18 C
Dhaka
Sunday, February 16, 2025
More

    ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ শেষ হলো দায়মুক্তি দিয়ে

    সাবেক মন্ত্রীপুত্রসহ, পাঁচ কর্মকর্তাকে দায়মুক্তি

    আরও পড়ুন

    ::: ওয়াহিদ জামান :::

    কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির একঝাঁক দূর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা কর্মচারী আর সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানের অনিয়ম দূর্নীতির দায়মুক্তি দিতে নজিরবিহীন ‘তদন্ত প্রতিবেদন ‘ ‘এফআরটি ‘ অনুমোদন দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন। ক্রুটিপুর্ণ ও দূর্নীতিবাজদের দায়মুক্তির অভিলাষী সেই তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে চট্টগ্রামের সিনিয়র যুগ্ম জর্জ আদালতে। ২৯ মে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ সহকারী পরিচালক আতিকুল আলম এফআরটি গ্রহনের জন্য ( ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু)  অনুসন্ধানের সেসব ক্রুটিপুর্ণ  নথি উপস্থাপন করেছেন। এমনকি মামলা রুজুকারীর ( শরীফ উদ্দিন) বর্তমান ঠিকানা বা কর্মস্থলই উল্লেখ করা হয় নি নথিতে।

    এরআগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘অবৈধ গ্যাস সংযোগ’ সংক্রান্ত  মামলাটির সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য (এফআরটি) বলে অনুমোদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন । পরে গত ২০ মার্চ দুদক সচিব কেজিডিসিএলের ওই ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি  ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেয়।

    অবৈধভাবে ২২টি গ্যাসের চুলা স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে সংযোগ দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ১২ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানের  বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এই তদন্তকারী কর্মকর্তা স্পষ্ট দূর্নীতির তথ্য প্রমাণ আড়াল করে ফিরেছেন খালি হাতে। তদন্ত প্রতিবেদনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, দায়ী ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দেবার ছক কষেছে সংস্থাটি । এফআরটি (চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য) দাখিলের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন চাঞ্চল্যকর এই দূর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনাকে। জালিয়াতির মাধ্যমে  কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির আবাসিক  সংযোগ স্থানান্তরের  চাঞ্চল্যকর এই দূর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ পরিচালক আতিকুল আলমের  প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে মিলেছে তথ্যগত বিভ্রান্তির কূটকৌশল ।

    কেজিডিসিএলের ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা সংস্থাটির সাবেক উপ সহকারীপরিচালক শরিফ উদ্দিন অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, দায়ী গ্রাহকের স্বীকারোক্তির মতো অকাট্য প্রমাণ রেখে যেখানে অনুসন্ধান  শেষ করেছিলেন ; সেখান থেকেই উল্টোপথে হেঁটেছেন একই সংস্থার আরেক কর্মকর্তা।  নুরজাহান সালামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিনি ১৮ টি গ্যাস সংযোগ নিয়েছিলেন। এরমধ্যে ছয়টি নিজে ব্যবহার করতেন। বাকি বারোটি সংযোগ তার প্রয়োজন না হওয়ায়  বিল বইয়ের মাধ্যমে কেজিডিসিএল’র কাছে হস্তান্তর করেন। সেই সংযোগই জালিয়াতির মাধ্যমে  কেজিডিসিএলের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্থানান্তর করা হয়েছে  সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানের মালিকানাধীন ভবনে। কোন গ্যাস সংযোগ স্থানান্তরের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা না হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তার চোখে এটি নির্দোষ অপরাধ হিসেবে ঠেকেছে। সংযোগ স্থানান্তরের  নিয়ম অনুযায়ী : নুরজাহান সালাম’ নিজের মালিকানাধীন ভিন্ন কোন জায়গায় স্থানান্তর করার আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু অবৈধ এসব সংযোগ অভিযান চালিয়ে বন্ধ করার আগে  চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় নুরজাহান সালামের কোন প্লট বা ফ্লাট নেই সেটিও তিনি জানিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তাকে। গ্যাস সংযোগগুলো হস্তান্তরের জন্য তৈরি করা হলফনামায় স্বাক্ষরও ছিলো জাল।

    তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী,  গ্রাহক নূরজাহান সালামের নামে ভুয়া স্বাক্ষর প্রদান করে কেজিডিসিএল-এর চুলা হস্তান্তরের ভুয়া আবেদন ও সম্পাদনের পর তা সঠিক ও সত্য হিসেবে ব্যবহার করে তার নামের ১২টি দ্বৈত চুলা আসামি গ্রাহক মুজিবুর রহমানের নামে ‘নতুন সংযোগ’ হিসেবে স্থানান্তরের অনুমোদন দিয়ে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ সংঘটিত হয়েছে।

    তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি  ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, উন্নয়ন-২ অধিশাখার ২০১৪ সালের ৫ আগস্টের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক, গ্যাস বিপণন নীতিমালা (গৃহস্থালি)-২০১৪ এর বিধি ৯.৩ (১) (২) (৩) অনুযায়ী, কোনো গ্রাহকের বরাদ্দকৃত গ্যাস লোড অন্য কোনো গ্রাহকের নিকট হস্তান্তর করা যাবে না, মর্মে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও উক্ত গ্যাস সংযোগে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যহার করে নিজে লাভবান হয়ে বা অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে।

    কেজিডিসিএলের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে গ্যাস সংযোগ নিয়ে  সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানের এমন জালিয়াতি হাতেনাতে ধরা পরার পর ২২ টি ( দ্বৈত চুলা) সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল৷ এসব সংযোগ নেয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারী। সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২০২১ সালের ১১ই জুন অবৈধ ২২ টি গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন ; এসব সংযোগও এখন পর্যন্ত  বিচ্ছিন্ন রয়েছে ।

    কিন্তু সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন চাকরি হারানোর পর এই মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা  এফআরটির (ফাইনাল রিপোর্ট থ্রু) অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিলে দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক (তদন্ত) এফআরটির অনুমোদন দেন। ২০ শে মার্চ আদালতে উপস্থাপন করা এফআরটির অনুমোদনের নথি অনুযায়ী পূর্বের তদন্তকারী কর্মকর্তারা কেজিসিডিএল এর কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে এসব অবৈধ সংযোগ নেবার বিষয়টি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

    তবুও ‘পাঁচটি কারণ’ দেখিয়ে অভিযুক্তদের দুর্নীতির দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুদক। সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমান এবং কেজিডিসিএল’এর দুর্নীতিবাজ চক্রকে বাঁচাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা যেসব যুক্তি দেখিয়েছেন তা নতুন অনিয়মের উদাহরণ তৈরি করেছে৷ মামলা থেকে অব্যাহত পাওয়া পাঁচ জন হলেন- মুজিবুর রহমান ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ার ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত দক্ষিণ জোনের টেকনিশিয়ান (সার্ভেয়ার) মো. দিদারুল আলম, ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও গ্রাহক মুজিবুর রহমান।

    নথি অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন অন্য গ্রাহকের অবৈধ ১২ গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও ব্যবহারের কারণে রাস্ট্রের কোন আর্থিক ক্ষতি সংঘটিত হয় নি। এছাড়া গ্রাহক  ‘নুরজাহান সালাম’ কোন অভিযোগ করেন নি। অথচ অবৈধভাবে ১২ টি গ্যাস সংযোগ স্থানান্তরের পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিলো জালিয়াতি। নুরজাহান সালাম’ এই সংযোগটির প্রকৃত গ্রাহক নন। তার স্বামী আব্দুস সালামের নামে এই গ্যাস সংযোগ ( গ্রাহক সংকেত : ১ ডি-১৬- ২২৯৮)।  দুদক কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিনকে   নুরজাহান সালাম জানিয়েছিলেন তিনি গ্যাস সংযোগ স্থানান্তরের কোন আবেদনই করেন নি । গ্যাস সংযোগ তিনিই ব্যবহার করছেন।

