গোপাল হালদার, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জামায়াত ইসলামি সমর্থিত আইনজীবীদের উপর হামলার ঘটনার পটুয়াখালী সদর থানায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ১১ আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউট এড. মো. রুহুল আমীন সিকদার (৫) বাদী হয়ে বুধবার বিকেলে মামলাটি দায়ের করেন।
পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলা নং ২৬। তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন মো. মাহবুবুর রহমান সুজন (৩৯) মো. মিজানুর রহমান (৮) মিজান মাষ্টার (৪৮), এস.এম তৌফিক হোসেন মুন্না (৪১), মো. আরিফ হোসেন (৪৫), মো. সাহাবুদ্দিন (সাবু) (৪৪), মো. আরিফুর রহমান রিয়াজ (৪৪), মো. নাজমুল আহসান মুন্না (৪৮), মো. মজিবুল হক বিশ্বাস রানা (৪২),
শরীফ মো. সালাহউদ্দিন, মো. ইমরান হোসেন বাদল (৪০), মো. আবু জাফর খান (৫০)।
আসামীরা সকলেই পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সক্রিয় সদস্য।
এই মামলায় পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের আমীর আলহাজ্ব এডভোকেট মো. নাজমুল আহসান সহ ৮ আইনজীবী কে স্বাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে ‘জেলা আইনজীবী সমিতি, পটুয়াখালীর কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ এ আগ্রহী প্রার্থীদের টাকা দাখিল, মনোনয়ন ফরম ক্রয়, মনোনয়ন ফরম জমা প্রদানের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারী তারিখ ধার্য ছিল। উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল, পটুয়াখালীর পক্ষে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, লাইব্রেরী সম্পাদক, ক্রিড়া সম্পাদক ও সদস্য পদে বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামের প্যানেলের বিজ্ঞ আইনজীবীগণ মনোনয়ন ফরম ক্রয় করিতে যান। মামলার
০৭নং সাক্ষী অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দিন (৪), সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে নির্ধারিত টাকা জমা প্রদান করিয়া ফরম ক্রয় করিতে যান। উক্ত পদে তাহার শতভাগ জয়ের সম্ভাবনা থাকায় উক্ত পদে বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ০৯নং আসামী শরীফ মো. সালাহউদ্দিনসহ অন্যান্য আসামীগণ তাহাকে ফরম ক্রয়ে বাঁধা প্রদান করেন। তাহাতে ঘটনার দিন, তারিখ ও সময়ে ঘটনাস্থলে আসামীগণ ০৭নং সাক্ষীকে সাধারণ সম্পাদকের ফরম এবং প্যানেলের লাইব্রেরী সম্পাদক ও সদস্য পদের ফরম ক্রয়ে বাঁধা প্রদান করায় আমিসহ বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামের প্যানেলভুক্ত আইনজীবীগণ ফরম ক্রয় করিতে নির্বাচন কমিশনের কক্ষে যাইতে চাইলে ০৯নং আসামীর প্রত্যক্ষ হুকুমে এবং অংশগ্রহণে পূর্বপরিকল্পিতভাবে যাহাতে সাধারণ সম্পাদক, লাইব্রেরী সম্পাদক ও সদস্য পদের ফরম ক্রয় করতে না পারে সে লক্ষে সকল আসামীরা বাদী সহ প্যানেলের অন্যান্য আইনজীবী তথা মনোনয়ন ফরম ক্রয়ে প্রত্যাশী সাক্ষীদের বাঁধা প্রদান করিয়া বাদী এবং সাক্ষীদের উপরে চড়াও হয় এব বাদীকে খুনের উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়,
০১নং আসামী মো. মাহবুবুর রহমান সুজন বাদীকে সাফ খুনের উদ্দেশ্যে তার মাথা লক্ষ্য করে চেয়ার দিয়ে সজোরে বরি মারিলে উক্ত বারি বাদীর নাকের উপরে পরিয়া নাকের হাড় ভাঙ্গা, মাংস কাটা গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়।
মামলার ০২নং আসামী মো. মিজানুর রহমান (মিজান মাষ্টার) বাদীকে খুনের উদ্দেশ্যে তার বুকের ডানপাশে সজোরে একাধিক কিলঘুষি মারে এতে বাদীর বুকের ডানপাশে গুরুতর নীলা ফুলা জখম হয়। ০৩নং আসামী এস এম তৌফিক হোসেন মুন্না বাদীকে সাফ খুনের উদ্দেশ্যে তলপেটে সজোরে লাথি মারে এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পরলে এড. মুন্না বাদীর প্যান্টের ডান পকেটে থাকা বিভিন্ন মূল্যমানের নগদ ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা জোরপূর্বক ছিনাইয়া নিয়া যায়।
০২নং আসামী মো. মিজানুর রহমান (মিজান মাস্টার) ঘটনাস্থলে থাকা চেয়ার দিয়া খুনের উদ্দেশ্যে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী তথা ০৭নং সাক্ষীর মাথা লক্ষ্য করিয়া বারি মারিলে উক্ত বারি মাথার পিছনে ডান পার্শ্বে পারিয়া গুরুতর নীলা ফুলা জখম করিয়া দাড়ি, টুপি ধরিয়া টানা হেচড়া করিতে থাকে। ০৯নং আসামী শরীফ মো. সালাহউদ্দিন ০৭নং সাক্ষীকে খুনের উদ্দেশ্যে লাথি মারিলে ০৭নং সাক্ষী মাটিতে লুটাইয়া পরিলে ৪,৫ ও ৬নং আসামীগণ ০৭নং সাক্ষীকে সাফ খুনের উদ্দেশ্যে তাহার মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথারী কিল, ঘুষি ও লাথি মারে গুরুতর নীলা ফুলা জখম করে। ৭,৮,১০,৩, ১১নং আসামীগণ ০৫ নং সাক্ষীকে সাফ খুনের উদ্দেশ্যে তাহার মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথারী কিল, ঘুষি ও লাথি মারে গুরুতর নীলা ফুলা জখম করে। বাদী এড. রুহুল আমিন ও অন্যান্য ভিকটিমদের ডাক চিৎকারে অন্যান্য সাক্ষীরা বাদীকে এবং ০৭নং সাক্ষীকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
উক্ত নির্বাচনে ০৯টি পদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়েত ইসলাম প্যানেলের ০৬টি পদে মনোনয়ন ফরম ক্রয় ও জমা দিতে পারিলেও আসামীগণ সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ ০৩টি পদের ফরম ক্রয় করিতে দেয় নাই এবং তাহারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য পাঁয়তারা করিতেছে। উক্ত বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পত্র পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে ভিটিও সম্প্রচার করেছেন বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড.মোজাম্মেল হোসেন তপন বলেন, একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা জেলা জামায়াতের আমীর এড নাজমুল আহসান এর সাথে কথা বলে একটা মিমাংশা করে দিয়েছি। তবে এর পরও মামলা হবে এমনটা প্রত্যাশিত ছিল না। বিষয় টি নিয়ে আমরা বিব্রত বোধ করছি। ‘
এদিকে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের মারামারির এ ঘটনা পটুয়াখালী জেলা জুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
#