::: খান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ :::
রমজান মাসে বাড়তি পুষ্টির চাহিদা মেটাতে প্রতিটি পরিবারেরই বাজারের তালিকায় আপেল কমলা আঙ্গুরের মতো বিদেশি ফলের নাম যুক্ত থাকে। কিন্তু বৈশ্বিক সংকটে হাওয়া দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। যার কারণে আগের মতো ‘ বিদেশি ফল ‘ দৈনিক ইফতারের তালিকায় রাখবেন এমন পরিবারের সংখ্যা কমেছে অনেক। রমজানকে সামনে রেখে ফলের বাজারে যেন দামের আগুন লেগেছে।
চলমান ডলার সংকটে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার বিষয়ে নানা বিধিনিষেধের কারণে কমে গেছে ফল আমদানি। এই কারণে আমদানিকৃত ফলের দাম বেড়ে গেছে এবং আমদানিকারকরা সতর্ক করেছেন যে এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনে বাজারে ফলের সংকট তৈরি হতে পারে। আসন্ন রমজানে ফলের দাম আরো বাড়বে এমন বার্তাই দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়কালে ১৫৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ফল আমদানি করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। দেশে নিয়মিত আমদানি করা ফলের মধ্যে আপেল আসে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, চীন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে, ডালিম আসে ভারত থেকে, নাশপাতি আসে পাকিস্তান থেকে, কমলা আসে মিশর থেকে, মাল্টা আসে চীন ও ভারত থেকে, এবং আঙ্গুর আসে ভারত ও পাকিস্তান থেকে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত বছর লাল আপেল বিক্রি হতো ২১০-২২০ টাকায় এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩২০ টাকায়। সবুজ আপেল গতবছর ২৩০-২৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দাম ২৮০-২৯০ টাকা। ১২০-১৪০ টাকার কমলার দাম বেড়ে হয়েছে ২০০-২২০ টাকা, ১২০-১৩০ টাকার মাল্টার দাম এখন ২২০-২৩০ টাকা। একই ভাবে ৩০০-৩২০ টাকা কেজির ডালিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০-৪২০ টাকা। ২৮০-৩০০ টাকার আঙ্গুর হয়েছে ৪০০-৪৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ১৬ হাজার টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩১ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ৮০ হাজার টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬১ হাজার টন ফল আমদানি করা হয়েছে। অথচ গতবছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৯৩ হাজার ৩৭২ টন কমলা, আঙুর, ম্যান্ডারিন, নাশপাতি ও আপেল আমদানি হয়েছে। অপরদিকে ২০২১ সালে একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৬ টন।
খুচরা বিক্রেতা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ফল আসছে না বাজারে। আড়ত থেকে বাড়তি দামে ফল বের করতে হচ্ছে। সেকারণে দামও বেশি। ‘
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ডলারের ঘাটতির কারণে ফল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে ২০২২ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপ করে। পরবর্তীতে ফল আমদানিতে ঋণ সুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ২৪ মে এনবিআর অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্যের সঙ্গে সব ধরনের ফল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করে।
চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতি তৌহিদুল আলম বলেন, সরকার তো এটাকে বিলাসী পণ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, আমরা মনে করি এটা মানুষের শরীরের সুষম খাদ্য হিসেবে প্রয়োজন। এটাকে বিলাসী পণ্য না ধরে স্বাভাবিক পণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য, যাতে এলসিটা একটু ক্লিয়ার করে দেয়। আমরা আগে এলসি দিয়েছি ১০% মার্জিনে যা এলসি চেয়েছি তাই পেয়েছি। এখন এখন ১০০% মার্জিন দিয়ে এলসি করি। কিন্তু আগের তুলনায় ২০% এলসিও পাচ্ছি না। ‘
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশি ফল আমদানিতে সরকার নিরুৎসাহিত করায় চলতি বছর রমজান উপলক্ষে ফল আমদানি ৩০ শতাংশ কমে গেছে। দেশি ফলের উপর নির্ভর করে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিলেও দেশি ফলে রোজার চাহিদা মিটবে না বলে মনে করছেন ফল ব্যবসায়ীরা। উল্টো সরবরাহ সংকটে দেশি-বিদেশি ফলের দাম সমানতালে বাড়বে বলে শঙ্কা তাদের।
চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলী হোসেন মনে করেন, রমজানে ফলের দাম আরো বাড়তে পারে । পর্যাপ্ত এলসি খোলা সম্ভব হয় নি। একারণে চাহিদার মতো ফল আসে নি। ‘
চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ কেজি ফল বেচাকেনা থেকে প্রায় ২৮ কোটি টাকা আয় আসে ফল ব্যবসায়ীদের। রোজার সময় দৈনিক ফলের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় ৩৪ থেকে ৩৫ লাখ কেজিতে ঠেকবে। কিন্তু আমদানি কমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন থেকেই ফলের বাজার অস্থির হতে শুরু করেছে।
এইবাংলা / হিমেল