    আতিকুল আলমের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেও মিলেছে নানা অসঙ্গতি। প্রতিবেদনে প্রকৃত  গ্রাহক দেখানো হয়েছে নুরজাহান সালামকে। অথচ দাপ্তরিক কাগজে  সুংযোগগুলো প্রকৃত মালিক  নুরজাহানের স্বামী আব্দুস সালাম।

    কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারাই এমন অবৈধ স্থানান্তরের জন্য দায়ী। দায়ী সংযোগ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গ্যাস সংযোগ  গ্রহনকারী মন্ত্রীপুত্রও। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা  এমন বেআইনি কাজের পেছনে ( সংযোগ স্থানান্তর) ভুক্তভোগীর ব্যক্তির ( নুরজাহান) অভিযোগের খোঁজ করেছেন। যুক্তি উপস্থাপন  করেছেন জালিয়াতির মাধ্যমে স্থানান্তর হওয়া এসব সংযোগের  প্রকৃত সুবিধাভোগী কোন অভিযোগ উপস্থাপন করেন নি।  স্পষ্ট জালিয়াতি প্রমাণ হবার পরও   পুন: তদন্ত প্রক্রিয়ায় অমুলক যুক্তি উপস্থাপন  করে দায়ী প্রভাবশালী মহলকে বাঁচিয়ে দেবার পথে হেঁটেছেন৷ আরেকজন কর্মকর্তার অনুসন্ধানে প্রমাণিত তথ্য পুন:তদন্তে ‘কূটব্যাখা’ দিয়ে আড়াল করার কারণে স্বচ্ছতার প্রশ্ন এসেছে সামনে।

    ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ সংগঠিত হবার ব্যাকরণ ব্যবহার করে অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেওয়া সম্পর্কে  প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্যাস সংযোগ প্রদানে নির্ধারিত সকল সরকারি ফি পরিশোধ করা হয়েছে,  পরবর্তীতে সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, সরকারের কোনো আর্থিক ক্ষতিসাধিত হয় নি  এবং ওইসব সংযোগ হস্তান্তরে আসামিগণ কর্তৃক অবৈধ পারিতোষিক বা ঘুষ লেনদেনের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় মামলাটিতে কমিশনের আইন অনুবিভাগের মতামত-সাপেক্ষে এফআরটি (চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য) দাখিলের কথা বলা হয়েছে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০১৬ সালের পর থেকে অন্তত পঁচিশ হাজার গ্রাহক সংযোগ চেয়ে চট্টগ্রামের  কর্ণফুলী গ্যাসে টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আবাসিক ভবনে গ্যাস সংযোগের এমন সংকটে  জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য গ্রাহকের সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন  রাইজার ( ডি ৫১-৪৭১৫)  তোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানকে। সরকারি আদেশ অমান্য করে তিনি ফৌজদারি অপরাধ করলেও তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে ‘কৌশলী ছাড়’ দিয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রীপুত্রকে৷

    তদন্তকারী কর্মকর্তা আতিকুল আলম মুল আসামিদের ছাড় দেবার পাশাপাশি চুলা হস্তান্তরে দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগ এনে কর্ণফুলী গ্যাসের ১২ কর্মকর্তা  কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা  (ডিপি) নেবার সুপারিশ করেছেন। অথচ তাদের মধ্যে চারজনই বর্তমানে চাকরি থেকে অবসরে চলে গেছেন। আরেকজন কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার কর্ণফুলী গ্যাসে প্লান্ট সার্ভেয়ার হিসেবে (বিক্রয় উত্তর জোন ১, ষোলশহরে)  কখনো চাকরিতেই ছিলেন না।

