Site icon দৈনিক এই বাংলা

চামড়ার দাম মেলেনি, ডাস্টবিনে কোরবানির চামড়া

তানভীর আহমেদ, চট্টগ্রাম :::

চট্টগ্রামে চামড়া দাম ছিল কোরবানিদাতাদের অপ্রত্যাশিত দামের অনেক কম। এই কারণে গাউসিয়া কমিটি, বিভিন্ন মাদ্রাসায় চামড়া দিয়ে দেন অধিকাংশ কোরবানিদাতা। মাদ্রাসা থেকে সংগ্রহ করতে না গেলে চামড়ার স্থান হয়েছিল ডাস্টবিনে। ঈদের বিকেলে কাতালগন্জ এলাকায় ডাস্টবিনে বেশ কিছু চামড়া দেখা গেছে।

যদিও সরকারের তরফ থেকে চামড়ার দাম নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছিলো৷ চট্টগ্রামে সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পুরন হয় নি। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও কাঁচা চামড়ার আড়তদারেরা বলেছেন, এবার কোরবানির পরিমাণ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হয়েছে।

এ বছর রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা হিসেবে। ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের কাছ থেকে এ দামেই চামড়া সংগ্রহ করবেন।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট এক কোটি ৪১ হাজার ৮১২ টি গবাদি পশু কোরবানি হয়েছে। এবার সারাদেশে কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩ টি। গত বছর ঈদুল আজহায় সারাদেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি গবাদি পশু কোরবানি হয়।

তবে,  চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদের প্রথম দিন লক্ষাধিক পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার-ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন,  কোরবানির ঈদের প্রথম দিন থেকে আমরা এখন পর্যন্ত ১ লাখ মতো পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।

‘শনিবার বা রবিবারের মধ্যে ৪ লাখের বেশি চামড়া পাব বলে আশা করছি। কারণ উপজেলাগুলো থেকে চামড়া এখনও শহরে ঢোকেনি। এবার চামড়া নিয়ে আমরা আশাবাদী। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকায় চামড়াগুলো কেনা হয়েছে। পশুর আকারভেদে দামের এই ভিন্নতা।’

চকবাজার, কাতালগন্জ এলাকার অধিকাংশ কোরবা চামড়া ষোলশহর মাদ্রাসা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে এবার কোরবানি দেওয়া হবে পৌনে ৯ লাখ পশু। আর চামড়া ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া কোরবানির তথ্যের সঙ্গে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যে ব্যাপক ফারাক। চামড়ার সঠিক তথ্য নেই জেলা প্রশাসনের কাছেও। দেশের বাজারে চামড়ার দাম কম ও পাশের দেশগুলোতে দাম বেশি হওয়ায় অনেকে উদ্বৃত্ত চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছেন।

চট্টগ্রামে এবারও চামড়ার কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না কোরবানিদাতারা। গ্রামগঞ্জে ১০০ থেকে ২০০ টাকায় প্রতি পিস চামড়া কিনেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের কোরবানিদাতা গিয়াস উদ্দিন শাকিল  বলেন, ‘এবারও পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে সবাই। এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ১০০ থেকে ১৫০ টাকার বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ করেননি। যে কারণে এত কম টাকায় চামড়া বিক্রি না করে অনেক কোরবানিদাতা স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য দান করেছেন।’

আড়তদার সাথে কথা বলে জানা যায় কোরবানির ঈদের দিন প্রায় ৪০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। এ বছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট রয়েছে আড়তদারদের। সে লক্ষ্য পূরণে শুক্র (৩০ জুন) এবং শনিবার (১ জুলাই) উপজেলা থেকে চামড়া সংগ্রহ করবেন তারা।

আড়তদাররা বলছেন, কোরবানির ঈদের দিন শুধুমাত্র নগরের বিভিন্ন অলিগলি থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। উপজেলার চামড়াগুলো লবণ দিয়ে সেখানেই সংরক্ষিত আছে। সেগুলো দ্রুত সংগ্রহ করা হবে। গত বছর ঢাকার এপেক্স ও খোকন লেদার চামড়া কিনে নিলেও এবছর এখন পর্যন্ত চামড়া কিনতে ঢাকার ট্যানারি মালিকরা কোন ধরনের যোগাযোগ করেনি বলে জানান তারা।

Exit mobile version