::: অপু ইব্রাহিম :::
কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে দুদকের মামলার জালে ফেঁসে যাওয়া সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানসহ পাঁচ আসামিকে দায়মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে। রোববার (৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালত মামলার এজাহারে থাকা পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়। আলোচিত এই মামলাটির এফআরটি ( ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) গ্রহন না করে আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে ।
রবিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জেবুননেসা এ আদেশ দেন। আদালতে দায়িত্বরত দুদকের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) আবদুল লতিফ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আলোচিত মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানসহ পাঁচ আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে দুদকের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের বিষয়ে গতকাল রোববার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।
আদেশের পর দুদকের জিআরও আবদুল লতিফ বলেন, ‘ আদালত মামলটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি। মামলার এজাহারে থাকা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আদালত।’
আইনজীবীরা জানান, উপযুক্ত কারণ ছাড়া মামলা থেকে কোনো আসামি বা সব আসামিকে বাদ দিয়ে তদন্তকারী চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে আদালত তা গ্রহণ না করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আদালত এজাহারে থাকা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরাসরি আমলে নিতে পারেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেলে দুদক মামলা করে। ফলে, দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সুযোগ থাকে না। এ ধরনের ঘটনায় দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।’
নিজেরা মামলা করলেন, আবার নিজেরাই আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্তে যা পেয়েছি, কমিশনে তা তুলে ধরেছি। কমিশন থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি।’
অব্যাহতির সুপারিশ করা পাঁচজন হলেন সাবেক মন্ত্রীর ছেলে মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত দক্ষিণ জোনের টেকনিশিয়ান (সার্ভেয়ার) মো. দিদারুল আলম, ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।
২০২১ সালের ১০ জুন মন্ত্রীপুত্রসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলাটি করেছিলেন চাকরিচ্যুত দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, হালিশহর এলাকার বাসিন্দা এম এ সালামের নামে বরাদ্দ করা ১৮টি অব্যবহৃত দ্বৈত চুলার গ্যাস সংযোগ ছিল। এর মধ্যে ১২টি চান্দগাঁও সানোয়ারা আবাসিক এলাকার গ্রাহক মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তর করা হয়। এ কাজে সালামের স্ত্রীর নামে ভুয়া চুক্তিনামাও করা হয়। সালাম ও মুজিবুরের গ্রাহক সংকেত পৃথক হওয়ায় সংযোগ স্থানান্তরের কোনো আইনগত বৈধতা নেই। তাছাড়া ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুরের নামে আরও ১০টি সংযোগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২ মার্চ থেকে পরের বছরের ২ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ সময়কালে ভুয়া আবেদনপত্র তৈরির মাধ্যমে মুজিবুরের নামে মোট ২২টি অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর ১৩ জুন অবৈধ ওই ২২টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় দুদক কেজিডিসিএলের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপ সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিনের চাকুরীচ্যুতির পর নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুল আলম তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন মন্ত্রীপুত্রসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ মেলেনি। গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে পাঁচ আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছিল দুদক।
এইবাংলা /তুহিন