::: নিজস্ব প্রতিবেদক :::
আলিফ ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে স্থপতি ইমতিয়াজের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো একটি সমকামী চক্রের। তাদের হাতেই রাজধানীর তেজগাঁওয়ের স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া (৪৭) হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মিল্লাত হোসেন মুন্না, আনোয়ার হোসেন এবং মেঘ (তৃতীয় লিঙ্গ)। এই ঘটনায় জড়িত আরও দুইজনকে খুঁজছে পুলিশ।
রোববার সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যার পর মরদেহ বহনে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার (রেজি: নং-ঢাকা মেট্রো-গ-১১-১৯৪৪) জব্দ করা হয়।
ডিবি বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সমকামী চক্রের সদস্য। একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে স্থপতি ইমতিয়াজের সঙ্গে পরিচয় হয় চক্রটির। তারাই ইমতিয়াজকে একটি বাসায় ডেকে নিয়ে আপত্তিকর বিভিন্ন ছবি তোলেন। এসব ছবি দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলে টাকার জন্য ব্লাকমেইল করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইমতিয়াজকে ব্যাপক মারধরের একপর্যায়ে তিনি মারা যান।
গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের ডিসি উপকমিশনার গোলাম সবুর বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য। তারা একটি গে চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে আগে থেকে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে টার্গেট করে রুম ডেটের কথা বলে বাসায় ডেকে নেন। এভাবে বিভিন্ন কায়দায় ব্ল্যাকমেইল করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতেন। নিহত স্থপতি ইমতিয়াজের সঙ্গে আসামি আলিফের গে চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি হয়। তারই সূত্র ধরে গত ৭ মার্চ দুপুরে আলিফকে ফোন করেন ইমতিয়াজ। আলিফ তাকে কলাবাগান থানার ক্রিসেন্ট রোডের আরাফাতের বাসায় যেতে বলেন। ওই বাসার একটি রুমে ইমতিয়াজ ও আলিফ আপত্তিকর অবস্থায় থাকাকালীন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার প্রবেশ করেন। তারা ওই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইমতিয়াজকে মারধর শুরু করেন। এরপর তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন।
ডিসি বলেন, ইমতিয়াজ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার বুকে, পিঠে প্রচণ্ড মারধর করেন আসামিরা। যার কারণে ইমতিয়াজের মৃত্যু হয়। ইমতিয়াজের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা পরিকল্পনা করে কৌশলে বাসা থেকে ইমতিয়াজের মরদেহ বের করে গ্রেফতার মেঘের প্রাইভেটকারে তোলেন। তারা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানা এলাকার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোপে ফেলে দেন মরদেহ। পরে আলিফকে বাসাবো, আনোয়ারকে গ্রিনরোড নামিয়ে দিয়ে আরাফাত, মেঘ ও মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান।
উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম সবুর বলেন, ভারতে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে আসামিরা ওই স্থান থেকে পালিয়ে পুনরায় অবৈধভাবে একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসে। এরপর ডিবি পুলিশের অভিযানে ইমতিয়াজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত মিল্লাত হোসেন মুন্না, আনোয়ার হোসেন ও এহসান ওরফে মেঘকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবির তেজগাঁও বিভাগের নেতৃত্বে টানা অপারেশনে মেঘ, আনোয়ার ও মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়। তবে ঘটনায় জড়িত আরাফত আর আলিফ নামের আরও দুইজন পালিয়ে গেছেন ভারতে। তাদের ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, চক্রটি এভাবে সমকামী ডেটিং অ্যাপের ফাঁদে ফেলে বহু মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গত ৭ মার্চ দুপুরে কলাবাগান ক্রিসেন্ট রোড এলাকা থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূইয়া নিখোঁজ হন। পরদিন তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের চিত্রকোট কামারকান্দা সেতু এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৯ মার্চ পুলিশ মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুলে হস্তান্তর করে। এরপর বেওয়ারিশ হিসেবে মুন্সিগঞ্জ পৌর এলাকার কবরস্থানে ওই মরদেহ দাফন করা হয়। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে কবর থেকে তোলার পর তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার ও স্বজনেরা মরদেহটি ইমতিয়াজের বলে শনাক্ত করেন।
এইবাংলা/কামরুল