Site icon দৈনিক এই বাংলা

সীতাকুণ্ডে একশ বছরের পুরোনো পুকুর ভরাট

এম ইদ্রিস নিজামী , সীতাকুণ্ড

জলাধার সংরক্ষণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সীতাকুণ্ডে চলছে একশ বছরের পুরোনো একটি পুকুর ভরাট। পৌরসদরের কলেজ রোড বড়বাজার এলাকায় অবস্থিত। ওই পুকুরের অর্ধেকাংশ ইতিমধ্যে বালু ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে পুকুরপাড়ের বেশ কিছু গাছও। সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড মহাদেবপুর গ্রামের মহাদেবপুর মৌজার এ পুকুরটির আয়তন প্রায় ৫৯ শতক। যুগ যুগ ধরে পুকুরটি স্থানীয়রা ব্যবহার করে আসছেন নিত্যকাজে।

শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, শতবর্ষী ওই পুকুরটিতে ট্রাকে করে বালু ফেলা হচ্ছে। এ সময় পুকুরপাড়ে কেটে ফেলা গাছপালার ডালও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে থাকা আরও গাছপালা কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এ সময় কথা হয় পুকুরটির পূর্বের মালিক প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুকুরটি আমরা বিক্রি করে দিয়েছি। পুকুরটি দূষিত হয়ে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, পুকুরটি নিয়ে দুটি পক্ষের বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান। তবে শতবর্ষী পুকুরটির ওপর বহুতল ভবন তুলতে ও বেশি দামে প্লট বিক্রি করতে পুকুরটি ভরাট করছে কলেজ রোড়ের বাসিন্দা গৌতম অধিকারীসহ কয়েকজন। আর এ জন্য ট্রাকে রাত-দিন বালু ফেলা হচ্ছে পুকুরে। ইতিমধ্যে প্রভাবশালী একটি গ্রুপকে পুকুর ভরাটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা আরও জানান, শত বছর ধরে পুকুরটি নিত্যকাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। পুকুরটিতে একসময় প্রচুর মাছ উৎপাদন হতো। এখনও অনেক মাছ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে এ পুকুরে। বালু দিয়ে ভরাটের ফলে সবকিছু চাপা পড়ে গেছে।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ ধারা লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

যদিও এসব আইনের কোনো তোয়াক্কা নেই সীতাকুণ্ডে। গত এক বছরে কেবল পৌরসদরেই ভরাট করা হয়েছে অর্ধশতাধিক বড় বড় দীঘি ও পুকুর। সীতাকুণ্ডের নামার বাজার এলাকায় বিশাল একটি দীঘি ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি শুরু করেছেন সেটির মালিক কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ।

পৌরসদরের উত্তর বাজারের দাসপাড়ায় একটি প্রাচীন পুকুর ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে সীতাকুণ্ড চক্ষু হাসপাতালের বহুতল ভবন ও মার্কেট। একই এলাকায় ভূঁইয়া টাওয়ারের পেছনে আরেকটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। গত কয়েক মাস আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও তা মানেননি মালিকরা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে আমি পুকুরটি পরিদর্শন করেছি। ভরাটের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এভাবে পুকুর ও জলাশয় ভরাট বেআইনি।

Exit mobile version