    অনুসন্ধানের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবার সুপারিশের তালিকায় থাকা কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির  সাবেক উপ মহা ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো: সরওয়ার হোসেন বর্তমানে অবসরে। কর্ণফুলী গ্যাসের আরেক উপ প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলামও গেছেন অবসরে। আরেক কর্মকর্তা কর্ণফুলী গ্যাসের পিএমইসি (দক্ষিণ) বিতরণ বিভাগের উপ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মুবিনুল আলমও আছেন অবসরে। আরেক বিক্রয় সহকারী মানজুর মান্নানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হলেও, অবসরে যাবার কারনে তিনিও বর্তমানে কর্মরত নেই প্রতিষ্ঠানটিতে। যারা বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরিতেই নেই তাদের বিরুদ্ধে ‘কাল্পনিক  বিভাগীয় ব্যবস্থা ‘ গ্রহনের সুপারিশ করে অভিযুক্তদের দায়মুক্তির দেবার মনোবাসনা পরিস্কার করেছেন এই তদন্ত কর্মকর্তা।

    অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং অভিযুক্তদের তিনজন চারমাসের বেশিসময়  কারাবাস – চুড়ান্ত শাস্তির ব্যবস্থা ; এভাবেই কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির এমন দিনদুপুরে ঘটা দূর্নীতির সুরাহ হতে পারতো। কিন্তু ২২ টি  অবৈধ গ্যাস সংযোগের (১২ টি স্থানান্তর) মধ্যে দশটি নতুন গ্যাস সংযোগ নেয়ার অপরাধটি উপেক্ষা করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাল কাগজ সৃজন করে  অবৈধ সংযোগ নেয়া হয়েছে বলেই (যখন আবাসিক খাতে সংযোগ বন্ধ) তো মামলা দায়ের করা হয়েছিলো৷ অবৈধ ২২ টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো।  সংযোগগুলো বর্তমানে বিচ্ছিন্নও রয়েছে। এই অবস্থায় ‘ প্রমাণের ধুয়ো তুলে অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেয়া আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একইসাথে জাল কাগজ তৈরি করে এমন অবৈধ সংযোগ স্থানান্তরে ও নতুন সংযোগ নিতে মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমান  ঘুষ লেনদেন করেছেন কিনা সেটিও মুখ্য বিষয় নয়। এমন অবৈধ কাজে রাষ্ট্রের  আর্থিক ক্ষতি হলো কিনা সেটিও মুখ্য বিষয় হবার কথা নয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে আর্থিক  ক্ষতি নিরুপনের মতো অবান্তর যুক্তি সংযুক্ত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

    জব্দ তালিকায় থাকা মামলার চার স্বাক্ষী,  মামলা রুজুকারী, এমন কি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী- কারও বক্তব্যই নেয়া হয় নি তদন্তে। তদন্ত  প্রতিবেদনে  সাক্ষ্য হিসেবে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে  প্রকাশিত সংবাদের সুত্রও যোগ যেত। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আতিকুল আলম অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিতেই যেন লুকোচুরি করে তদন্ত করেছেন।  উল্লেখ করা হয় নি দিনদুপুরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সেই ঘটনা এবং মন্ত্রীপুত্রের অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার প্রক্রিয়া।

    এছাড়া, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির  ব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন ক্ষমতার অপব্যবহার বা অপরাধ খুঁজে পাওয়া যায় নি। অথচ শাখা প্রধান হিসেবে নতুন সংযোগ,   ‘রাইজার’ উত্তোলনের সাথে তিনি সরাসরি জড়িত। নতুন সংযোগ অনুমোদন সংক্রান্ত তথ্য  তার কাছেই থাকার কথা।

    বিশ্লেষকরা বলছেন,  দুদকের সাবেক উপ সহকারী পরিচালক (চাকরিচ্যুত) শরিফ উদ্দিনের চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেবার দুইসপ্তাহের মধ্যে যে দুর্নীতিবাজ চক্র সরকারি চাকরি থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ( শরীফ) বের করে দেবার মতো দুরূহ কান্ড একতুড়িতে সম্পন্ন করেছেন – তাদের শেকড় অনেকখানি গভীরে। ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ সংগঠিত হবার পরও অভিযুক্তদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে দুর্নীতির শিকড় এবং ডালপাতা কতখানি গভীরে সেটিই প্রমাণ করে ছেড়েছে দুর্নীতিদমনের সংস্থা ‘ দুদক ‘।

    এইবাংলা/ইডি/ রবিন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর