::: তাফসীর আহমেদ :::
ডলার সংকট ভুগাচ্ছে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকদের। বছর শুরুতে ডলার সংকট কিছুটা কমার কথা বলা হলেও ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারছেন না আমদানিকারকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে রজমানকে গিয়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ে এলসি খুলতে পারেন নি।
রমজান মাসে পণ্য আমদানির এলসি খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এছাড়া রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডের ডলারের একটা অংশ যেন ছোলা, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও খেজুরের মতো পণ্য আমদানিতে খরচ করা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সে নির্দেশনাও দিয়েছিলেন গভর্নর। সোনালী ব্যাংকসহ টেকনাফের অধিকাংশ ব্যাংক এলসি খোলা বন্ধ রেখেছে।
সাধারনত রমজান মাসে ছয়টি আমদানি পণ্যের বিশেষ চাহিদা থাকে৷ সেগুলো হলো ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজ। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি- এই দুই মাস এবং তারপর রোজার এক মাসের চাহিদা অনুযায়ী ওই ছয়টি পণ্য আমদানিতে ১৫৩ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হয়। আর শুধু রোজার এক মাসের চাহিদা পূরণে এসব পণ্য আমদানিতে প্রয়োজন পড়ে ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে পারছে না, ফিরিয়ে দিচ্ছে। একারণে শেষ মুহুর্তে এলসি খুলতে না পারার কারণে রমজানের শুরুতে ভোগ্য পণ্য সংকটে পড়বে পাইকারী ব্যবসায়ীরা।
ডিসেম্বর থেকেই রমজানকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খোলা শুরু হলেও ডলার সংকটের কারণে নিত্যপণ্য আমদানি বিল পরিশোধে দেরি হচ্ছে। সেই সাথে এলসি খোলায়ও জটিলতা বেড়েছে। অক্টোবর-ডিসেম্বরে এলসি খোলার হারও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ চার মাসে অপরিশোধিত চিনির এলসি আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে রমজানে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। অন্যদিকে, এলসি স্বাভাবিক না হলে রমজান মাসে আদা-রসুনের বাজার আরও অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন খাতুনগন্জের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে হবে। একারণে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা লাভে আশায় মজুত করে রাখা হচ্ছে পণ্য। ইতোমধ্যে ছোলা, চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে সেই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে।
রমজান মাসে সংকটের আশঙ্কা জানিয়ে খাতুনগঞ্জের মেসার্স আর এন এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ বলেন, ‘ এলসি করার জন্য ডলারের সুবিধার কথা বলা হলেও বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই। এ রকম চলতে থাকলে রমজান মাসে সংকট তৈরি হবে।’
তবে খাতুনগন্জের ভোগ্যপণ্যের আড়তদার শাহ আলম জানান, রমজানে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার টন ছোলার চাহিদা আছে। মজুদ আছে প্রায় দেড় লাখ টন। প্রতিদিন ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে আমদানির ছোলা। পাশাপাশি খেজুরসহ আরও কয়েক ধরনের পণ্য আমদানিও বেড়েছে। ফলে সংকট হবে না। ‘
ভোগ্য পণ্যের ঋণপত্র খুলতে মার্জিন ন্যূনতম রাখা, রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ, বাকিতে এসব পণ্য কেনার সুযোগ এবং ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল খোলার নির্দেশনা দেয়া হলেও দৃশ্যমান উন্নতি নেই ঋনপত্র খোলায়।
বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এলসি বা ঋণপত্র খুলতে না পারায় কমেছে অনেক পণ্যের আমদানি। ফলে বাজারে পণ্য সংকট থাকায় এরই মধ্যে অনেক নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে। আসন্ন রমজানে বাজার দর কমাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব ধরনের ফলে সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
কর্পোরেট কর হার হ্রাসের সুপারিশ করে এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ বিগত অর্থবছরে কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রায় সবক্ষেত্রে কর্পোরেট কর হার ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় হ্রাসকৃত কোম্পানি করহার সুবিধা কেউই ভোগ করতে পারছে না। অর্থ আইন, ২০২২ অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তাবলির কারণে কমানো কর হার সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। ‘