::: রাহাত আহমেদ :::
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী বিভাগ সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেবার পর থেকে সারাদেশে কথিত ক্রস ফায়ার বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিলো।নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য কুটনৈতিক দৌড়ঝাঁপও কম হয় নি। তবে সম্প্রতি র্যাব হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠার পর পুরোনো ক্ষত আবারও জেগে উঠার সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার রাজশাহী বিভাগের পরিচালক ( যুগ্ম সচিব) এনামুল হকের ফরমায়েশ পুরন করতে নওগাঁর পৌরসভার অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে (৪৫) তুলে এনেছিলা র্যাব। এর দুই ঘন্টার মধ্যেই সেই নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। পরদিন সকালে সেখানেই মারা যান তিনি। অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পে নির্যাতনের কারণে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে; অভিযোগের তীর স্থানীয় সরকার রাজশাহী বিভাগের পরিচালক ( যুগ্ম সচিব) এনামুল হকের দিকেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হকের সাথে জেসমিনের পূর্ব পরিচয় ছিলো। ফেসবুক একাউন্ট খুলে প্রতারণা করার অভিযোগে এনে জেসমিনকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিলেন এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা । কিন্তু র্যাব কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেসাবাদে খেই হারিয়ে ফেলেন জেসমিন।
এদিকে, র্যাবের কাছে ডিজিটাল নিরাপত্তা ইস্যুতে অভিযোগ করার পরপরই ওই মহিলাকে তুলে নেবার বিষয়টি পরিস্কার করেনি সংস্থাটি। বলা হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হক দাপ্তরিক কাজে রাজশাহী থেকে নওগাঁ যাচ্ছিলেন। পথে দেখা পান র্যাবের একটি টহল দলের। তিনি নিজের একটি সমস্যার কথা টহল দলের ইনচার্জকে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে র্যাব অভিযান চালিয়ে এক নারীকে আটক করে। সেই নারীই হলেন নওগাঁর একটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিন।
র্যাবের হাতে আটকের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে সুলতানা জেসমিনকে প্রথমে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল হক। সুলতানা জেসমিন তখন অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউতে। পরদিন শুক্রবার তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও তার বিরুদ্ধে কখনো কোন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ মেলেনি। মামলার এজাহারে অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হক ‘জেসমিনের’ বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনিসহ কয়েকজন বাদীর পরিচয় ও পদবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলেন। এরপর চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু জেসমিনের সহকর্মীদের সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে যে ধারনা পাওয়া গেছে তার সাথে এনামুল হকের করা অভিযোগের কোন মিল নেই। ফেসবুক ও কম্পিউটার ব্যবহারে ততটা পারদর্শী ছিলেন না অফিসের সহকারী জেসমিন। জেসমিনের মামা নাজমুল হক বলেন, তাঁর ভাগনি মোবাইল ও কম্পিউটার ঠিকমতো ব্যবহারই করতে পারতেন না। এ জন্য অফিসের সহকর্মীদের কাছে তাঁকে কথা শুনতে হতো। তাঁর যে জীবনাচরণ ছিল, তাতে অন্যের নামে ফেসবুক আইডি খুলে প্রতারণা করা অসম্ভব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেসমিনের (৩৮) বাড়ি নওগাঁ সদরের হাজি মনসুর রোডে। এ মামলায় জেসমিন ছাড়াও মো. আল আমিন (৩২) নামের একজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচরে। আল আমিন সম্পর্কে সুলতানা জেসমিনের স্বজনেরা বলছেন, এই নামের কারও সঙ্গে সুলতানার পরিচয় ছিল, এটা তাঁদের জানা নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সেই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনকেও আসামি করা হয়েছে।
নওগাঁ সদর থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসান জানান, ‘ তাঁরা জেসমিনের বিরুদ্ধে এর আগের কোনো মামলার তথ্য পাননি। তিনি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন কিনা, কতটুকু দক্ষ সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। ‘
এদিকে, র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এছাড়া র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।এ বিষয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর সোমবার (২৭ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।