::: পঞ্চগড় প্রতিনিধি :::
পঞ্চগড়ের আহমেদীয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একন পর্যন্ত মোট ১৩টি মামলায় ১৩৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নতুন করে ৩৩ জন যুক্ত হয়েছে গ্রেফতারের তালিকায়।
এসব মামলায় ২৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও প্রায় সাড়ে দশ হাজার জনকে। মঙ্গলবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়।
পঞ্চগড়ের আহম্মদ নগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) ৩ দিনব্যাপী সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরা। এ সময় মিছিলে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে ৭ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ২০টি বাড়িঘর ও ৪টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাট ফাঁকা। তবে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলছে। আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘরে ফিরেছেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ জানায়, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, তাদের আটটি দোকানে লুটপাট, গুজব ছড়িয়ে আবারও হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ পর্যন্ত দশটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ১৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গেল শনিবার রাতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিহত জাহিদ হাসানকে হত্যার অভিযোগে ওসমান আলী বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাত ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হলেও কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে হামলা, ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধাদানসহ একাধিক অভিযোগে পুলিশের করা বিভিন্ন মামলায় ১২ জনের নামসহ তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া মোটরসাইকেল চালিয়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশের করা আরেকটি মামলায় ১৫ জনের নামসহ দুই হাজার ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে মামলা ও পুলিশি গ্রেপ্তার আতঙ্কে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ বিএনপির।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের যুবক জাহিদ হাসানকে হত্যার অভিযোগে শহরের রাজনগর এলাকার ইসমাইল হোসেন ঝনু (২৫) এবং তুলারডাঙ্গা মহল্লার রাসেল হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আর মোটরসাইল চালিয়ে এবং ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পঞ্চগড় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি (২৯) এবং রাব্বী ইমনকে (২৬) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এসব মামলায় সোমবার পর্যন্ত গেপ্তার ৮১ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি-জামায়াত নেতারাও রয়েছেন বলে পুলিশ জানায়।
অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, শুক্রবারের সালানা জলসার প্রতিবাদে একদিন আগে বৃহষ্পতিবার বিক্ষোভ করেছিলেন সাধারণ মুসল্লিরা। এ নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। তারা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও কঠোর ব্যবস্থা নিলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। এখন ঢালাওভাবে পাঁচ উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’