::: জোবাইর চৌধুরী :::
জমির টপসয়েল কাটার কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে জমির উপরিভাগ । ফলে খুঁটির গোঁড়ায় মাটি না থাকার কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো ধ্বসে পড়ার অবস্থা। এমন চিত্র সাতকানিয়ার কেরানীহাটের নয়াখাল এলাকার।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতায় বাঁশখালী জোনাল অফিসের ৪টি উপকেন্দ্রের ৩৩ কেভি লাইনটি দোহাজারী গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বের হয়ে নয়াখালী ব্রিক ফিল্ডস মাঠের ওপর দিয়ে টানা হয়েছে। এলাকাটি বাঁশখালী জোনাল অফিস থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সাতকানিয়ার কেরানীহাট নয়াখাল এলাকায় অবস্থিত। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা ৩৩ কেভির লাইন চেক করতে গিয়ে দেখেন, নয়াখাল ৩৩ কেভি লাইনের পার্শ্ববর্তী (সাতকানিয়া ব্রিকস্ ফিল্ড ও চট্টগ্রাম ব্রিকস্ ফিল্ড সংযুক্ত) এলাকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে ফসলী জমির প্রায় ১০ থেকে ২৫ ফুট করে মাটি কেটে নিয়ে যায়।
ফলে ওই এলাকার পাশের ব্রিকস্ ফিল্ডগুলোতে নতুন মাটির স্তুপ দেখা যায়। অপরিকল্পিতভাবে ৩৩ কেভি লাইনের পাশ থেকে অর্থাৎ খুঁটির চারপাশে একটু করে মাটি রেখে অন্য সকল মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
যেকোনো সময় বৃষ্টি হলে মাটি ধ্বসে গিয়ে ৩৩ কেভি লাইনটি ধ্বসে পড়ে যাবে। এতে করে বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ৭৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় পড়বে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতকানিয়া ব্রিকস ফিল্ড এর স্বত্বাধিকারী নাছির উদ্দিন বলেন,
‘ওটা তো আমার জমি। নিজের জমি থেকে মাটি কাটলে সমস্যা কোথায়? আমার জমিতে বিদ্যুৎ খুঁটি বসালো কেন? মামলা করলে কোনও সমস্যা নেই।’
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ব্রিকস্ ফিল্ড এর মালিক কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান আলা বলেন, ‘চট্টগ্রাম ব্রিকস এর মালিক আমি একা নই। আমি হলাম শেয়ার হোল্ডার। বৈদ্যুতিক খুঁটির গোঁড়া থেকে মাটি কাটার বিষয়ে আমি অবগত নই। আপনার নাম্বার আমাদের আরেক শেয়ার হোল্ডার যুবলীগ নেতা টিপুকে দিচ্ছি। তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন।’
পরে হেলাল উদ্দিন টিপু নামের আরেক শেয়ার হোল্ডার এ প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, ‘আমরা ওখান থেকে মাটি কাটছি না। এগুলো অনেক আগে কাটা হয়েছিল। বর্তমানে নয়াখালের ওখান থেকে মাটি কাটছেন ঢেমুশিয়ার সাবেক মেম্বার মুজিব। তিনি ওখান থেকে মাটি কেটে পিবিএমকে সাপ্লাই দিচ্ছেন। হয়তো পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে আমাদের বিরুদ্ধে কেউ মিস গাইড করতেছে।’
পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মাটি কাটার জন্য একাধিকবার নিষেধ করা হলেও মানেননি দুই ইট ভাটার লোকজন। এমনটি দাবি চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাঁশখালী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রিশু কুমার ঘোষের। তিনি দুই ইট ভাটার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রিশু কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমরা বারবার তাদেরকে মাটি না কাটার জন্য বলেছি। কিন্তু তাঁরা কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাটি কেটে গর্ত সৃষ্টি করেছে। এখন যেকোনো সময় বৈদ্যুতিক খুঁটি ধ্বসে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন সাতকানিয়া থানায় মামলা করার জন্য আমাদের এজিএম সাহেব যাচ্ছেন। তিনি পথে রয়েছেন।