::: নেওয়াজ তুহিন :::
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মান করার দায়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জসিম উদ্দিনসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আকবর শাহ থানার বেলতলী এলাকায় পাহাড় ধসে এক শ্রমিকের মৃত্যুর চারদিন পর মঙ্গলবার রাতে এই মামলা রুজু করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার বর্গফুট পাহাড় কেটে চসিকের উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে সড়ক নির্মান করা হচ্ছিলো ।
প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অননুমোদিতভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দুই প্রকৌশলী এবং নয় নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পক্ষে হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় এ মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন—চসিকের রাস্তা নির্মাণের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব, একই প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, চসিকের সিনিয়র উপ সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ওলী আহমেদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এবি-হক ব্রাদার্সের ওমর ফারুক ও তাকিয়া বেগম, কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং জসিমের সহযোগী মোহাম্মদ ইসমাইল।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রকল্পের মাধ্যমে এবি হক ব্রাদার্সকে রাস্তা নির্মাণের কাজ দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছিলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাস্তা নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে আনুমানিক ১৩ হাজার ৩০০ ঘনফুট পাহাড় কাটার দায়ে চসিক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে শুনানির নোটিশ দেয়া হয়েছিলো পরিবেশ অধিদপ্তরের তরফ থেকে । চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড লিখিত অভিযোগ দিলে আবারও তাদেরকে শুনানিতে হাজির থাকার নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওইসময় কাউন্সিলর জসিম শুনানিতে উপস্থিত থাকলেও চসিকের প্রকল্প পরিচালক এবং সিডিএর কোনো কর্মকর্তাই শুনানিতে আসেননি। একই পাহাড় কাটার অভিযোগে এর আগেও একজনকে গ্রেপ্তার করেছিলো প্রশাসন।
স্থানীয়দের অভিযোগ সিটি কর্পোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস্তা নির্মাণের কথা বলে স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের নির্দেশে মোহাম্মদ ইসমাইল নামের এক সহযোগীসহ কয়েকজন মিলে পাহাড় কাটছেন । পাহাড় ধসের সেই ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠন করা তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এই ঘটনার সাথে জড়িত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকেও মামলার অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, ‘ওই এলাকায় প্রকল্প পরিচালনাকালে কোন টিলা বা পাহাড় কাটা হবে কিনা, কি পরিমাণ কাটা হবে, পাহাড় কাটা হলে ভূমিধ্বস রোধকল্পে কোন গাইড ওয়াল কিংবা রিটেনশন ওয়াল নির্মাণ করা হবে কিনা এ সম্পর্কে কোন ধরনের তথ্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আমাদেরকে জানাই নি। পাহাড় কাটার অনুমোদনও নেওয়া হয় নি। অননুমোদিতভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা ৬ (খ) লংঘন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ ধারাবাহিকভাবে পাহাড় কাটার কারণে ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধনসহ জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এবং বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণে মারাত্মক ক্ষতিসাধনসহ জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা বেড়েছে । এই কারণে সাত জনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় পরিবেশ আইনে মামলা করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, আকবর শাহ এলাকায় একাধিকবার পাহাড় কাটার মামলার আসামি হয়েছেন চসিক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। এমনকি পাহাড় কাটার মামলার আসামি তার স্ত্রীও। পাহাড় রক্ষার বদলে পাহাড়খেকো এই কাউন্সিলরকেই চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্ট্যাডিং কমিটির সভাপতি।পাহাড় কাটার দায়ে এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হলেও কখনোই গ্রেফতার হননি এই কাউন্সিলর।
এইবাংলা/ হিমেল