22 C
Dhaka
Friday, February 14, 2025
More

    চসিকের এলইডি প্রকল্পে আবারও অনিয়মের রাস্তা

    আরও পড়ুন

    ::: অপু ইব্রাহিম :::

    চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৬০ কোটি টাকার এলইডি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের চার বছর পার করেছে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে। প্রকল্পটির দরপত্রে স্থানীয় উপ ঠিকাদার হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদার আফতাব আহমেদের মালিকানাধীন এইচটিএমএস লিমিটেড ও আফতার আহমেদের অংশীদার ট্রেড ম্যাজিস্ট্রিডকে প্রকল্পের কাজ দিতে মরিয়া পিডি প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ। গণমাধ্যম সরব হবার পর উপ ঠিকাদার পাল্টে ডুকানো হয় নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ইতিপূর্বে সরকারি ক্রয়বিধব (পিপিআর) লঙ্ঘনের কারনে দরপত্রটি রি টেন্ডার করার জন্য পিপিআর এক্সপার্ট প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানী পরামর্শ দিলেও ; মুল্যায়নের পথেই হেঁটেছে চসিক।

    ক্রুটিপুর্ণ মুল্যায়নের অভিযোগ উঠার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ মুল্যায়নের রেজুলেশন শিট ছাড়াই আর্থিক প্রস্তাবনা খোলার অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেন মন্ত্রণালয়ে। মুল্যায়ন কমিটির সাত সদস্যর মধ্যে দুইজন বহি: সদস্য প্রশ্নবিদ্ধ মুল্যায়নের রেজুলেশন শিটে স্বাক্ষর করতে রাজি হন নি। পিপিআর রুলস অনুযায়ী মুল্যায়নের নাম্বার শিটে সকল সদস্যের স্বাক্ষরসহ রেজুলেশন তৈরি বাধ্যতামূলক। প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ নিজের পছন্দের দুটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেবার জন্য দরপত্রের শুরু থেকে ডিপিপি পরিবর্তন, এলটিএম টেন্ডারে উপ ঠিকাদারের যোগ্যতার শর্ত পরিবর্তন করেছিলেন। সেই মুল্যায়নে নাম্বারের দিকে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রাখা হয় পিডির পছন্দের দুই ভারতীয় প্রতিষ্ঠান শাপুর্জি পালনজি লিমিটেড ( এসপিসিএল) ও এনার্জি ইফিশিয়ানসি লিমিটেডকে (ইএসএল) । এরমধ্যে এসপিসিএল ভারতের বিহার রাজ্য সরকারের কালোতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান।

    ২০ শে মার্চ চসিকের এই এলইডি প্রকল্পের দরপত্রে আর্থিক প্রস্তাব খোলার অনুমোদন দিতে নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পিপিআরের নিয়ম অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ করা হয়েছে সেই চিঠিতে। কিন্তু রেজুলেশন তৈরি করা ছাড়া কিভাবে আর্থিক প্রস্তাবনা খোলা অনুমোদন চাওয়া হয়েছে চসিকের পক্ষ থেকে সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

    চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সূত্রে জানা গেছে, পুরো চট্টগ্রাম নগরকে আলোকিত করতে এলইডি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয় ২০১৯ সালে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চারবার। সর্বশেষ গেল বছরের মার্চে দরপত্র আহ্বান করলেও, দরপত্রের শর্তে বিভিন্ন ত্রুটি পাওয়া যায়। একারণে এলজিআরডির বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানী গত ২৮ মার্চ এই দরপত্রের নানা অসংগতির কথা তুলে ধরে পুনঃ দরপত্র আহ্বানের পরামর্শ দেন।

    প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ প্রকল্পটির সময় বিবেচনায় নিয়ে পুনরায় দরপত্র আহবান না করে মুল্যায়নের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচনের অনুমোদন সংগ্রহ করেন মন্ত্রণালয় থেকে। মুল্যায়নের নাম্বার সিটে নিম্মমানের চায়না বাতির ব্রান্ড ‘ওসরাম’ ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়ার পরও শাপুরজি পাহলানজি লিমিটেড ও স্থানীয় উপ ঠিকাদার এইচটিএমএস লিমিটেডকে পছন্দের শীর্ষে রাখতে জালিয়াতির আশ্রয় নিলে অংশ নেয়া ৩য় প্রতিষ্ঠান সিগনেফাই ইন্ডিয়া লিমিটেডের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার ডেসপান্ডে গেল বছরের আগস্ট মাসে লিখিত অভিযোগ জমা দেন বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসে। টানাহেঁচড়ার এক পর্যায়ে ইন্ডিয়ান এক্সিম ব্যাংক দরপত্রে অংশ নেয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানের কারিগরী প্রস্তাবকে রেসপনসিভ করার নির্দেশনা দেন। সুত্রমতে, সেই মুল্যায়নে বিশ্ববিখ্যাত এলইডি বাতির ব্রান্ড ফিলিপসকে ( সিগনেফাই ইন্ডিয়া লিমিটেড) ৪৭ নাম্বার দিয়ে অকৃতকার্য করেন স্বয়ং প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ। গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হবার পর মুল্যায়নে পছন্দের শীর্ষে রাখা এসপিসিএল’র স্থানীয় উপ ঠিকাদার এইচটিএমএস লিমিটেডের নাম সরিয়ে ভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত করেন প্রকল্প পরিচালক। দরপত্রের নথি জালিয়াতির নজিরবিহীন এই অনিয়মের পরও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি। উল্টো চসিকের অন্য একটি প্রকল্পের (আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প) পরিচালক হিসেবে যোগ দেয়া প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীর উপর হামলা করা করে প্রতিশোধ নেয়া হয়। হামলার নেপথ্য কারণ পিপিআর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানী এই এলইডি প্রকল্পটির পুনরায় দরপত্র আহবানের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

    একের পর এক অনিয়ম করে ছাড় পাবার কারণে নতুন করে মুল্যায়নের রেজুলেশন শিট ছাড়াই আর্থিক প্রস্তাবের খাম খোলার জন্য চোরা অনিয়মের রাস্তা তৈরি করেছেন প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ। এবিষয়ে জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

    চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) প্রকল্পের দরপত্রে অনিয়ম, ডিপিপি পরিবর্তন, নিম্নমানের বাতির প্রস্তাবনা, কালোতালিকাভুক্ত টেন্ডার মাফিয়াকে কাজ পাইয়ে দেবার মতো অভিযোগ মাথায় নিয়ে দূর্নীতির বাঁকা পথেই হাঁটছে সংস্থাটি । নগরের ৪৬৬ কিলোমিটার সড়কে স্মার্ট এলইডি বাতি স্থাপনের প্রকল্পটি অনুমোদনের সাড়ে চার বছর পার করেছে। কিন্তু দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখনো ঠিকাদারই নিয়োগ করা যায় নি। সব অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে নি চসিক। ফলে সর্ষের ভেতরেই ভুত – এমন বিশেষনে মেয়রের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ করছেন সমালোচকরা।

    ভারতীয় সহজ ঋণের আওতায় ২৬০ কোটি টাকার আরও এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীতে এলইডি বাতি স্থাপনের প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে এক বছর ধরে। এই প্রকল্পে ঝুলন দাশের বিরুদ্ধে সরকারি ক্রয়বিধি অমান্য করা এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত ডিপিপি পরিবর্তনের অভিযোগ উঠলেও ; কোন ব্যবস্থা নেয় নি চসিক। ওই প্রকল্পটিও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে পুনঃদরপত্র দেওয়ার সুপারিশও করেছিল বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী। সেই সঙ্গে ঝুলন কুমার দাশকেও প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

    সুত্রমতে, প্রকল্পটির দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্চতা নিশ্চিত করতে না পারলে এই প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে যাবে ভারত সরকার। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে অবহিত করা হয়েছিলো ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালকের চেয়ার ধরে রেখে ২৬০ কোটি টাকার এলইডি বাতির এই প্রকল্পটি আঁধারে ডুবিয়েছেন প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ।

    এইবাংলা/হিমেল

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর