::: ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক :::
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় উত্তাল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি। সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সরোয়ার আলমগীরের মোটর শোভাযাত্রায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ -যুবলীগের উশৃংখল নেতাকর্মীরা। ‘ঈদ পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাবার সময় অতর্কিত হামলায় ছাত্রদল -যুবদলের বেশ কিছু কর্মী আহত হন।
এসময় শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেয়া জেলা বিএনপি নেতা সরোয়ার আলমগীরসহ অন্যান্য নেতারা রাবার বাগান এলাকায় জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করতে থাকে।তখন দুই পক্ষের উশৃঙ্খল কর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠি সোঠা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে।
পরে পুলিশ এসে দুই পক্ষের কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে লাঠি চার্জ করলে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, এই ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন । সোমবার (৩ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের হেয়াকোঁ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। গাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে সরওয়ার আলমগীরের অনুসারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সংঘর্ষ নতুন রুপ নেয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পরস্পরকে দায়ী করলেও স্থানীয়রা বলছেন দুই দলের আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতা সরোয়ার আলমগীর দুই শতাধিক মোটরসাইকেল বহর নিয়ে দাঁতমারা হেয়াকোঁ চৌধুরীপাড়ায় বিএনপি নেতা কামাল চৌধুরীর বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। তাদের গাড়িবহর হেয়াকোঁ বাজারে পৌঁছলে সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা পিছু হটে নারায়ণহাট এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন। সংঘর্ষের সময় ফটিকছড়ি-চট্টগ্রাম সড়ক ও ফেনী-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত যাত্রী ও সাধারণ মানুষ এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন।
বিএনপির কর্মসুচীতে অংশ নেয়া একজন ঘটনার ভিডিও চিত্র নিজের মোবাইলে ধারন করতে চাইলে মোবাইলটি ভাংচুর করে কেড়ে নিতে দেখা যায় কয়েকজনকে।অন্যদিকে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হানিফ সরকার দা ছুরি নিয়ে সামনের দিকে এগুতে চাইলে বিএনপির কর্মীদের পিঠুনির শিকার হন।
সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ভুজপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হক বলেন, হেয়াকোঁতে কামাল চৌধুরীর বাড়িতে দাওয়াতে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে দাঁতমারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম সরকার বলেন, ‘বিয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় হেয়াকোঁ বাজারের মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আপত্তিকর স্লোগান দিতে থাকে। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’ সংঘর্ষে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হানিফ সরকার ও বনানী কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর গুরুতর আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
ভুজপুর থানার ওসি হেলাল উদ্দিন ফারুকী বলেন, ’বিএনপি নেতা সরোয়ার আলমগীর কয়েকশ মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে হেয়াকোঁতে একটি দাওয়াতে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা সরোয়ার আলমগীর এতগুলো গাড়ি নিয়ে আসার বিষয়টি পুলিশকে আগে থেকে অবহিত করেননি।’
তবে সরওয়ার আলমগীর দাবি করেছেন ঈদ পরবর্তী অনুষ্ঠানে আমাদের শান্তিপূর্ণ যাত্রাপথে দলের নেতাকর্মীদের উপর নগ্ন হামলা চালানো হয়েছে। বেশ কিছু মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন দলের বেশ কিছু নেতাকর্মী। আমাকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পিত হামলা এটি। দলের নেতাকর্মীরা ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে বলেই হতাহতের ঘটনা কম ঘটেছে।
‘প্রসঙ্গত, দশ বছর আগে (২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভুজপুর থানা এলাকায় আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মিছিলে তাণ্ডব চালায় জামায়াত শিবিরের লোকজন। এসময় তাদের হামলায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী নিহত হয়। আহত হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। সেদিন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসেরসহ অসংখ্য গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তারা। ‘ভুজপুর ট্র্যাজেডি’ হিসেবে এ ঘটনা সবার কাছে পরিচিত এরপর থেকে জামাত শিবির এলাকা ছাড়া। এরই মধ্যে উত্তর ফটিকছড়িতে বিএনপি শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান পুনরুদ্ধার করেছে। হঠাৎ করে বিএনপি নেতা কর্মীদের বিশাল মোটর শোভাযাত্রা দেখে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হকচকিয়ে যায়। ফটিকছড়ি সংসদীয় আসন থেকে গত জাতীয় নির্বাচনে মেজর (অব) বাহার বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেন। সামনের জাতীয় নির্বাচনে উত্তর জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক সরওয়ার আলমগীরকে সামনে রেখে নির্বাচনের বৈতরণি পাড়ি দিতে চায় বিএনপি। সোমবারের সংঘর্ষ ও বিরাট মোটর শোভাযাত্রা উত্তর ফটিকছড়িতে সরওয়ার আলমগীরের শো ডাউন হিসেবে বিবেচনা করছেন স্থানীয়রা।
এইবাংলা/ তুহিন