চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ডঃ গোলাম ইয়াজদানির উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঠিকাদারদের আসামী করা হলেও ঘরের দ্বন্দে এমন ঘটনা ঘটেছে জানিয়েছেন নগর ভবনের একাধিক কর্মচারী। প্রকল্প পরিচালকের উপর হামলায় উর্ধতন মহলের পাশাপাশি চসিকের প্রতাপশালী প্রকৌশলীদের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সুত্র। চসিককান্ডে গঠিত তদন্ত কমিটিও সংস্থাটির আভ্যন্তরীণ কুটচালকে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রমতে, প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে আটক হওয়া চারজন আসামীর মধ্যে দুইজনই একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন। তাদের দাবি উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৯ টি লটের কাজ ঢাকার চারটি প্রতিষ্ঠানকে দেবার বিষয়টি চুড়ান্ত হয়ে গেছে এমন তথ্য তাদের কাছে পৌছে দেয় সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলী। প্রাক্কলন ব্যয় ফাঁস করার মাধ্যমে ইজিপিতে পয়েন্ট বেইসড পদ্ধতিতে দরপত্র মুল্যায়নে পরিস্থিতি সৃস্টি করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। পাঁচ বছরের গড় ও মোট কার্যাদেশসহ পয়েন্ট বেইজ পদ্ধতিতে দরপত্র মুল্যায়ন করা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ছোট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পাবার সম্ভাবন থাকবে না।
সুত্রমতে, স্থানীয় ঠিকাদারদের ক্ষুব্ধ করে তুলতে প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানির উপর ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির দায় চাপিয়েছেন প্রকৌশল বিভাগের অধিকাংশ প্রকৌশলী। চসিকের সব ঠিকাদারকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে। একাধিক সুত্রমতে, শেষ মুহুর্তে গোপনে সিডিউলের রেইট পরিবর্তন করে ( দরপত্র জমা দেবার আগে) সব ঠিকাদারদের দেয়া প্রস্তাবনা নন ‘রেসপনসিভ’ করা হয়েছে।কারন ইজিপিতে কোন দরপত্রে দশ শতাংশ বেশি কিংবা কম রেটকোড করা হলে দরপত্র নন রেসপনসিভ হয়ে যায়৷ এই কারনে ৯% শতাংশ বেশি মুল্যে দরপত্র জমা পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার রাস্তা পরিস্কার হয়ে যায়। গেল বছরের আগস্ট মাসে একটি কাজের দরপত্রে টেন্ডার বিক্রির এমন কুট প্রক্রিয়া চালু করে একই চক্র। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে চসিকে প্রেষণে নিয়োগ পাবার পর পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেবার এমন কুটকৌশল ধরে ফেলেন ডঃ গোলাম ইয়াজদানি। পরবর্তীতে উপ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন তড়িঘড়ি করে পুনঃ দরপত্র আহবান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। ১৯ শে সেপ্টেম্বর দৈনিক পত্রিকায় বাকলিয়ার সড়ক সংস্কারের দরপত্র পুনরায় আহবান করা হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, উপ প্রকল্প পরিচালক সেই টেন্ডার আহবান করার এখতিয়ারই রাখেন না। সেপ্টেম্বরের ১০/১১ তারিখ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি চসিকে তদন্ত করতে এসে এমন ক্রুটিপুর্ণ দরপত্র মুল্যায়নের নথি যাচাই করেন। দূর্নীতি ধামাচাপা দিতে একই সপ্তাহে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের পরামর্শ অনুযায়ী রি-টেন্ডার করে দেয়া হয় সেই লটের কাজটি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একাধিক ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা যায় কমিশনে কাজ বিক্রির বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। বিভিন্ন কাজের বিপরীতে কমিশনের টাকা অগ্রীম নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ইয়াজদানীর অনড় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত কাজ বিক্রির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এসব কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীরা।