27 C
Dhaka
Wednesday, February 12, 2025
More

    বন্দরের কনটেইনার ইয়ার্ডের ৫৬ শতাংশই ফাঁকা

    আরও পড়ুন

    ::: খান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ,  নাদিরা শিমু :::

    ডলার সংকট ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। রমজানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম  বন্দর দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কনটেইনার ছাড়া অন্য সব ধরনের পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং সরকারের আমদানি রোধ নীতিন কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কার্গো কনটেইনারের সংখ্যা  ধারণক্ষমতার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে সংরক্ষিত এলাকার ইয়ার্ডগুলোর ৫৬ শতাংশই এখন খালি।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছার পর সেগুলো জাহাজ থেকে নামিয়ে বন্দরের ইয়ার্ডে রাখা হয়। শুল্কায়ন শেষে সেগুলো সড়ক, রেল অথবা পুনরায় লাইটারেজ জাহাজে করে আমদানিকারকরা দেশের বিভিন্ন সাথে তাদের গন্তব্যে নিয়ে যায়। বর্তমানে  আমদানি কমে আসা এবং সেই তুলনায় ডেলিভারি বেশি হওয়ায় বন্দরের ভিতর কন্টেইনারভর্তি পণ্য রাখছেন না আমদানিকারক।

    চট্টগ্রাম বন্দর

    আমদানিকারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুলত ডলার সংকট, ঋণপত্র খুলতে কড়াকড়ি এবং ডলারের বিনিময়মূল্য বেশি থাকায় বেশ কমাস ধরেই অপ্রয়োজনীয় আমদানি পুরোপুরি  বন্ধ হয়েছে। আর এর প্রভাবে অন্যসব পণ্যের আমদানি কমেছে। এই কারণে বেশ কয়েকমাস ধরেই চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরের এই চিত্র।

    অথচ দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২% হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। পাশাপাশি, মোট বাণিজ্যের কন্টেইনার চালানের প্রায় ৯৮%ও পরিচালনা করে এই বন্দর।

    এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন , অপ্রয়োজনীয় আমদানি থাকায় জাহাজ থেকে নামার পর কন্টেইনারভর্তি পণ্য বন্দরের ভেতর ফেলে রাখতেন আমদানিকারক। এখন সেই অবস্থা নেই।এখন প্রয়োজনীয় এবং জরুরি পণ্য আনছেন আমদানিকারকরন। ফলে সেটি জাহাজ থেকে নামিয়েই দ্রুত ছাড় নিচ্ছেন আমদানিকারক। এই কারণে বন্দরের ভেতর কন্টেইনার রাখার জট নেই।

    জানতে চাইলে পোষাক শিল্প ও টেক্সটাইল শিল্পের সাথে জড়িত হালদা গ্রুপের চেয়ারম্যান  সরওয়ার আলমগীর  বলেন, ” বছরের এই সময়ে দেশের তৈরী পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করে। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গার্মেন্টস মালিকদের অর্ডার কমে গেছে প্রায় অর্ধেক । আমার প্রতিষ্ঠানে ছয়মাসে ষাট হাজার পিচ অর্ডার করা হয়েছে। একইভাবে অন্য কারখানার ডায়িং ইউনিটেও চাপ নেই।  সবার অবস্থা কম বেশী একই। অর্ডার কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমে গেছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং, ডেলিভারি কমে গেছে।

    বন্দরের তথ্য বলছে, বন্দরের ভেতর এখন ৫৩ হাজার ৫১৮ একক কন্টেইনার রাখার সুযোগ আছে। এর বিপরীতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কন্টেইনার ছিল ২৩ হাজার ৯৩১ একক কন্টেইনার। শতাংশের হিসাবে এর পরিমান ৪৪ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ৫৬ শতাংশ ইয়ার্ড এখন ফাঁকা পড়ে আছে।

    সংশ্লিষ্টরা  বলছেন, দেশে পণ্য আমদানি কমেছে কিন্তু ধ্বস নামেনি। তবে আমদানি পণ্য এখন দামি এবং জরুরি । ফলে সেগুলো এখন ফেলে রাখার সুযোগ নেই। বন্দর থেকে এখন প্রায় ৩ হাজার একক আমদানি কন্টেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। আর ৩২শ একক কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামছে। ফলে বন্দরে কন্টেইনার জটের  দিন শেষ। ‘

    ২০২২ সালের আগে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ছিলো ৪৯,০১৮ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। বন্দরে ‘নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড’ নির্মাণের ফলে কনটেইনার ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩,৫১৮ টিইইউ।

    চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ডে মোট কন্টেইনার রয়েছে ২৩,৩৪১ টিইইউ। যা কনটেইনার ধারণক্ষমতার ৫৬ শতাংশ।অথচ গত বছরের এই সময়ে, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার ছিলো ৪১,১২০ টিইউউ। এক বছরের ব্যবধানে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা কমেছে ১৭,৭৭৯ টিইইউ।

    চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকেদের চাহিদা অনুযায়ী এলসি ওপেন করতে পারছে না। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি বাণিজ্যে।”

    চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি সীমিত করে সরকার। এর ফলে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ক্রমাগত কমতে থাকে আমদানি।

    তবে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ মনে করেন, আমদানি কমার পাশাপাশি ইয়ার্ড ফাঁকা থাকার অন্য কারনও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘  আমদানিকারকদের ব্যাংক থেকে ডকুমেন্ট পেতে দেরি হলে, শুল্ক পরিশোধে জটিলতাজনিত কারণে কখনো কখনো আমদানি পণ্য ফ্রি টাইমের মধ্যে খালাস না করে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে রাখা হয়। এতে কনটেইনার সংরক্ষণে সাময়িকভাবে ইয়ার্ডে স্থান সংকট দেখা দিতো , এজন্য কনটেইনার জট সৃষ্টি হতো। বর্তমানে হ্যান্ডিলিং ক্যাপাসিটির পাশাপাশি শুল্কায়ন সহজ হয়েছে। কনটেইনার বন্দরে ফেলে রাখার প্রয়োজন পড়ছে না। ‘

    তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে কখনো কখনো এক দিনে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ১০০০ টিইইউ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। গত ১ বছরের দৈনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার।

    ২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৬৫৮৮ টিইইউ। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৪০৭ টিইইউ। এই সময়ে হ্যন্ডলিং কমেছে  ১৮১৯ টিইইউ। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিলো ৩১,৩৩,০২০ টিইইউ। ২০২১ সালে এটি ৩২,১৪,৫৪৮ টিইইউ ছিলো।

    একইভাবে বন্দরে কমে গেছে কনটেইনার ডেলিভারির সংখ্যাও। ২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আমদানি পণ্যের কনটেইনার ডেলিভারি হয় ৩১২৮ টিইইউ। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছিলো ৪১১৮ টিইইউ। এক বছরের ব্যবধানে কন্টেইনার ডেলিভারি কমেছে প্রায় ১ হাজার ।

    ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি ২০২৩ সালের মার্চের শুরু থেকে ভোগ্য পণ্যের আমদানি কিছুটা বেড়েছে । ফলে মাসখানেকের মধ্যেই পুরোনো চেহারায় ফিরতে পারে ইয়ার্ডগুলো।

    এইবাংলা/হিমেল

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর