Site icon দৈনিক এই বাংলা

নান্দনিক সিলেট হোক বাসযোগ্য নগরী

তিন দিন পরই সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই শহরে আমার ছাত্রজীবন কেটেছে। নানা কারণে পূণ্যভূমি  সিলেটের সাথে আমার হৃদয়ের আপ্লূত সংযোগ রয়েছে। তাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আমাদের সিলেট আমাদের মতো করে উপহার দেবেন, সেই প্রত্যাশা রাখতেই পারি।

৩৬০ আউলিয়ার শহর সিলেট ।বাংলাদেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্থান এই সিলেট।কিন্তু বর্তমান সিলেট শহরের দিকে তাকালে মনে হয় মুখ থুবরে পড়া একটা শহর।সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র সিলেট সিটি কর্পোরেশন, যার প্রাণ আছে কিনা তা গবেষনার দরকার আছে।  কারণ গত কয়েক বছরে এই প্রতিষ্ঠান কি কি উন্নয়ন কাজ করেছে তা মানুষ সিলেটের রাস্তায় চলাচলের সময় ভালোভাবেই বুঝা যায়। বর্তমান সরকারের আমলে সারাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু প্রশ্নটা সুসম উন্নয়নের। সে কারণে সিলেটকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে  গড়ে তুলতে হলে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে।

সময় উপযোগী  ডেমোগ্রাফিক মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে তা বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নের সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা গেলে বাসযোগ্য নগরী তৈরি হবে। দেশের সবকটি সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সমন্বয় প্রকট।সিলেটে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য হওয়া উচিত সকলের জন্য একটি ভাল এবং আরও টেকসই ভবিষ্যত অর্জনের নীলনকশা তৈরি করা। বাস্তবতা হলো  এই শহরের নাগরিকদের  দারিদ্র্য, বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত অবনতি, শান্তি ও ন্যায়বিচারের সাথে সম্পর্কিত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সুসম উন্নয়নের সবগুলো লক্ষ্য  আন্তঃসংযুক্ত, এবং কাউকে পিছিয়ে না রাখার জন্য, ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের সেগুলি অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি সমস্যা সম্পর্কে আরও জানতে এবং পদক্ষেপ নিতে মেয়র পিতাকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

বলতে গেলে দশ লাখ মানুষের শহর সিলেটের একমাত্র সমস্যা পরিকল্পিত উন্নয়ন।  আমাদের মৌলিক চাহিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বাসস্থান। কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ নগর, যেখানে নগরায়ণ ও অভিবাসনের হার বেশি, সেগুলো বাসস্থানের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। গবেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনও নগরের বাসযোগ্যতা অনেকাংশে প্রভাবিত করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় পাড়ি জমাচ্ছে। আর বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই নগরী অভিঘাতগ্রস্ত বাস্তুহারাদের ঠাঁই দিতে গিয়ে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। বিপুলসংখ্যক বাস্তুহারা জনগোষ্ঠী জলাভূমি ভরাট করে বসতি বা ‘বস্তি’ গড়ে তুলছে। সেখানে মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানো শুধু কষ্টকরই নয়; অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন, খাবার পানি, স্বাস্থ্য প্রভৃতি অব্যবস্থাপনা এবং চাহিদার সঙ্গে জোগানের খাপ খাওয়াতে না পারা ঢাকা শহরকে স্বল্প আয়ের মানুষের বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। কিন্তু একই পরিস্থিতি ঢাকার বাইরে সিলেট সিটি কর্পোরেশ,  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, রাজশাহী এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে এ সব বিভাগীয় শহর আসলে রূপান্তরিত হয়েছে এলিট বস্তিতে।

শব্দ এক ধরনের শক্তি, যা কোনো মাধ্যমের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শব্দ যখন দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে তখন তাকে শব্দদূষণ বলে। সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি শব্দদূষণের ফলে সিলেট শহরও এখন শব্দদূষণের শহরে পরিণত হয়েছে। শব্দ যখন দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে তখন তাকে শব্দ দূষণ বলে। সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি শব্দ দূষণের ফলে নান্দনিক শহর সিলেট  এখন শব্দ দূষণের শহরে পরিণত হয়েছে। স্বাভাবিক বা সহনীয় শব্দের মাত্রা ৫৫ থেকে ৬০ ডেসিবেল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেলের অধিক শব্দ যদি দীর্ঘসময় ধরে থাকে তাহলে সাময়িক বধিরতা আর ১০০ ডেসিবেলের বেশি হলে স্থায়ী বধিরতা হতে পারে। একথা আমরা জানি, কিন্তু মানি নি বলেই এই অবস্থা।

এছাড়া প্রচারণা চালাতে গিয়েই যারা নগরজীবনকে বাস অনুপযোগী করে তুলেছেন তারা জিতে এসে কি করবেন তা নিয়ে সংশয় প্রকাশের সুযোগ আছে। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে সমস্ত সিলেট। অলিগলি কিছুই বাকি নেই। এই যে লাখ লাখ লেমিনেটিং পোস্টার ঝুলছে সর্বত্র, ভোট শেষে এগুলোর গতি কি হবে? এগুলো যত্রতত্র ছড়িয়েছিটিয়ে থাকবে, পরিবেশের জন্য এগুলো কত ক্ষতিকর হবে  তা কি নির্বাচনের প্রার্থীরা  ভেবে দেখেছেন?

আরেকটি বিষয় প্রতিষ্ঠার শত বছর পার হয়ে গেলেও এখনও পরিপূর্ণতা পায়নি সিলেট রেলস্টেশন। বর্তমান সরকারের আমলে সড়ক জনপদের যে উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম উন্নয়ন হয়েছে রেলে। সিলেটের সাথে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ আরও উন্নত হওয়া উচিত।

দীর্ঘদিন সময় নিয়ে ভরাট হয়ে যাওয়া সিলেট অঞ্চলের সুরমা,কুশিয়ারা হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অতিবৃষ্টি ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা  বৃটেন থেকে দেশে আসা প্রবাসীদের দেশবিমুখ করছে। অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যায় সিলেট। আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে  দিনে দিনে নদী ভরাট, খাতাপত্রে খোলা খালে উন্নয়নের খাল বন্ধ কোথায় কোথায়।ছড়া দখলের মহোৎসবের বিপরীতে কঠোরতা কতটুকু হবে নতুন  মেয়রের, এটিও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি  উন্নয়নে অনেক কাজ হাতে নেয়া হয় কিন্তু সঠিক তদারকির কারণে তা আলোর মুখ দেখে না।

সিলেট নগরীতে এত পরিমান রিক্সা দেখা যায় যার অর্ধেকই লাইসেন্স বিহীন।পুলিশ এসবের কোনো খোজ-খবরই রাখেন নি অতীতের মেয়র ।মহানগরীতে পাওয়ার বাইক,সিএনজি রিক্শা এত পরিমান নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে যারা অবাস্তব ভাড়া দাবি করে নগরিকদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এছাড়া পানি সমস্যার কবে সমাধান হবে সেটি কোনো গনকও বলতে পারবেন না। সিলেটের  উপশহর,শিবগঞ্জ এসব এলাকায় পানি নেই বললেই চলে। উপশহর এলাকার পানি সরবরাহ টাকার বিনিময়ে বন্ধ করে দেয়া হয় – এমন অভিযোগও শুনেছি।  প্রতিটা এলাকায় একটি নির্দিস্ট সময় পানি সরবরাহ করলে পানির সমস্যা সমাধান করা যায়।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দীর্ঘদিন থেকে চিনি।  অন্তত দুই যুগ ধরে তার কাছাকাছি ছিলাম। তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। একজন তরুণ সংগঠক হিসেবে তার চোখে সিলেট নিয়ে যে স্বপ্ন,  সেটির সাথে অন্তত প্রবাসীদের ভাবনার সাদৃশ্য রয়েছে। তার নির্বাচনী ইশতিহার বাস্তবায়ন সম্ভব হলে প্রাণের সিলেট শহর তার রুপ লাবণ্য ফিরে পাবে।

Exit mobile version