:: কুমিল্লা প্রতিনিধি :::
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পূর্ণ হল আজ। তনু হত্যাকাণ্ডের ৭ বছর পার হলেও খুনি শনাক্ত কিংবা হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এর অন্তরালে রহস্য এখনো উন্মোচন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তনু হত্যা মামলার মামলার তদন্ত ভার পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সিআইডির হাতে যায়। আলামত সংগ্রহের পর সিআইডি জানায়, হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে একই বছরের ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ার তথ্য জানায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। এছাড়া তনুর মায়ের সন্দেহ করা তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে ওই সময়ে তাদের নাম জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে তনুর মা বলেন, গরিব বলেই হয়তো মেয়ে হত্যার বিচার পাই না। গত কয়েক বছর পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার ঘটনাস্থলে আসতেন। আমাদের সঙ্গেও কথা বলতেন। সর্বশেষ দুই মাস আগে পিবিআইকে একবার ঘটনাস্থলে আসতে শুনেছি। তবে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, “জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছি, প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকি- এরই মধ্যে কয়েকবার হাসপাতালেও গেছি। প্রতি মুহূর্তে মনে হয় এই বুঝি মরে গেলাম। আমার বয়স হয়েছে, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে তনুর খুনিদের বিচারটা দেখে যেতে পারবো না। ”
২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তর করে সিআইডি। মামলার তদন্তে আছেন পিবিআই সদর দপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই জানিয়ে তনুর বাবা বলেন, “পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর ভেবেছিলাম হত্যার বিচার পাবো। কিন্তু পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই দুই বছরের বেশি সময় ধরে। মামলা কী অবস্থায় আছে সেটাও জানি না আমরা।“
এদিকে মামলার কাজ ‘এগিয়েছে’ জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, “মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে তদন্ত করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু অগ্রগতি আছে। তবে এখনই তা গণমাধ্যমে বলা ঠিক হবে না।“
তনুর পরিবারের অভিযোগ নিয়ে তার ভাষ্য, “আমি তদন্তভার নেওয়ার পর সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শক্রমে একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তনুর পরিবার, স্কুলের শিক্ষকসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্তে কোনো অবহেলা করছি না।“
তনু হত্যা প্রসঙ্গে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘ তনুর বিষয়ে তদন্তের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তবে আমরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি। ‘