22 C
Dhaka
Thursday, February 13, 2025
More

    মাদক পাচারে ব্যবহৃত হচ্ছে সাংবাদিকরা

    আরও পড়ুন

    নাদিরা শিমু ::

    চট্টগ্রামে মাদকের বিস্তার কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে একটি শ্রেণীর প্রতারক সাংবাদিকতা পুঁজি করে জড়িয়ে পড়ছেন মাদক পাচারে। চট্টগ্রামে মাদকের একটি চালান আটকের পর বের হয়ে আসে সাকিব নামের এক গণমাধ্যমকর্মীর নাম। সাকিব চট্টগ্রাম ভিক্তিক একটি অনলাইন টিভির সাংবাদিক। 

    জানা যায়,  গত ৩০ জানুয়ারি র‌্যাব-৭ এর একটি অভিযানে পুলিশের টহল গাড়ির সামনে থেকেই মাদকের চালান আটক করা হয়েছে। 

    পতেঙ্গা থেকে প্রায় ৯ লক্ষ টাকার ১৭৯১ ক্যান বিয়ার উদ্ধারসহ দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।  মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি টি স্পীডবোট ও ১টি প্রাইভেটকার এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল জব্দ করা হয়। এসব মাদক উদ্ধারের পর মাদক পাচারের হোতা চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয়  অনলাইন চ্যানেলের সাংবাদিক সাইদুর রহমান সাকিবের (৩০) নাম প্রকাশ্যে আসে। 

     মাদক আটকের সময় প্রাইভেট কার মালিক নূরুল আবছার(৪০) তার গাড়ি ও মোবাইল ফোন ফেলে পালিয়ে যায় । সেই আলামত জব্দ করার পর সাংবাদিক সাকিবকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। 

    এ বিষয়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার জানান, খবর ছিলো মাদকব্যবসায়ী চক্র বিপুল পরিমান বিয়ার  স্পীডবোটে করে সাগর পথে চট্টগ্রামে আনছে।  চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থানাধীন চরপাড়া ঘাট এলাকায় স্পীডবোট থেকে একটি প্রাইভেটকারে স্থানান্তর করা হয় সেই মাদকের চালান। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে র‌্যাবের একটি দল পতেঙ্গায় অবস্থান নেয়।  র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে স্পীডবোট এবং প্রাইভেটকারের চালক কৌশলে পালানোর চেষ্টাকালে র‌্যাব সদস্যরা আসামী মোঃ রুহুল আমিনকে আটক করে (৩১), (পিতা-মৃত সায়েদুল হক, সাং-পুর্ব লক্ষীদিয়া, থানা-হাতিয়া, জেলা-নোয়াখালী)।  মোঃ নিজাম উদ্দিন(২৬) নামের আরেক যুবককেও আটক হয়। সে পতেঙ্গার বিজয়নগরের মৃত বাবুল হকের ছেলে।  ‘

     জানা যায়, পালিয়ে যাওয়া আসামিদের মধ্যে সাকিব একটি অনলাইন টিভির সাংবাদিক। একটি বেসরকারি টেলিভিশনেও সেই কাজ করেছে এরআগে। সে চট্টগ্রামের  পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। 

     ঘটনাস্থল থেকে পলাতক হিসেবে মোঃ নূরুল আবছার প্রকাশ আবছার (প্রাইভেট কার মালিক), (৪০)-  সাইদুর রহমান সাকিবের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার নথি অনুযায়ী সাকিব উত্তর পতেঙ্গার  মোঃ ইউনুসের ছেলে৷ 

    র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশী করে তাদের হেফাজতে থাকা স্পীডবোর্ড এবং প্রাইভেটকার থেকে ১৫টি সাদা প্লাষ্টিকের বস্তার ভিতর হতে মোট ১৭৯১ ক্যান বিয়ার উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয় এবং মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত স্পীডবোর্ড ও প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।

     র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, ‘ গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা পরস্পরের যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ চোরাচালানের মাধ্যমে সাগরপথে মায়ানমার হতে আমদানি নিষিদ্ধ মদ ও বিয়ার সংগ্রহ করে তাদের বাড়িতে মজুদ করত এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীদের কাছে চড়া দামে  বিক্রি করত। ‘

    এই ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাদক পরিবহনের সময় ঘটনাস্থলে পতেঙ্গা থানা পুলিশের একটি টহল গাড়ি উপস্থিত থাকলেও অজ্ঞাত কারনে তারা মাদক উদ্ধার তৎপর হন নি। এসময় র‍্যাব সদস্যরা উপস্থিত হয়ে মাদকের চালানসহ দুইজনকে আটক করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, র‍্যাব সদস্যরা এলে পুলিশের ইশারাতেই গাড়ির চালকের আসনে থাকা  কথিত সাংবাদিক সাইদুর রহমান সাকিব (৩০) ও প্রাইভেট কার মালিক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

    পুলিশের ইশারাতেই গাড়ির চালকের আসনে থাকা কথিত সাংবাদিক সাইদুর রহমান সাকিব (৩০) ও প্রাইভেট কার মালিক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

    এবিষয়ে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো. নাজমুন নুর বলেন, এই ঘটনায় দুইজন ঘটনাস্থল হতে আটক হয়েছে, এবং এজাহারভুক্ত অন্য দুই ২ জন পলাতক আসামিকে ধরার জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

    সুত্রমতে, কক্সবাজার জেলায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আটজন প্রতিনিধি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। কক্সবাজারের গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমের ঢাকা কার্যালয় থেকে পরিচয় পত্র কিনে সাংবাদিক সেজে মাদক পাচারের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা অবাধে বিচরন করছে জেলা জুড়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে মাদক ব্যবসায়ীরা অসাধু সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে।

    একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, শহিদ নামের এক ব্যক্তি কুমিল্লা থেকে মাদকসহ আটক হয়েছিল। একই ব্যক্তি জেল থেকে বের হবার পর চকরিয়ায় বেসরকারি টেলিভিশনের উপজেলা প্রতিনিধির পরিচয় পত্র ব্যবহার করে মাদক ব্যবসা করছে৷ সুত্রমতে, সেই টেলিভিশনের তিনজন প্রতিনিধি কাজ করছে কক্সবাজার সদরে। একই টেলিভিশনের টেকনাফ প্রতিনিধি সম্পর্কে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। এভাবে সাংবাদিকতায় পরিচয় পত্র কিনে মাদক ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সরকারী তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার সুপারিশ করে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর