::: রাহাত আহমেদ :::
নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে যেসব শর্ত প্রতিপালনের জন্য বলেন তারমধ্যে অন্যতম ‘ বিদেশে শাখা অনুমোদন ‘। আইন অনুযায়ী দেশের বাইরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ কোন দলের রাজনৈতিক শাখা অনুমোদনের বৈধতা নেই। তবুও বিদেশে রাজনৈতিক দলের শাখা ও কমিটি বাণিজ্যের কারণে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির পুনর্বাসন হচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে দূর্নীতি ও অর্থ পাচার।
আইনী বৈধতা না থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় দেশের বাইরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি। ফেডারেল আইনও সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের রাজনীতি। সেকারণে ‘ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ’ বা ‘ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’ এমন চ্যারেটি নিবন্ধনের মতো কাজ করে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনকেও দেয়া হচ্ছে ‘সুক্ষফাঁকি ‘।
দেশের মাটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের অধিকার বা নাগরিক অধিকার আদায়ের ইস্যুতে এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা নিরব ভূমিকাই পালন করে। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে গড়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সংগঠন – এমন কি কৃষকলীগও আছে । বিএনপিরও রয়েছে দেশের বাইরে এমন শাখা। মুলত এসব শাখার নেতাদের ব্যবহার করেই নব্বই দশকের পর থেকে আজ অবধি দেশের অর্থ বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে ।
আমেরিকার আইন অনুযায়ী, অন্য কোনো দেশের রাজনৈতিক শাখা স্থাপন করতে হলে নিবন্ধন করতে হয়। যা এখানকার কোনো রাজনৈতিক দলের নাই। অলাভজনক সামাজিক সংগঠন হিসেবে তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন করেছেন যা অনৈতিক।
বিদেশ শাখার নেতারা বর্তমানে সরকারি দলের মন্ত্রী এমপিদের লবিং বাণিজ্য ও অর্থ লুকানোর মুল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনায় বিদেশ শাখার অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতার হাত রয়েছে। দেশের দুই প্রধান দলের মনোনয়ন, পদপদবী ‘বেচাকেনার’ হাটে রুপান্তরিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ও মধ্যপ্রাচ্যে গজিয়ে উঠা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির এসব শাখা।
আইনী বৈধতা না থাকলেও বিদেশ শাখার পদপদবী পেতে একশ্রেণীর প্রবাসী অত্যন্ত আগ্রহী থাকেন। কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে হলেও বসতে চান পদে। অনেকের ক্ষেত্রে সেটি কৌতূহল হলেও ; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদেশে রাজনীতির মানে টাকা বানানোর মেশিন। দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের অবৈধ অর্থ লুকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেন ‘ বিদেশ শাখা’ নেতারা।
যুক্তরাজ্যের ব্রিকলেনে অবস্থিত রুপালি মানি এক্সচেঞ্জ কেলেঙ্কারির পর বিএনপি নেতা হাফিজ ইব্রাহিম বা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পথ অনুসরণ করেছেন অনেকেই।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তে বলা আছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডের বাইরে কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ বা শাখা সংগঠন থাকতে পারবে না। থাকলে সেই দল নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হবে না। ব্যত্যয় ঘটলে নিবন্ধন বাতিলও হবে।
একইভাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রে বলেছে, বাংলাদেশের বাইরের কোনো দেশে তাদের কোনো সংগঠন থাকলে সেই সংগঠন সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। আমেরিকাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নামে কোনো সংগঠন থাকলে তাদের ফেডারেল আইন মেনে চলতে হবে।
এতোসব প্রতিবন্ধকতার পরও লন্ডন কিংবা আমেরিকাতে এ দুটি দলের নেতা-কর্মীরা নেতৃত্ব ও পদ-পদবির দখল নিয়ে মারামারি ও হানাহানিতে লিপ্ত হচ্ছেন।