::: নাদিরা শিমু ::
চট্টগ্রামে জামাত ইসলামীর আতুরাশ্রম হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে নিয়ে স্থানীয় সাংসদ আবু রেজা নদবীর করা কটুক্তি দিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে।
শনিবার (১১ মার্চ) লোহাগাড়া উপজেলার পাদুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসআই চৌধুরীর স্মরণ সভার বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে কটাক্ষ করেছেন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। পরে সেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।শুধু তাই নয়, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের উদ্বোধন করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামফলক ভেঙে ফেলেছে তার অনুসারীরা ।
সংসদ সদস্য আবু রেজা নদবী এক সময় জামাতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও আওয়ামী লীগের সুসময়ে উঠেছেন নৌকায়। যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসেন আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী। তার এমন কটুক্তির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ স্থানীয় ও জেলার নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার। এদিন সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চিববাড়ি এমএ মোতালেব কলেজের আইসিটি ভবনের উদ্বোধন করা নিয়ে ।সেখানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও বিপ্লব বড়ুয়া অতিথি হিসেবে থাকলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য নদভী ছিলেন না। এই সংসদ সদস্যের অভিযোগ, ওই কলেজ ভবন তার চাহিদাপত্রের (ডিও লেটার) ভিত্তিতে নির্মিত হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সেখানে নদভী বলেন, ‘বিপ্লব বড়ুয়া সাহেব এই ধরনের কর্মপরিধি উদ্বোধন করতে চান, ভবিষ্যতে তাহলে নির্বাচন করেন। এমপি হয়ে আসেন। তারপর উদ্বোধন করেন। আপনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হয়ে, দপ্তর সম্পাদক হয়ে নিয়মের বাইরে কাজ করতে পারবেন না। এই ধরনের প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য ভবিষ্যতে আসতে পারবেন না। আমি সহজ মানুষ নই। আমি বাধা দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমপি কে হবে, নমিনেশন কে পাবে, এটি প্রথমে আল্লাহর তদবিরের ব্যাপার। দ্বিতীয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা-নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রী যাকে দেবেন সেই নির্বাচন করবে। আমিও হতে পারি, অন্যজনেও হতে পারে। ১০০ কোটি টাকা খরচ করব যারা বলেন—‘ওডা তুই ১০০ কোটি টাকা খরচ গইললে, আই এক হাজার কোটি টাকা খরচ গইজ্জম। হথা ইন কিইল্লায় হডদে (তুমি ১০০ কোটি টাকা খরচ করলে, আমি ১ হাজার কোটি টাকা খরচ করব)।’
এই বক্তব্যের দুদিনের মাথায় রবিবার (১২ মার্চ) ওই কলেজের ভবন উদ্বোধনের ফলক ভেঙে ফেলা হয়। বিপ্লব বড়ুয়ার নাম ধরে নদভীর প্রকাশ্য বক্তব্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের নামফলক ভাঙা নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নেতা-কর্মীরা নদভীর সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘দলে সব সময় ত্যাগী নেতাদের স্থান দেওয়া উচিত। কেউ শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দিলে সেটি দল মেনে নেবে না।’
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড (আপিলের পর দণ্ডমাত্রা হ্রাস পায়) ঘোষিত হলে দেশের যে কয়টি অঞ্চলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সাতকানিয়া ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। পুলিশসহ ছয়জনের প্রাণহানি, পাঁচ শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলাসহ হেন কোনো ঘটনা নেই, যা সেখানে ঘটেনি। সেই সময় বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে কী নির্মম নৈপুণ্যে রাস্তার দুপাশের শত শত বিশাল গাছ কেটে ধুলায় লুটিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা! স্থানীয়রা বলছেন সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় আওয়ামী রাজনীতি বন্দী আছে জামাতে ইসলামীরই কুটচালে।