সভ্যতার অগ্রযাত্রায় নানামুখী আবিষ্কারের ফলে পুরাতন অনেক কিছুই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তার মধ্যে ঢেঁকি অন্যতম। আগে প্রায় সবার বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। সেই ঢেঁকিছাঁটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ এখন আর নেই। আধুনিক যুগে সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎচালিত মেশিন। আর ভবিষ্যতে প্রাচীন এই যন্ত্রগুলোর দেখা মিলবে কেবল জাদুঘরে।

তিনি প্রশাসনসহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, নানামুখী ঐতিহ্য সংরক্ষণের ইতিহাস হিসেবে প্রাচীন এই গ্রামীণ কুটির শিল্পের অনুষঙ্গ ঢেঁকি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হোক।

এইবাংলা/প্রিন্স/সিপি

Exit mobile version