Site icon দৈনিক এই বাংলা

পাখির অভয়ারণ্য বানাতে গাছ উজাড়

:::::নিজস্ব প্রতিবেদক::::

চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলি এলাকায় বঙ্গোপসাগরের তীরে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বনে পাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থল কেটে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পাখিদের জন্য বানাচ্ছে একটি অভয়ারণ্য।সীতাকুলের আউটার রিং রোড সংলগ্ন ডিসি ফ্লাওয়ার পার্কে গাছ কেটে পাখিদের অভয়ারণ্য তৈরি করছে জেলা প্রশাসন। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের দাবি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে পার্ক নির্মাণ করা হবে।

পাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস  করে অভয়ারণ্য বানাতে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে জানিয়েছেন উপকূলীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান।   চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এমন পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা ।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কাট্টলী উপকূলে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে বঙ্গোপসাগরের তীরে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বন কেটে এ অভয়ারণা গড়ে তোলা হবে।এই পার্কের নাম দেওয়া হয়েছে ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক। আর এ জন্য ছোট-বড় মিশিয়ে প্রায় ৫ হাজার গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ।

এ ঘটনায় স্থানীয় পরিবেশবিদ এবং সংবেদনশীল  নাগরিকরা বলছেন, এ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরিবেশ সুরক্ষার রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার এবং নির্দেশনার প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকূলীয় বন কর্মকর্তা বলেন, ‘ পার্ক নির্মাণের অংশ হিসেবে জায়গাটি সমতল করার জন্য এই গাছগুলো কাটা হয়েছে। আমাদের রেঞ্জ কর্মকর্তা সেখানে দেখেছেন এক্সকেভেটর দিয়ে নির্বিচারে গাছপালা এবং মাটি কাটা হচ্ছে। তখন জানতে চাইলে তারা বলেছে । সেখানে রাস্তা করা হবে। পরে রেঞ্জ কর্মকর্তা এ তথ্য আমাকে জানালে আমি কাজ বন্ধ করে দিতে বলি। খবর দেওয়ার পর সীতাকুন্ডের ইউএনও সেখানে গিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, আমি ডিসি মহোদয়কে জানিয়েছি বিষয়টি।

এভাবে গাছপালা কাটা উচিত হচ্ছে না। উপকূলীয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান আরও বলেন, জায়গাটি বন আইনের ৪৬ ধারায় নোটিফিকেশন করা আছে। সংরক্ষিত বনের জন্য ২০ ধারায় নোটিফিকেশন করা আছে। নতুন কোনো চর উঠলে তাতে বন সৃজন করে উপকূলীয় বন বিভাগ। তখন পর্যায়ক্রমে ৬ ধারার নোটিফিকেশন করা হয়। এরপর ২০ ধারায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। কাটলী উপকূলে যেখানে কাজ চলছে সেখানে বন বিভাগের নিজস্ব বাগান রয়েছে, যা ১৯৯৬ সালে করা হয়েছিল। কেননা ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলের মানুষ অরক্ষিত হয়ে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলের মানুষকে বাঁচাতে তখন এ বন গড়ে তোলা হয়।

আবদুর রহমান বলেন, ‘ বন করার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের বনভূমি বৃদ্ধি করা। কিন্তু জেলা প্রশাসন আমাদের না জানিয়া নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলেছে। যদি কেউ নতুন করে গাছ লাগায়ও তাও এটা করতে পারেন না। দেশে আইন আছে। গাছ কাটা যাবে না। সরকারি কোনো কিছু করতে হলে যদি গাছ কাটতে হয় সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নিতে হবে। এভাবে বনের গাছপালা এবং মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। আমরা বাগান করেছি। তা হলে আমাদের জানানো হয়নি কেন?

তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী আমাদের প্রধান কার্যালয়কে জানিয়েছি এবং পরিবশে, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারপর যা সিদ্ধান্ত আসে সেটাই আমরা মেনে নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপকূলীয় বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাশেদুজামান বলেন, ১২টি বড় কেওড়া গাছ কাটা হয়েছে। এ ছাড়া ছয় থেকে আট ইঞ্চি প্রস্তর (বেড়) পাঁচ হাজার গেউয়া, মেইলা ও বাইন গাছ এক্সকেলেভেটর দিয়ে ধ্বংস করা হয়। কিন্তু তা আমাদের জানানো হয়নি। আমি সরেজমিন গিয়ে এ পরিস্থিতি দেখতে পেয়েছি। পরে সীতাকুণ্ড ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন তারা ডিসি স্যারের নির্দেশে কাজ করছেন। আমি কেন সরকারি কাজে বাধা দিলাম? আমি বললাম স্যার সরকার তো বলেনি বন ধ্বংস করতে। ‘

রাশেদুজ্জামান আরও বলেন, ওই এলাকার ১৯৮৪, ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৮ সালের সৃজিত বন রয়েছে এবং গেজেট নোটিফিকেশনে সেটি বনভূমি এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এলাকা।

এখানে উল্লেখ্য, কাউনা উপকূলে ১৯৪ একর জায়গা সম্প্রতি জেলা প্রশাসন অবৈধ দখলমুক্ত করে। এই জায়গার কিছু অংশে একটি বিনোদন পার্ক করার কথা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১০ হাজার চারা লাগানোর কথা রয়েছে। সেখানে পাখির আবাসন গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, সেখানে কোনো গাছপালা কাটা হচ্ছে না। পাক থেকে সৈকত পর্যন্ত একটি রাস্তা করা হবে। এক্সকেভেটর দিয়ে কিছু ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। তা ছাড়া জায়গাটির নাম খতিয়ানভুক্ত এবং জেলা প্রশাসনের জায়গা। মানুষ যেন অবসরে দেখানে সময় কাটাতে পারেন সে উদ্দেশ্যে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের দাবি, পার্ক বানাতে গিয়ে সেখানে কোনো গাছপালা কাটা হচ্ছে না। বন বিভাগ গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য দিচ্ছে। জেলা প্রশাসন সেখানে নতুন করে ১০ হাজার গাছ লাগিয়ে পাখীর আবাস গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি হবে চট্টগ্রামের অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র, যা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার ফখরুজ্জামান জানান, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার সলিমপুর এলাকায় থাকা বেশ কিছু জমি উদ্ধার করে।  সেখানে  পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।  যেখানে পাখি ও বন্যপ্রাণীদের আশ্রয়স্থলসহ একটা গ্রিন এরিয়া তৈরি করা হবে।

তার দাবি, জায়গাটি এক নম্বর খতিয়ানভুক্ত খাস জায়গা। আগের অবৈধ দখলদাররা সেখানে বিষ দিয়ে গাছগুলো মেরে ফেলেছিল। সেই মরা গাছ তারা সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম যে এটা বন আইনের ৪ ধারায় নোটিফায়েড। কিন্তু বন বিভাগ এখনও এই সংক্রান্ত কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। তবে যেসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে তার সবই ছিল সজীব ও জীবন্ত।

এইবাংলা/ হিমেল

Exit mobile version