20 C
Dhaka
Friday, February 14, 2025
More

    ‘ রাজউক দূর্নীতির কারখানা’ তথ্য দিতে মানা

    আরও পড়ুন

    ::: মেরিনা রেমি , ঢাকা :::

    বেশ কিছুদিন ধরে  রাজধানী উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষের দূর্নীতিবাজ  কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা অনিয়ম দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে । প্রতিদিনই গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে  রাজউক।  দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচার হলেও  দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীরা বহাল তবিয়তে আছেন।একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের ঘুষ, দুনীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে রাজউক।

    সরকারি দলের এমপিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং অবজ্ঞা, এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে এক প্রবাসীর প্লট বরাদ্দ দেয়ার মতো ঘটনা প্রকাশ হবার পর থেকে সারাদেশে আলোচিত সংস্থা  রাজউক।২০২১ সালে সরকারি দলের এক মহিলা এমপি এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন রাজউক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (এস্টেট)। এ ঘটনায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতিকে লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন মহিলা সংরক্ষিত আসন-১৬ এর এমপি হোসনে আরা ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবুল হোসেন খন্দকার।

    সাধারন মানুষের বলছে রাজউক কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা।  সচেতন মহল মনে করেন দূর্নীতি সাথে আপোষ করেই চলছে সংস্থাটি।  এসব বিষয় নিয়ে সঠিক তথ্য জানার জন্য রাজউক  চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হলে জানা গেলো  রাজউকে চালু হয়েছে নতুন নিয়ম। রাউজক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মৌখিক বা লিখিত কোনো মতামত গণমাধ্যমকে দিতে পারবেনা। ১৬ ই মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে  এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে  (স্মারক নং ২৫.৩৯.০০০০.০০৯.১৮.০০৩.২২)।  নির্দেশনা অনুযায়ী  রাউজক কর্মকর্তা ও কর্মচারী মৌখিক বা লিখিত কোনো মতামত গণমাধ্যমকে দিতে পারবেনা,  শুধু মাত্র পরিচালক ( জনসংযোগ ও প্রটোকল ) ছাড়া।

    রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়, যেখানে সাংবাদিক হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ -সবার জন্যই একই কথা, ‘ একটা লিখিত দিয়ে যান। আমরা আপনাকে ডাকবো এবং আপনাকে সব ধরনে তথ্য দেবো ।’ কর্মকর্তাদের পরামর্শ  মোতাবেক তথ্যের দরখাস্ত জমা দেওয়া হয়। কোন তথ্য তো আর মেলে না। সেই দপ্তরে এখন গণমাধ্যম এড়ানোর নতুন কৌশল।

    বিশ্লেষকদের মতে সরকারী যত দপ্তর আছে তার মধ্যে রাজউকে বেশি অনিয়ম দুর্নীতি হয়। সেবাদানকারী সংস্থা  রাজউক এখন দুর্নীতির আখড়া । যেখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন, দারোয়ন ও ঝাড়ুদার থেকে সবাই দুর্নীতি করে কোটিপতি বনেছেন । রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীদের একটি অংশ স্বল্প বেতনে চাকরি করেও এমন অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন এমন  তথ্যও রয়েছে দুদকের কাছে।বর্তমানে রাজধানী উন্নয়ণ কর্তৃকপক্ষের বেশকিছু দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে  সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের  নামের তালিকাও বের হয়েছে। সেই তালিকায় উল্লেখযোগ্য হলো রাজধানী উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষ (রাউজক) এস্টেট ও ভুমি-২ শাখার অফিস সহকারী,  কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগের কার্যকরী সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সবুজ, রাজউক জোন-৫ এর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও উচ্চমান সহকারী (অ.দা.) ফাতেমা বেগম মলি, জোন-৪ এর হিসাবরক্ষক মোফাজ্জল হোসেন ওরফে বিদ্যুৎ, জোন-৩ এর মহিউদ্দিন ওরফে মাস্টার, মহাখালী জোন-৩ এর অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে কালা জাহাঙ্গীর, নকশা শাখার অফিস সহকারী আব্দুল কাইয়ুম, কেরানী মোসারফ হোসেন স্কাই, পূর্বাচল প্রকল্পের কম্পিউটার অপারেটর গিয়াস উদ্দিন ওরফে পাঠান, নির্বাহী প্রকেীশলী খন্দকার ওহিদ সাদেক শুভ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো: জাহাঙ্গীর আলম ওরফে হিটলার, রেখাকার মো: শফিউল্লাহ বাবু ওরফে সল্টু, অফিস সহকারী কাম অপারেটর মো: মাহবুব রহমান।

    ডিবির সূত্র মতে, রাজউকের প্লট জালিয়াতির অভিযোগে ১৬ ডিসেম্বর ‘চক্রের হোতা’ সংস্থাটির অফিস সহকারী ও রাজউক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি জাফর সাদেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়। টানা দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি রাজউকের নথি গায়েব, প্লট ও নকশা জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দেন। কারা ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ বছর রাজউকের অ্যাস্টেট শাখায় কর্মরত থেকে জালিয়াতচক্রে সক্রিয়, সেই তথ্যও দিয়েছেন তিনি। ডিবি তথ্য পেয়েছে, এই শাখায় দীর্ঘদিন কাজ করেন গিয়াস, উজ্জ্বল, মাসুদ ও সার্ভেয়ার সাত্তার। চক্রের সদস্যদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মাসুদ রেকর্ডকিপার পদে কর্মরত থাকলেও তিনি মূলত ডিলিং অ্যাসিস্ট্যান্টের (ফাইলে প্রাথমিক নোট দেওয়া ও ফাইল ওঠানামা করানো) কাজ করেন। সেখানে তার প্রভাব রয়েছে।

    ২০১৯ সালে এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর খুব হৈচৈ হয়েছিল কারণ তখন ২৬ জন মানুষ মারা যান।  যাদের মৃত্যুর একমাত্র কারণ ছিল ভবনে অগ্নি নিরাপত্তার অভাব। তখনই চাউর হয় রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কাঁচ ঘেরা সুন্দর এই দালানখানিতে অগ্নি নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা ছিল না, এটা ছিল আসলে একটা মৃত্যুকূপ।নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ভবনটিতে কয়েকটি তলা বাড়ানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৫ জুন হুমায়ুন খাদেমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন দুদক কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক।

    অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন এবং নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলাবিশিষ্ট এফআর টাওয়ার নির্মাণ করেন। ১৯৯০ সালে ১৫ তলা ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদন পান এস এম এইচ আই ফারুক। পরে ১৯৯৬ সালে ১৮তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন চেয়ে সংশোধিত নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন তিনি।ঘটনার চার বছর গত হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।

    ইমারতের নকশা অনুমোদনে ৫০ হাজার থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে রাজউকের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের।  সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা রক্ষক থেকে ভক্ষকের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে। দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্যও  উঠে এসেছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন  দূর্নীতি অনিয়মের সেই কারখানায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতে নতুন করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়া নিয়ে কড়াকড়ি করা হলো।

    এইবাংলা/নাদিরা

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর