::: নাদিরা শিমু :::
রমজানের প্রথম তিন দিনে বাজারে তরি তরকারিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগন্জে অভিযান চালিয়েও মিলছে না সুফল। খুচরা বাজারে পণ্যের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে রাখার কোন উপায় নেই।
ইফতারির জন্য বহুল প্রচলিত খাবার বেগুনির উপাদান বেগুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসার দামও দ্বিগুণ বেড়ে দেশি শসা ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শরবত তৈরির প্রধান উপকরণ লেবুর দামও বেড়ে রেকর্ড ছুঁয়েছে। বড় লেবু ১০০ টাকা, মাঝারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং ছোট লেবু ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালি। গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, টমেটো ৬০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা। ধনেপাতার আঁটি ২০ থেকে ২৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গত সপ্তাহে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি। খোলা চিনি ১২০ টাকা কেজি। চিনির দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমালেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। খেজুর দামও গত সপ্তাহের তুলনায় মানভেদে দ্বিগুণ হয়েছে।
ইফতারে বহুল প্রচলিত বিভিন্ন কোম্পানির কৃত্রিম শরবতের পাউডারেরও দাম বেড়েছে। দাম কমেনি চিনির। রোজার আগের দিন বাজারগুলোতে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে, তার পরও অনেক দোকানেই মেলেনি চিনি। তবে ইফতারের নানা সামগ্রী তৈরির জন্য দরকারি আটা, ময়দা, বেসনের দাম বাড়তি দরেই ‘স্থিতিশীল’।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘ আমাদের জানা মতেও বাজারে পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু দাম সেভাবে কমেনি। যদিও চিনির দাম সামান্য কমেছে, কিন্তু সরবরাহ বাড়ায় যে হারে কমার কথা ছিল সে হারে কমেনি। খাতুনগঞ্জে কিন্তু পণ্যের কোনো অভাব নেই। তবে দাম কমছে না। দাম কমাতে সরকারি সংস্থাগুলোকে তৎপর হতে হবে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে গত বছরের ফেব্রয়ারি মাসে ১ কোটি ২৩ লাখ টন পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৮১৮ কোটি ডলার। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৫০৩ কোটি ডলারে। এ সময় আমদানি হয়েছে এক কোটি চার লাখ টন পণ্য। সেই হিসেবে ব্যয় কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ, আর পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেছে ১৫ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে থাকায় আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছিলো গেল বছরের নভেম্বর মাস থেকে।
শুধু আমদানি নির্ভর পণ্য নয় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লেবু, কলা, শসা, ধনিয়াপাতা, কাঁচামরিচের দামও ভাবাচ্ছে ক্রেতাদের । প্রতি ডজন কলা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে দুইশো টাকায়। গত সপ্তাহের অর্ধেক দামেই পার্বত্য অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা এসব কলা বিক্রি হয়েছিলো। বাজারে রমজানের কারণে মাছের দাম ও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। রমজানের প্রথম দিন থেকে আগুন লেগেছে মাছের দামেও৷ চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে রুই মাছের কেজি ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ১ হাজার টাকা, বড় সাইজের কাতল ৪৫০ টাকা, ইলিশ মাছ ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দুদিন আগেও এখানকার আড়তে শশা বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।রমজানের বাজারকে কেন্দ্র করে এটি ৮০ টাকার উপরে । একইসাথে সাদা বেগুন কৃষক পর্যায় ছুঁয়েছে ৬০ টাকা। রেয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লম্বা বেগুনের দাম ১০০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা কেজি, ধনেপাতা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, উস্তা ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাজির দেউড়ী, চকবাজার, বহদ্দারহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়,বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি ও লেবুর হালি ৪০টাকা থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা, গাজর ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, কলা ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা হালি ধরে বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের কাছে রমজান যেন দাম বৃদ্ধির ফাঁদ। সেই ফাঁদ থেকে নিয়মিত প্রশাসনের অভিযানও বাজারে স্বস্তি ফেরাতে পারছে না।