27 C
Dhaka
Wednesday, February 12, 2025
More

    রোগী হত্যার অভিযোগে স্যানডর ডায়ালাইসিসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রুল জারী

    আরও পড়ুন

    ::নিজস্ব প্রতিবেদক ::

    চট্টগ্রামের  স্যানডরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডা: রেহনুমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ১০ জন বিবাদীর নিস্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না এবং ১২ জন বিবাদীর সকলকে কেন কারণ দর্শানের নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে মাননীয় আদালতের নির্দেশ পাওয়ার ৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের নীচতলায় অবস্থিত স্যানডর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের ডাক্তার রেহনুমার চিকিৎসাজনিত অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং মেডিকেল শিক্ষার চরম পরিপন্থী আচরণের কারণে গত বছরের ৫ই জুন সাফিয়া খানম নামের একজন ৬০ বছর বয়সী কিডনী রোগীর অসহায় মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে মাননীয় হাইকোর্ট বেঞ্চ স্যানডর ডায়ালাইসিস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনের প্রতি এই রুল জারী করেছেন।

    গত বছরের ৫ই জুন  কিডনী রোগী সাফিয়া খানম স্যানডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে ডায়ালাইসিস করাতে গেলে তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত অস্বস্থি দেখা দিলে উক্ত ডায়ালাইসিস সেন্টারের ডাক্তার রেহনুমা রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলেন এবং রোগীর শয্যা পাশে উপস্থিত স্বজনদেরকে রোগীকে অন্য কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। স্বজনদের তীব্র প্রতিবাদ সত্বেও তীব্র শ্বাস কষ্টে ভোগা একজন রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে চরম অমানবিক ও পৈশাচিকভাবে রোগীকে জোরপূর্বক হুইল চেয়ারে বসিয়ে ডায়ালাইসিস সেন্টার থেকে বের করে দিয়ে উক্ত ডাক্তার অপেশাদার সুলভ ও মেডিকেল শিক্ষার যে চরম পরিপন্থী আচরণ করেছেন তার কোন উদাহরণ সারা বিশ্বের চিকিৎসা সেবার ইতিহাসে নেই। উক্ত রোগীকে ডায়ালাইসিস সেন্টারের বাইরে বের করে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগী হুইল চেয়ারেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

    রোগীর স্বজনেরা রোগীকে দ্রুত কাতালগঞ্জস্থ পার্ক ভিউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্যানডর ডায়ালাইসিসের ডা: রেহনুমা ও তার সহযোগীদের এই স্বেচ্ছাচারিতা, হটকারিতা, অবহেলা , অডাক্তার সুলভ এবং মেডিকেল শিক্ষার চরম পরিপন্থী আচরণের কারণে এবং সাফিয়া খানমকে চিকিৎসা না দিয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়ে ডায়ালাইসিস সেন্টারের বাইরে জোর পূর্বক বের করে দেওয়ার মাধ্যমে সাফিয়া খানমকে ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে প্রকারান্তরে তাঁকে জেনে বুঝে হত্যা করার প্রতিকার ও বিচার চেয়ে নিহত সাফিয়া খানমের স্বামী  এম.এ. মাসুদ বাংলাদেশের মহমান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বরাবরে আবেদন করেন এবং গত ১৫ই জুন ২০২২ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন যা স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার লাভ করে।

    এই বিষয়ে তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগ এবং বিভাগীয় প্রধান, নেফ্রোলজী বিভাগ, চমেক হাসপাতালকে সভাপতি করে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তদন্ত হয়। কিন্তু এই দুই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ গত বছরের ২১ শে আগস্ট  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে সভাপতি, চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও নেফ্রোলজী বিভাগের প্রধানকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।

    এই তদন্ত কমিটি সাত দিনের স্থলে পাঁচ মাসে তদন্ত সম্পন্ন করে ১লা জানুয়ারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে প্রেরণ করেন। নিহতের স্বামী  এম.এ. মাসুদ তথ্য অধিকার আইনের ৩ ধারা মোতাবেক এই তদন্তের একটি কপি পাওয়ার জন্য তথ্য কমিশনের নির্ধারিত ফরমে তদন্ত কমিটির সভাপতির কাছে আবেদন করলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

    ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য নিহতের স্বামীর সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার উপক্রম হলে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট আবেদন দাখিল করেন। গত ২১শে মার্চ  হাইকোর্ট ডিভিশনের মাননীয় বিচারপতি কে.এম. কামরুল কাদের এবং মাননীয় বিচারপতি  মোহাম্মদ আলী সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানী করেন এবং স্বাস্থ্য সচিব, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা, পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম, পরিচালক-চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, প্রিন্সিপাল-চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চমেক হাসপাতালের নেফ্রোলজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, স্যানডর ডায়ালাইসিস কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডা: রেহনুমা বরাবরে রুলনিশি জারী করেন।

    মাননীয় আদালত স্যানডরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডা: রেহনুমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ১০ জন বিবাদীর নিস্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না এবং ১২ জন বিবাদীর সকলকে কেন কারণ দর্শানের নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে মাননীয় আদালতের নির্দেশ পাওয়ার ৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। মাননীয় আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট আদেশ প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও নির্দেশনা দিয়েছেন।

    রীট আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট জনাব সাজ্জাদুর রহমান এবং বিবাদীদের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এর্টনী জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী এটর্নী জেনারেল সর্বজনাব আশিক রুবায়েত, আওলাদ হোসেন, আশিকুল হক, মেহেদী হাসান ও জুলফিকার আখতার।

    এইবাংলা/হিমেল

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর