::: অপু ইব্রাহিম :::
বিভিন্ন দেশে থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা প্রবাসীদের এক হাজারের বেশি পন্যের চালান ‘খালাস বন্ধের’ ফাঁদে পড়েছে । লাইন চালু করতে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের কাছে চল্লিশ টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ উঠে। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর গেল বছরের নভেম্বরে বিভিন্ন সময়ে আসা ৭২ চালান পণ্য শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষ ছাড় দেওয়া হয়। সেইসময় প্রবাসীদের বৈধতা যাচাই ও বিভিন্ন দপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পণ্যের চালানগুলোর শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেয় এয়ারপোর্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরে একই পথেই হেঁটেছে কাস্টমস, আবারও বন্ধ কার্গো পণ্য খালাস।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাস পুরোপুরি থাকার বিষয়টি শিকার না করলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে প্রায় পাঁচ মাস ধরে কার্গো পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ। এর ফলে পণ্য খালাসে স্থবিরতা নেমে এসেছে।মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক কার্গো ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, কার্গো ব্যবসা বন্ধ থাকার কারণে বেকার হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসী শ্রমিক।
এদিকে, পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে সিএন্ডএফ এজেন্টসহ পণ্যের মালিক প্রবাসীরা। পণ্য খালাস করতে না পরায় বিমানবন্দরের ওয়্যার হাউজের জরিমানা গুনতে হচ্ছে সিএন্ডএফ এজেন্টদের। পণ্যের দামের চেয়ে ডেমারেজ ও শুল্ককর বেশি হওয়ায় এসব পণ্য প্রবাসীরা নিতে পা্রবেন কিনা সে বিষয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রবাসী ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতেই চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এনবিআরের কোন নির্দেশনা ছাড়াই বন্ধ রেখেছে কার্গো পন্য খালাস। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সব ধরনের ক্লিয়ারেন্স থাকলেও বিমানবন্দর কাস্টমস পণ্য স্ক্যান ও শতভাগ কায়িক পরীক্ষার করে পণ্য ছাড় বন্ধ রেখেছে গত পাঁচ মাস ধরে। একারণে শুধু প্রবাসীরাই ভোগান্তিতে পড়েনি শাহ আমানত বিমানবন্দর প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে ।
এদিকে, সব নিয়ম মেনে বিদেশ থেকে আসার সময় স্বজনদের উপহারের জন্য কিছু পণ্য আনার পর এসব পণ্য বিমানবন্দরে আটকে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দেশে ঈদ করতে আসা অসংখ্য প্রবাসী।সৌদি আরব থেকে দেশে আসা সরওয়ার কামাল জানান, তিনি রমজানের জন্য খেঁজুর এবং পারিবারিক ব্যবহারের ওভেন এনেছিলেন। রমজান মাস অর্ধেক শেষ ; কিন্তু পণ্য ছাড় করতে গেলে সিএনএফ প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে পণ্য খালাস বন্ধ। ‘
একই ধরেছেন অনুযোগের সুর প্রবাসী আব্দুস সামাদ, রহিম মিয়ার। তারাও পণ্য ছাড়িয়ে নেবার আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
তারা বলেন, বিদেশ থেকে দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠিয়েছি। দেশে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভে অবদান রেখেছি। বৈশ্বিক মন্দার মাঝেও রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছি। আর দেশে ঈদ করতে আসার পর এয়ারপোর্টে আমাদের কার্গো পণ্য আটকে দেওয়া হচ্ছে। ‘
সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় অজ্ঞাত কারণে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে কার্গো খালাস বন্ধ রেখেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ফলে বিদেশ থেকে ব্যাগেজ রোলের আওতায় পাঠানো পণ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না প্রবাসীরা। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে কার্গো খালাস পুরোপুরি বন্ধ থাকার কারণে অনেক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কয়েকদফা সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নেতারা কাস্টমস কমিশনারের সাথে কথা বলেও কার্গো পণ্য খালাস চালু করাতে পারেন নি।
সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্ছু বলেন, ‘ কেন বন্ধ সেটি কোন জবাব নেই। তবে কার্গো পন্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান হয় ; এই কারণে যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়ার মতো অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত তো নেয়া হয় না৷ যদি ব্যাগেজ দিয়ে কোন অভিযোগ থাকে তাহলে এয়ার কার্গোর পণ্য কায়িক পরীক্ষা করে ছাড় করবে কাস্টমস এটাই দায়িত্ব তাদের। ‘
এদিকে, কার্গো খালাস ও কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারেনি গার্মেন্টস মালিকরাও। জানা গেছে অনেক সময় বায়ারের পাঠানো সাম্পালসহ জরুরি কাঁচমাল কার্গো করা হয়। কিন্তু কার্গো খালাস বন্ধ থাকার কারণে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে পণ্য ছাড় করানো যাবে না – উপায়ন্তর না পেয়ে ঢাকা বিমান বন্দর ব্যবহার করছেন অধিকাংশ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। এতে সময় ও খরচ দুটিই বেড়েছে। ‘
জানতে চাইলে কাস্টমসের উপ কমিশনার শেখ মো. মাসুদুর রহমান জানান, ‘ চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে কার্গো পন্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে ঠিক না, তবে যাত্রীদের বৈধ কাগজপত্র যাচাই করতে সময় লাগছে। ঈদে দেশে ফেরা প্রবাসীদের ভোগান্তি লাঘব করতে কার্গো পণ্য খালাস করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ ‘
সুত্রমতে, দুবাই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কার্গো ব্যবসা সাথে জড়িতদের বিশেষ সুবিধা দিতে চায় কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তা। তাদের পছন্দের কার্গো ব্যবসায়ীদের হাতে ব্যবসাটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে। সুত্রমতে, দুবাইয়ে ফরিদপুর ও মাদারিপুর অঞ্চলের বেশকিছু ব্যবসায়ী কার্গো ব্যবসায় জড়িত। এই ব্যবসায় তাদের একছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে পাঁচ মাস ধরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট অবতরণ ও পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
এইবাংলা/হিমেল