:::নাদিরা শিমু :::
বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে চিকিৎসার জনপ্রিয় মাধ্যম হোমিওপ্যাথি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা অনেক পুরনো পদ্ধতি এবং স্বীকৃত পদ্ধতি। গ্রামাঞ্চলের অনেকে এই চিকিৎসা গ্রহণ করেন। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে। কিন্তু কার্যকর সরকারি উদ্দ্যেগের অভাবে চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্রটিকে অবহেলার নেপথ্য কারণ পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা ও ওষধ প্রস্তুতকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্বাভাবিক মুনাফা উপার্জন।গবেষণনার তথ্যমতে, এখনও দেশের চল্লিশ শতাংশ রোগীর আস্থা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়।
হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের অধীনে ৬৪টি জেলায় একটি করে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ আছে। এগুলোতে ৮ শতাধিক শিক্ষক কর্মরত আছেন। এ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ২০০৯ সালের স্কেল অনুযায়ী ৩০ শতাংশ বেতন পান। কিন্তু সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নতুন বেতন কাঠামো ২০১৫ সালে পরিবর্তন হলেও আমাদের বেতন কাঠামো আজ পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২০০৯ সালের মূল বেতন ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ উন্নত হয়েছে, কিন্তু নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী হয়নি। দেশে সরকারিভাবে একটি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল আছে। বিজ্ঞানী হ্যানিম্যান ১৭৯৬ সালে Homeopathy নামে এই চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। রোগীকে অল্প ওষুধ দিয়ে সুস্থ করে তোলাই Homeopathy-র মূলমন্ত্র। কিন্তু বর্তমানে সেই চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষতিকারক এসিড। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় গবেষণার ব্যাপকতা না থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাখাকটি এখন ধংসের দ্বারপ্রান্তে।
সম্প্রতি ‘অষ্টম আন্তর্জাতিক হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞান সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের সব হাসপাতালে হোমিও চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে৷ এই হোমিও চিকিৎসায় আরো গবেষণা বাড়াতে হবে এবং এই খাতে বাজেট বৃদ্ধি করা হবে। ‘
বাংলাদেশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিসার্চ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪০ ভাগ মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণার ফল আমেরিকার একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে আমেরিকাতেই ১৫% হোমিওপ্যাথির ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়া সুইস গভর্নমেন্ট তাদের দেশে ১৫০০০ কোয়ালিফাইড হোমিওপ্যাথকে সরকারিভাবে তাদের স্বাস্থ্যখাতে অন্তর্ভূক্ত করেছে। এই উদ্যোগকে সুইজারল্যান্ডের জনগণ চিকিৎসার বিপ্লব হিসাবে দেখছে।
এছাড়া আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ার্ল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফ্রিকাসহ বিশ্বের ৪৩ টি দেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রয়েছে এবং এসব দেশে প্রচুর পরিমাণে মানুষ হোমিওপ্যাথির উপর নির্ভর করছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে ১০০টির উপরে মেডিক্যাল কলেজ এবং ২,৪৬, ৭৭২ জন্য কোয়ালিফাইড রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ রয়েছেন। আমেরিকা-ব্রিটেনেও উন্নত মানের মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সেখানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী চিকিৎসকগণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। এখনও ব্রিটেনের রানির ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসাবে একজন হোমিওপ্যাথ রয়েছেন। সম্প্রতি ভারতের একটি রিসার্চে বের হয়েছে সেদেশে ৫৫% মানুষ হোমিওপ্যাথির দিকে অগ্রসর হয়েছে।
গণস্বাস্থ্য হোমিওর চেয়ারম্যান এস এম সরওয়ার মনে করেন, পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে ক্যানসারের মতো জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। ক্যানসার সম্পূর্ণভাবে নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি কার্যকর। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং আধুনিকায়ন করতে পারলে মানবদেহের যেকোনো ক্যানসার চিকিৎসায় এলোপ্যাথির পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।‘
দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে এখনো অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা পুরোপুরি পৌঁছায়নি। কিন্তু তাদের ঘরের কাছেই আছে প্রাচীনতম চিকিৎসাসেবা হোমিওপ্যাথি, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক। এসব চিকিৎসায় মমতা আছে, অথচ পার্শপ্রতিক্রিয়া কম। তাতেই মানুষের আস্থা।
ডাঃ সামিনা আরিফ মনে করেন, জরুরী ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে একটা হোমিওপ্যাথি রিসার্চ সেন্টার করা প্রয়োজন। হোমিওপ্যাথির একটি পূনাঙ্গ আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করা প্রয়োজন। ‘
অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকে ব্যাপক আকারে প্রসারের জন্য প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি খাত সংশ্লিষ্টদের।
এইবাংলা/তুহিন