::: খান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ :::
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে ২৪টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের রেকর্ডে চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারে সবচেয়ে বড় অভিযান এটি।
শনিবার (২৫ মার্চ) দিনভর অভিযানে চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ ৫ জনকে চট্টগ্রাম বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন মিঠন ধর (২৯), মোঃ বাবর ওরফে বাবুল (৩৫), মোঃ শাহেদ (২৬), মোঃ রিপন (৪০), মোঃ খোরশেদ আলম (২৯)। এদের মধ্যে মিঠন ধর ও খোরশেদ আলম লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদের স্থায়ী বাসিন্দা। বাকি তিনজন সন্দ্বীপের।
রোববার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর বিষয়ে বিভিন্ন থানায় মামলাও হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে মামলা করেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।
গত ১৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে পার্ক করে রাখা অবস্থায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের মোটর সাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন তিনি।
এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় বইমেলা থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীমের মোটর সাইকেলও চুরি হয়।
পুলিশ জানিয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন অভিযানে শুধু সন্দ্বীপ থেকে ২৩টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় সহজেই তারা মোটর সাইকেলগুলো সেখানে নিয়ে যায় এবং মোটর সাইকেল দ্বীপের অন্যতম বাহন হওয়ায় সাধারণ লোকজনের কাছে কম দামে বিক্রি করে।
পুলিশের ভাষ্যমতে অন্যান্য মামলার পাশাপাশি এটির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ মিঠন ধরের সন্ধান পায়। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে এ চক্রের অন্য সদস্যদের সন্ধান মেলে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলেন, মূলত মিঠন ও খোরশেদ মিলে মোটর সাইকেল চুরি করে। সিসি ক্যামেরার ভিডিওর সূত্র ধরে শনিবার সকালে পুরাতন স্টেশন এলাকা থেকে মিঠন ও বাবরকে একটি মোটর সাইকেলসহ আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে মিঠন বিভিন্ন মোটর সাইকেল চুরির তথ্য দেয় এবং সেগুলোর অবস্থান জানায়।
অভিযানে থাকা কোতোয়ালি থানার এসআই মোমিনুল হাসান জানান, এ চক্রের সদস্য মিঠন ও খোরশেদ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। সুবিধাজনক স্থানে তালা ছাড়া মোটর সাইকেল দেখলেই সুযোগ বুঝে চালিয়ে তারা চলে যায়।
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিঠন জানিয়েছে, যেসব মোটর সাইকেল তারা চুরি করেন, সেগুলো বাবরের কাছে ১০/১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। হাতবদল হয় মূলত পুরাতন স্টেশন ও ফৌজদারহাট টোল রোড এলাকায়। আর বাবর ওইসব মোটর সাইকেল কুমিরা অথবা বাঁশবাড়িয়া ঘাট দিয়ে ট্রলারে করে সন্দ্বীপ নিয়ে শাহেদ, রিপনসহ অন্য আরও কয়েকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়।”
এসআই মোমিনুল জানান, সন্দ্বীপের আকবর হাট এলাকায় শাহেদের একটি মোটর সাইকেল গ্যারেজ আছে। তিনি বাবরের কাছ থেকে মোটর সাইকেল কিনে নিয়ে মেরামত করে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেন।
সন্দ্বীপ থেকে উদ্ধার করা ২৩ মোটর সাইকেলের মধ্যে ১১টি শাহেদের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসআই মোমিনুল বলেন, এ চক্রটি গত কয়েক বছরে এত বেশি মোটর সাইকেল চুরি করেছে যে তারাও সঠিক হিসাব দিতে পারেনি। এর আগেও মিঠন এবং বাবর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক করে মামলা আছে।
“বই মেলা থেকে সাংবাদিক শামীমের মোটর সাইকেল চুরির কথা স্বীকার করলেও সেটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তারা দিতে পারেনি।”
পুলিশ জানায়, এ চক্রটির মূল টার্গেট থাকে ১০০/১২০ সিসির মোটর সাইকেল। এর কারণে হিসেবে তারা পুলিশকে বলেছে, এসব মোটর সাইকেলের চাকায় তালা লাগানো না থাকলে তাদের কাছে থাকা চাবি দিয়ে খুব সহজেই চালু করতে পারেন। যার কারণে তারা সেগুলোকে ‘বাংলা বাইক’ বলেন।
এইবাংলা/হিমেল