20 C
Dhaka
Friday, February 14, 2025
More

    চসিকে ফিরতে চান না মারধরের শিকার হওয়া সেই প্রকৌশলী

    আরও পড়ুন

    রাহাত আহমেদ

    চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানি মারধরের শিকার হয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রতি সপ্তাহের বুধ বৃহস্পতিবার দুদিন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে অফিস করেন তিনি, বাকি তিন দিন ঢাকা এলজিইডির কার্যালয়ে বসেন। গেল ২৯ শে জানুয়ারি একদল ঠিকাদার চসিক কার্যালয়ে তার কক্ষে ঢুকে ভাংচুর করেন। তাকেও মারধর করেন। এমন ঘটনায় সারাদেশে মানববন্ধন করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা।

    বুধ ও বৃহস্পতিবার চসিক কার্যালয়ে ফিরেন নি তিনি। চসিকে তার কক্ষে গিয়ে অফিস সহকারীকে দেখা যায়। তিনি জানিয়েছেন, দুই দিন নির্ধারিত অফিস করেন নি গোলাম ইয়াজদানি। কবে থেকে অফিস করবেন সেই বিষয়েও কোন তথ্য নেই অফিস সহকারীর কাছে।

    চসিক সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারনে তিনি অফিসে আসেন নি। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন তিনি।

    মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে গোলাম ইয়াজদানি বলেন, কর্মক্ষেত্রে এমন ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আমি। চসিকে ফিরবো কিনা সেটি উর্ধতন মহলের সাথে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিবো। ‘

    তবে তার সহকর্মী এলজিইডির প্রকৌশলীরা জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের লাগাম টানতে তাকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পর সেখানে কাজ করার পরিস্থিতি নেই। কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করার দায়িত্ব প্রশাসনের। একজন মেধাবী প্রকৌশলীকে কার্যালয়ে ঢুকে মারধর করার মতো দুর্বৃত্তায়ন রুখতে প্রকৌশলীরা একজোট হয়ে কাজ করবে৷

    স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সুত্রমতে, চসিকে প্রকৌশলী ইয়াজদানীকে নিয়োগ দেবার বিষয়টি পুরোপুরি উপর মহলের সিদ্ধান্ত ছিলো৷ সেই সিদ্ধান্তে নাখোশ হতে পারে চসিক কর্তৃপক্ষ। সেকারনে তদন্ত করে সংস্থাটির কেউ এই ঘটনায় ইন্দন দিয়েছিলো কিনা -সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের নন্দনকাননের ২ নং গলির একটি বাড়িতে বসে প্রকল্প পরিচালককে হুমকি দেয়া ও কার্যালয় ভাংচুর করার সিদ্ধান্ত নেয় কয়েকজন ঠিকাদার। সুত্রমতে, সেখানে উপস্থিত থাকা অন্তত পাঁচজন ঠিকাদার সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত। জানুয়ারী মাসের ২১ ও ২২ তারিখ এই ঘটনার পরিকল্পনা করে কয়েকজন ঠিকাদার। শুরুতে চসিক কার্যালয়ের বাইরে এমন ঘটনা করার পরিকল্পনা করা হলেও সেটি পরেরদিন পরিবর্তন করা হয় । চসিক কার্যালয়ের ভেতরে হামলার ঘটনাকে বিক্ষোভের রেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই তারা চসিক কার্যালয়কে বেছে নেয়। ‘

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, চসিকে ২৯ শে ডিসেম্বর অস্থায়ী কর্মচারীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলম। তাকে মারমুখী শ্রমিকদের কবল থেকে উদ্ধার করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম। সেসময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলমের সাথে অশালীন আচরন করেন কিছু শ্রমিক নেতা। সেই ঘটনায় শহিদুল আলমকে জিম্মি করে চসিকের পঁচিশজন শ্রমিককে পদোন্নতি দেয়ার নির্দেশনা স্বাক্ষর করানো হয়৷ এই ঘটনার মতো করেই প্রকল্প পরিচালককে ভয় দেখানোর কৌশল নেয়া হয়েছিলো গোলাম ইয়াজদানির অনড় অবস্থানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একটি পক্ষের ইংগিতে। কিন্তু পরিকল্পনার সাথে মিল রেখে ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয় নি তারা। গেল রবিবার ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে কাজ দেবার কারনে ঠিকাদারদের ক্ষোভ প্রকাশের পরিকল্পনা ভাংচুর ও মারধরে রুপ নেয়। ‘

    ঘটনার সময় সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে ঢুকার আগেই ফিরে আসেন তিন ঠিকাদার। তাদের একজনের সাথে কথা বলে জানা যায় প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলার জন্য একসাথে তার কক্ষে ঢুকার কথা থাকলেও কয়েকজন ঠিকাদারের মারমুখী আচরনের কারণে তিনজনই ফিরে আসেন। তারা লালখানবাজার এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। আধাঘন্টা পরে দলবদ্ধভাবে ফিরে আসা ঠিকাদাররা ভাংচুর ও মারধরের কথা জানালে তারা তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করেন।

    সুত্রমতে, বিক্ষোভ প্রদর্শন করার পরবর্তী পরিস্থিতি পূর্বের ঘটনার মতো করে ( শহিদুল আলমকে অবরুদ্ধ করে রাখা) সামাল দেবার কথা থাকলেও চসিকের কিছু কর্মকর্তা সেই কথা না রেখে পুলিশকে খবর দেন। সুত্রটি জানায়, ঘটনার সময় সিসিটিভি ক্যামেরা নস্ট করে রাখার ব্যবস্থা করার কথা চসিকের কিছু কর্মকর্তার। কিন্তু ঘটনার পরপর গণমাধ্যমের উপস্থিতি, সিসিটিভি ফুটেজ প্রচারিত হবার কারণে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। ‘

    এদিকে,প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানির উপর হামলা ও তার কক্ষ ভাংচুরের ঘটনায় চসিকের কিছু কর্মকর্তার ইন্দন রয়েছে – এমন সুত্র ধরেই তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। চসিকের তিন সদস্যের তদন্ত দলও তাদের তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে তদন্ত প্রতিবেদন দেবার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাদের। এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তদন্ত কমিটির কোন সদস্য। এই ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন সংস্থাটির প্রকৌশলীরা। সুষ্ঠ তদন্ত না হলে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসছেন না প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানি – এমন ইংগিতই পাওয়া গেছে সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর