Site icon দৈনিক এই বাংলা

রাজনীতিতে বিদেশি চাপ,মাঠ দখলে রাখতে চায় আ.লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি :::

দেশের রাজনীতিতে বিদেশি কুটনৈতিকদের চাপ বেড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক নির্ভরশীলতার কারণে এমনটি ঘটেছে বলে মতামত  বিশ্লেষকদের। চলতি সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদল সফর করবে দেশে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন।

সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে ‘বিদেশি চাপকেই’ এই মুহূর্তে ভরসা মনে করছে বিএনপি। তবে চাপ কাটিয়ে ভোটের মাঠ দখলে রাখতে এবং রাজনৈতিক সমঅধিকারের প্রশ্নে নির্বাচনপূর্ব এই সময়ে বিএনপির কর্মসূচির বিষয়ে সরকার আগের চেয়ে ‘নমনীয়’ নীতিতে হাঁটছে। যদিও ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করলে কড়া হুঁশিয়ারি রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের।

সরকার পতন আন্দোলনের চেয়ে কূটনৈতিক তৎপরতায় গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ছয়মাসেরও কম সময় বাকি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে অনড়। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে অনিশ্চয়তা ততই বাড়ছে।

তবে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ মিত্র দেশগুলোকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপর চাপ তৈরি করতে চায়। ইতিমধ্যে রাশিয়া তাদের মনোভাব প্রকাশ করেছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের উপর বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে।

বারবার ঘোষণা দিয়ে সরকার হঠানোর ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলন নিয়ে এখনো কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। ফলে এই নিয়ে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ধোঁয়াশা। তবে এই মুহূর্তে সরকার পতন আন্দোলনের চেয়েও সরকারের ওপর বিদেশি চাপ বাড়াতে চায় বিএনপি।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার চেষ্টায় রয়েছে দলটি। গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি প্রকাশ করে সতর্কবার্তা দেন- ভোটে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।

অন্যদিকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে আন্তজার্তিক মহলের তৎপরতা এবং সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগে অনেকটাই বেকায়দায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে দাবি আদায়ে সরকারের ওপর আরও চাপ তৈরি করতে কূটনৈতিক তৎপরতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। আন্দোলনের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছে দলটি।

ইতোমধ্যেই ঢাকা সফরে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র (পূর্ব) সচিব সৌরভ কুমার। তার এ সফর নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জিয়া এবং দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের এ দুজন কর্মকর্তার ঢাকা সফরের মূল কারণ আসন্ন নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা।

নিয়মিতভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো বিএনপি এখন তাদের এই কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে। বিএনপির প্রতিনিধি দল প্রতিদিন কোনো না কোনো দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিশেষ করে মার্কিনসহ পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক এখন বিএনপির যেন রুটিন ওয়ার্ক। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে সামনে রেখে দলটির এই তৎপরতা। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় দেশে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ পক্ষকালব্যাপী অবস্থান করছেন আমেরিকায়। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি।

নেতারা মনে করছেন, সরকার বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে চায়। আমরা যদি চূড়ান্ত আন্দোলনের নামে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিই সেক্ষেত্রে সরকারই গাড়ি পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে বিএনপির ওপর দায় চাপাবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য  বলেন, ‘এদেশের গণতন্ত্র যে আজ বন্দি তা সারাবিশ্ব অবগত। আজকে বিশ্ব বিবেক একজোট হয়েছে দেশের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এখন যদি আমরা সরকার পতন আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দিই, সরকার সুযোগ নেবে। নিজেরা আগুন সন্ত্রাস করে আমাদের ওপর দায় চাপাবে। নিজেদের অপকর্ম আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করবে, সে সুযোগ আমরা দেব না।’

বিএনপির একটি সূত্র মতে , নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথে চিঠি দেবে বিএনপি। সূত্র জানান, চিঠিতে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হবে। এ ছাড়া বিরোধী দলের ওপর সরকারের দমনপীড়ন, সভা-সমাবেশে বাধা, গ্রেপ্তার, হামলা-মামলার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে চিঠিতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার যৌক্তিকতা তুলে ধরবে। চিঠিতে স্বাক্ষর থাকবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

বিএনপি নেতাদের মতে, ২০১৪ এবং ১৮ সালে সরকার একতরফা নির্বাচন করলেও তখনকার প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট এক নয়। তখন বাংলাদেশ প্রশ্নে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহল অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তেমন নাক গলায়নি।

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল  বলেন, ‘আমরা আন্দোলনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। রাজপথে তৎপরতা না থাকলে বা নিজস্ব শক্তি এবং মনোবল না থাকলে কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায় না। ১৯৭১ সালেও আমরা যখন অস্ত্র হাতে দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেমেছি, তারপরই আন্তর্জাতিক মহল আমাদের সমর্থন দেওয়া শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ভাষার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৯০-এর আন্দোলন সবই রাজপথে সমাধান হয়েছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী  বলেন, ‘রাজপথের চেয়ে কূটনৈতিক তৎপরতাকে বেশি জোর দিচ্ছি, কথাটি সত্য নয়। তবে, গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতেই পারে। আজকে রাষ্ট্রে যেভাবে গুম-খুন এবং লুটপাট চলছে, গণতন্ত্রকে যেভাবে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে তাতে বিশ্ববিবেক তো চুপ থাকতে পারে না। বর্তমান সরকার যাতে আবারও জনগণের ভোট ডাকাতি করতে না পারে সে বিষয়ে বিএনপি সজাগ রয়েছে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এ বিষয়ে  বলেন, ‘আমরাতো রাজপথে আছি। আন্দোলনের মাধ্যমেও আমরা মোকাবিলা করে এ সরকারের পতন ঘটাব। এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটি সবার কাছে পরিস্কার।’

কূটনৈতিক তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে আলোচনা আন্দোলনকে পরিপূরক করার জন্য।’

এইবাংলা.ডেস্ক

Exit mobile version