::: নাদিরা শিমু :::
গৃহকর কমানোর দাবিকে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবারের ঘেরাও কর্মসূচিতে ন্যাক্কারজনক হামলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
বেলা এগারোটায় নগরের কদমতলি থেকে মিছিল বের করা হলে বাধা দেয়া হয়েছে পথে পথে। সুরক্ষা পরিষদের অভিযোগ শান্তপুর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ, ছাত্রলীগের কর্মী, চসিকের পরিছন্নকর্মীদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের দমাতে। সুরক্ষা পরিষদের মিছিলে হামলা ও বাধা দেবার সময় হামলায় করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান মেয়র রেজাউলপন্থি আকস্মিক একটি মিছিল করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মিছিলের উদ্দেশে প্রথমে একটি জুতা নিক্ষেপ করেন পরিছন্নকর্মীরা। এটি পুলিশের গায়ে পড়ে। একপর্যায়ে মিছিল থেকে অনবরত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিছন্নতা বিভাগের কিছু পরিচ্ছনকর্মী ( মেথর)। এমন হামলার কারণে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতা রাশেদ আমিরসহ কয়েকজন আহত হন।
সুত্রমতে, টাইগারপাস থেকে কার্যালয় পর্যন্ত পরিছন্নতাকর্মীদের দাঁড় করিয়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। বিতর্কিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবু ও আজিজুর রহমান আজিজকে দায়িত্ব দেয়া হয় আন্দোলনকারীদের দমাতে।
এছাড়া ঘেরাও কর্মসূচির আগে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরের টাইগারপাসে অবস্থিত নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। আগে কখনো এভাবে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি চসিকে।
নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা দেওয়ায় সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষও চরম দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে নগর ভবনে ঢুকতে পারেননি। আবার কেউ কেউ ভেতরে ঢুকে আটকে পড়েছেন।
প্রধান ফটকে তালা দেওয়ায় সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও আজ অফিসে ঢুকতে পারেননি। তাঁদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ নিয়ে ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কর্মকর্তা কর্মচারীদের কথা-কাটাকাটি হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের জানিয়ে দেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচির কারণে প্রধান ফটকে তালা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘ সিটি করপোরেশনের অফিস শুরুর সময় সকাল ৯টা। এখন থেকে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে হাজির থাকতে হবে। আজ থেকে এই নিয়ম কার্যকর করতে প্রধান ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে।’
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলে খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘ কর নির্ধারণে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নেই। আইন অনুযায়ী সাত বছর আগে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু গত বছরের শুরুতে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
চসিকের মুল ফটকে তালা লাগিয়ে দেবার ন্যাক্কারজনক কাজে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম ও সচিব খালেদ মাহমুদের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা।
ছাত্রলীগের কর্মী ও চসিকের পরিছন্নতা বিভাগের কর্মীদেরকে করদাতাদের বিপরীতে দাঁড় করানোর জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রকে দায়ী করেছেন করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা। পুলিশের সতর্ক অবস্থান নিশ্চিত করা হয় সড়কের মোড়ে মোড়ে।
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা বলেন, ‘ চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৌলিক সেবা নিশ্চিতের অন্যতম সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরীর টাইগারপাসে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়; কিন্তু সেখানে অভিযোগ, শলাপরামর্শ কিংবা সেবা পেতে যতটা যাওয়ার আগ্রহ নগরবাসীর, তার চেয়ে বেশি আনাগোনা ঠিকাদার ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের। ‘
করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ও মেয়রপন্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে দিনভর সর্তক অবস্থানে ছিল পুলিশ। টাইগারপাস মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয় সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। এছাড়া নগর ভবন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ চাকমা জানান, ‘ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। নগর ভবনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ‘
নগরের সম্মানিত করদাতাদের প্রতি চসিকের এমন আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তার বলছেন, আন্দোলন হবে, আবার সমঝোতাও হবে। কিন্তু করদাতাদের করের টাকায় যাদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয় তাদের এমন আচরন মেনে নেয়া যায় না।