::: খান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ :::
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের পুর্ব নির্ধারিত চসিক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঠেকাতে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের জড়ো করা হয়েছে নগর ভবনে। উপ প্রধান কর্মকর্তা মোরশেদুল আলমের ব্যবস্থাপনায় সকাল থেকে চসিকের টাইগার পাসের কার্যালয়ে জড়ো করা হয় এসব পরিছন্নকর্মীদের।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রস্তাবিত পৌরকর বাতিল ও আয়তনের উপর গৃহকর নেয়ার দাবিতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় একমাস আগে। বুধবার (১৫ মার্চ) বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে নগরের কদমতলীর আবুল খায়ের মার্কেট চত্বর থেকে মিছিল বের করে পরিষদ। মিছিলটি নগরের কদমতলী মোড়, দেওয়ানহাট হয়ে দুপুর ১২টার দিকে টাইগারপাস মোড়ে আসে।
মিছিলটি দেওয়ানহাট হয়ে টাইগারপাস মোড়ে এলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে নগর ভবনে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ।পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দেয় কর সুরক্ষা পরিষদের নেতারা।

জানা যায়, কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে আসেন নি চসিক মেয়র রেজাউল করিম। তবে ভবনের সামনে সরব উপস্থিতি ছিলো কর্পোরেশনের পরিছন্নতাকর্মীদের। আন্দোলনরত নগরবাসীর বিরুদ্ধে চসিকের পরিছন্নতাকর্মীদের এভাবে ব্যবহার করার কড়া সমালোচনা করেছেন নেটিজেনরা।
অন্যায্য গৃহকর আদায় বন্ধের দাবিতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে লাগাতার আন্দোলন করে আসলেও অনড় অবস্থানে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন। বাড়িভাড়ার আয়কে ভিত্তি ধরে গৃহকর আদায় করছে চসিক।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নোবেল চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নগর ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পরিষদকে নগর ভবনে যেতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যখানে অবস্থান নেয়।’
সংগঠনের সভাপতি মো. নুরুল আবছার বলেন, ‘গৃহকরবিরোধী আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে পূর্বনির্ধারিত নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে নাগরিকদের বাধা দেয়া হয়েছে। পরিছন্নতা কর্মীদের জড়ো করা হয়েছে নগর ভবনের সামনে। এমন স্বেচ্ছাচারীতার মাঝে চট্টগ্রামবাসী যে আসলেই ভাল নেই আবারও প্রমাণ হলো। বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এই বিষয়ে পরিছন্নতা বিভাগের শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানান, ‘ উপ প্রধান কর্মকর্তা মোরশেদ তাদেরকে নগর ভবনের সামনে জড়ো হবার নির্দেশ দেন। তারা জানান, আজ আর কাজ করতে হবে না। মেয়রের নিরাপত্তা দিতে তারা এসেছেন। ‘
সুধাকর নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘ করদাতা সুরক্ষা পরিষদ নামের সংগঠনটি বেশে বাড়াবাড়ি করলে এটার নেতাদের গায়ে আবর্জনা জুড়ে মারার নির্দেশ আছে উপর থেকে। ‘
বুধবার সকাল থেকে চসিক ভবনের সামনে মারমুখী অবস্থান দেখা গেছে শ্রমিকদের। জানা যায়, চসিক কার্যালয় ও মেয়রের নিরাপত্তা দিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চসিকে কর্মরত এসব শ্রমিকদের কাজে উপস্থিতি মাফ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আসলে আমাদের অফিস ৯টা থেকে শুরু হয়। এদিকে ৪টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বের হতে হতে অনেকের ৬টা থেকে ৭টাও হয়। ফলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে আসেন দেরি করে। মেয়র সাহেবের নির্দেশ দিয়েছিলেন সবাই যেন সময়মতো অফিসে আসে। এটা আমাদের রুটিন কাজ।
এদিকে, করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ও মেয়রপন্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সর্তক অবস্থানে আছে পুলিশ। টাইগারপাস মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নগর ভবন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, করদাতা সুরক্ষা পরিষদ নামের সংগঠনটিকে বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট দাবি করে চট্টগ্রামের উন্নয়নে বাধা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক সমাজ নামের আরেকটি সংগঠন। মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে মেয়র রেজাউল করিমের অনুসারীরা । এরআগে মেয়রকে নিয়ে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতির এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বন্দর নগরীর রাজপথে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সমর্থক ও করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা।