রাহাত আহমেদ ::
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষিকাজে রাসাইনিক সারের অতিরিক্তি ব্যবহারের কারণ সবুজ ফসলই ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যের ঝুকি তৈরি করছে । কৃষিকাজে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করা হয় কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের জন্য। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৮ হাজার টন কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করা হয়।আর এসব আমদানি করা কীটনাশকে যে ভারী ধাতুর উপস্থিত থাকছে, সে বিষয়টি তৈরি করছে স্বাস্থ্যের নানামুখি ঝুকি । অতিরিক্তি রাসাইনিক সারের ব্যবহারের কারণে জমির উর্বরতাই শুধু কমছে না , বরং মানবদেহে নানা রোগ সৃস্টি করছে । প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিতে ভুগছে কৃষিজমি। বাড়ছে অনুর্বর হয়ে পড়া জমির পরিমাণ। রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞসহ কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ব্যবহৃত সারের একটি অংশ অপচয় হচ্ছে, যা নানা প্রকার ক্ষতিকারক উপাদানে পরিণত হয়ে পরবর্তীতে প্লাবন বা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে জলাভূমি এবং বনভূমির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য বলছে, ২০০০ সালে দেশে উর্বরতা ঘাটতিতে থাকা জমির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ হেক্টর। ২০২০ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ হেক্টরে। জমির অনুর্বরতা যেভাবে বাড়ছে, তা আশঙ্কাজনক। এর পেছনে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারকে দায়ী করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, বাজার থেকে সংগ্রহ করা ৪৭ ব্র্যান্ডের আমদানি করা কীটনাশকের নমুনা পরীক্ষা করে সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রমিয়ামের মতো ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। এমন সতর্ক বার্তা আমলে নেয়া হয় নি । সারের আমদানী ও ব্যবহার দুটিই বেড়েছে ।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা, ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার, প্রেসিশন এগ্রিকালচারের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ ধরনের চৌকস কৃষিতে নিরাপদ ও দক্ষ মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে বা ব্যবহারের প্রয়োজন না হলে যেকোনো রাসায়নিক সার মাটির ক্ষতি করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের সঙ্গে কৃষিজমির উর্বরতাশক্তি যেভাবে কমছে, তা ভীতিপ্রদ। এমনটা হলে দেশের প্রধান ফসলগুলোর ফলন ব্যাপক হারে হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এ অবস্থায় খাদ্যনিরাপত্তার জন্য টেকসই মাটির উর্বরতাশক্তি ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সুপারিশকৃত নীতিমালা অনুসরণ করার কথা বলছেন । কৃষিবিদরাও বলছেন, মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের অবস্খা বুঝে সার ব্যবহার করা উচিত।
ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে খাদ্যশস্য ফলাতে সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে সেভাবে গবেষণা না হলেও রাসায়নিক সারের ব্যাপক ব্যবহারের খারাপ দিক রয়েছে। এতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীসহ সার্বিকভাবে প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।