Site icon দৈনিক এই বাংলা

সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা হোক মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা

সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। যা সমাজে চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে বিবেচিত। তবে সেই চ্যালেঞ্জ কে হাসিমুখে নির্ভীকতার  সাথে  গ্রহণ করে নেয় অনেক তরুণ-তরুণী। যা একটা সময় ছিল কল্পনাতীত। আর এই সাংবাদিকতা হল বিভিন্ন ঘটনাবলী, বিষয়, চিন্তা চেতনা ,ধ্যান-ধারণা ও মানুষ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরী ও পরিবেশনা। যা প্রতিটি দিনে মানুষের তথ্য জানার আগ্রহকে  সংবাদের মোড়কে পরিবেশিত হয়,  তা সমাজ ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের মাঝে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ বিভাগ হিসাবে চালু হয় এবং ২০১২ সালে এর ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হয়। সেই সময়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। যদিওবা বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বিশ্ববাজারে বেশ দাপটের সাথে টিকে থেকে মানুষের তথ্য-ক্ষুধা মেটানোর সামাজিক দায়িত্ব পালন করে আসছিল সংবাদপত্র। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যায়ে ইন্টারনেটের আবির্ভাব মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। এরপর ইন্টারনেটের সুবিধা ব্যবহার করে যেসব নিউজ পোর্টালের আবির্ভাব হয় তাতে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মুদ্রিত সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা কমতে থাকে। ঝুঁকতে থাকে অনলাইন সংবাদপত্র প্রকাশের দিকে। তখন থেকে অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ বা তথ্য পাওয়ার সুযোগও যেমন সৃষ্টি হয়েছে, অপরদিকে ভুয়া তথ্য, অপতথ্য বা গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এভাবেই তথ্যের চাপে বস্তুনিষ্ঠতা ও নির্ভুলতা বজায় রাখাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন অনলাইনে প্রচারিত এ সমস্ত খবর কিংবা তথ্য অধিকাংশই ছিল গুজব কিংবা ভুয়া। আর এ বিষয়টা তদারকির নিমিত্তে সন্ধান শুরু করে রিউমার স্ক্যানার‌। আর এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২২ সালে রিউমার স্ক্যানার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ১৪০০ গুজব, ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুজব প্রকাশিত হয়েছে ধর্মীয় বিষয়ে। এছাড়া রাজনীতি, জাতীয়, খেলাধুলা ও শিক্ষা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কাতার বিশ্বকাপ নিয়েও ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য শনাক্ত হয়েছে।

দেখা গেছে, সবচেয়ে বিশ্বস্ত গণমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনেও ভুল তথ্যসংবলিত খবর বা ভুয়া খবর প্রচার হচ্ছে। এরই পাশাপাশি ভুয়া খবর’-এর বিস্তার বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংবাদকর্মীরা। যা সর্বোচ্চসংখ্যক তথা ৩২ শতাংশ সাংবাদিক এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।

মূলত ইংরেজিতে ‘জার্নাল ও ইজম’ এই দুই শব্দের মিলনে জার্নালিজম। জার্নাল শব্দের অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু প্রকাশ করা। ইজম শব্দের মানে হচ্ছে কোনো কিছু অনুশীলন বা চর্চা করা। এভাবেই এই ধারণা কিংবা চিন্তা থেকে সাংবাদিকতার সৃষ্টি হয়। সাংবাদিক যা করেন তা হচ্ছে সাংবাদিকতা। এরা খবরের সন্ধান করেন, খবরের পেছনে ছোটেন, খবর নির্বাচন করেন। অন্যদিকে সাংবাদিকতা হচ্ছে কাজ। এদের কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করা, প্রতিবেদন লেখা এবং সম্পাদনা করা। সংবাদ হলো চলতি ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ। যা পাঠকের আগ্রহ উদ্দীপ্ত করে।

তবে আজকালকার দিনে এই সাংবাদিকতা যেন অনেকটা অপূর্ণতা ও ভুলে ভরা। অনেকে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন না করে, সরজমিনে উপস্থিত না হয়ে ভিত্তিহীন ও তথ্য যাচাই না হয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করে অযৌক্তিক কিছু সংবাদ। যা জনমনে সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি ও ভোগান্তি। এতে করে মানুষ প্রকৃত ঘটনা এবং সঠিক তথ্য হতে বঞ্চিত হয়। ফলে জনমানবে উদগ্রীব এবং উৎকন্ঠা কাজ করে। মূলত এই সব বিষয় কেবল সঠিক সংবাদিকতা সম্পর্কে অবগত না থাকা কিংবা সাংবাদিকতা নিয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকার ফল।

একজন সাংবাদিককে মূলত ছয়টি বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত থাকতে হয়। তা হলো কি, কোথায়, কে, কাকে, কখন, কিভাবে। আর এই ছয়টি বিষয় নিয়ে সংবাদ তৈরি করাকে বলা হয় সাংবাদিকতা।আর এই ৬টি বিষয়ের সাথে আরও ১টি বিষয় যুক্ত করে সংবাদ তৈরী করাকে বলে অপসাংবাদিকতা। সে বিষয়টিকে বলা হয়, Yellow (হলুদ)। আর এই Yellow কিংবা Y শুধু একটি বিষয় না এটি অনেকগুলো বিষয়ের সমষ্টি। যেমন- মিথ্যা, প্রতারণা, শত্রুতা, ভিত্তিহীন ইত্যাদি। ইহা নাগরিক জীবন ও সমাজে অনেক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে থাকে। আমাদের উচিৎ হলুদ সাংবাদিকতা এড়িয়ে চলা এবং সঠিক সংবাদ পরিবেশন করা।

পরিশেষে বলা চলে সাংবাদিকতা হোক আদর্শ-ন্যায়নীতির উপর থেকে সদা সত্য ঘটনা উদঘাটনে সঠিক তথ্য প্রচারের এক বিশ্বাসযোগ্য পেশা। আর এই সাংবাদিকতা মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা নয় বরং হোক সঠিক তথ্য পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম।

লেখক :: তৌহিদ-উল বারী
শিক্ষার্থী, বাকলিয়া সরকারী কলেজ,চট্টগ্রাম।

Exit mobile version