::: রাহাত আহমেদ :::
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ‘ক্যাফে কুইন’ নামে সাততলা ভবনের নিচতলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে । বুধবার উদ্ধার করা হয়েছে দুইজনের মরদেহ। দূর্ঘটনায় পাশাপাশি থাকা দুটি ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন অন্তত ৮৫ জন। তাদের মধ্যে ৪৪ জনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্র।
মৃতদের মধ্যে ৩ জনের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে তিনজন নারী। বাকিরা পুরুষ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এছাড়া নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় মিলেছে। পরিচয় শনাক্ত হওয়া আটজন হলেন- পুরান ঢাকার মো. মোমিনের ছেলে মো. সুমন (২১), যাত্রাবাড়ীর মোশারফ হোসাইনের ছেলে মনসুর হোসাইন (৪০), চাঁদপুরের কচুয়ার হেদায়েত উল্লাহর মেয়ে পারভীন (৩১), বরিশালের কাজীরহাটের মৃত দুলাল মৃধার ছেলে ইসহাক মৃধা (৩৫), পুরান ঢাকার বংশালের মৃত মো. হোসেন আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (৪২), পুরান ঢাকার কেরানীগঞ্জের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে রাহাত (১৮), চাঁদপুরের মতলবের বিল্লাল হোসেনের ছেলে আলামিন (২৩), পুরান ঢাকার চকবাজারের আবুল হাশেমের ছেলে মোমিনুল ইসলাম (৩৮), একই এলাকার মুমিনুল ইসলামের মেয়ে নদী বেগম (৩৬)।
নিহতদের পরিচয়-
১. মো. সুমন (২১), পিতা মমিন, ঠিকানা: ১ নং সুরি টোলা, বংশাল ঢাকা। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা থানায়। নিহতের পিতা মমিন জানান, ১০-১২ দিন আগে কাতার থেকে দেশে ফিরেছেন সুমন।
২. ইসহাক মৃধা (৩৫), পিতা মৃত দুলাল মৃধা, গ্রামের বাড়ি কাজির হাট থানা, জেলা বরিশাল, গ্রাম চর সন্তোষপুর। থাকতেন ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ঢাকেশ্বরী ২ নং রোড। তিনি ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা করতেন।
৩. মুনসুর হোসেন(৪০), পিতা মোশাররফ হোসেন, ঠিকানা: পশ্চিমপাড়া যাত্রাবাড়ী।
৪. মো. ইসমাইল(৪২), পিতা মৃত মো. হোসেন আলী, ঠিকানা: ৯৭ লুৎফর রহমান লেন, আলু বাজার।
৫. আল আমিন (২৩), পিতা বিল্লাল হোসেন, ঠিকানা: পশ্চিম লালপুর, মতলব, চাঁদপুর। আলামিন বিবিএ শিক্ষার্থী বলে জানান তার বড় ভাই হাবিবুর রহমান।
৬. রাহাত (১৮) পিতা জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকানা: মাস্টার বাড়ি, দক্ষিণ চৈনকুটিয়া কেরানীগঞ্জ।
৭. মমিনুল ইসলাম(৩৮), পিতা আবুল হাসেম। ঠিকানা: ১১৫/৭/৫ ইসলাম বাগ, চকবাজার থানা।
৮. নদী বেগম(৩৬), স্বামী মৃত মমিনুল ইসলাম। ঠিকানা: ১১৫/৭/৫ ইসলাম বাগ, চকবাজার থানা।
৯. মাঈন উদ্দিন (৫০), পিতা মৃত ছমির উদ্দিন আকন, ঠিকানা: গ্রাম সৈয়দপুর, জেলা মুন্সিগঞ্জ সদর।
১০. নাজমুল হোসেন(২৫), পিতা ইউনুছ হোসেন, ঠিকানা: ৪৭ নং কে পি ঘোষ স্ট্রিট, বংশাল। তিনি আজাদ স্যানিটারি দোকানের কর্মচারী।
১১. ওবায়দুল হাসান বাবুল(৫৫), পিতা মৃত শেখ সাহেব আলী। ঠিকানা: চর বেউথা গ্রাম, মানিকগঞ্জ সদর।
১২. আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), পিতা মৃত মোজাম্মেল হক, ঠিকানা: জেলা মুন্সিগঞ্জ, থানা গজারিয়া, গ্রাম-বালুয়া কান্দি।
১৩. আকুতি বেগম (৭০) স্বামী মৃত আনোয়ারুল ইসলাম, ঠিকানা: ১৮/১ আগামাসি লেন, বংশাল।
১৪. মো. ইদ্রিস মীর(৬০), পিতা মৃত কালাচান মির, মীর হাজারীবাগ যাত্রাবাড়ী।
১৫. নূরুল ইসলাম ভূইয়া (৫৫), পিতা মৃত আলি মোহাম্মদ ভূঁইয়া, ঠিকানা: মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
১৬. হৃদয় (২০), ঠিকানা সিদ্দিকবাজার জাবেদ গলি থানা বংশাল।
রাজধানীর গুলিস্তানে সাত তলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় বুধবার বিকেলে আরও দুই জনের লাশ উদ্ধার করছে ফায়ার সার্ভিস। তারা হলেন বাংলাদেশ স্যানিটারির ( আনিকা ট্রেডিং) মালিক মুমিনুদ্দিন সুমন ও ম্যানেজার স্বপ্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, ‘এখন পর্যন্ত ১৯টি মরদেহ তারা পেয়েছেন। সবশেষ বিকেলে আরও দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।’
এ নিয়ে এই দুর্ঘটনায় মোট ১৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।বুধবার (৮ মার্চ) বিকালে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) আখতারুজ্জামান। এছাড়া ভবনটিকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানীর গুলিস্তানে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ডের পাশে বহুতল ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ২৭ জনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসক। এর মধ্যে ১৬ জন নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ও আহত ১১ জনকে ২৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার জেলা প্রশাসক মুমিনুর রহমান।