আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা একাই পালন করছেন ১৩৫ প্রতিষ্টানের দ্বায়িত্ব। হার না মানা এই নারী কর্মকর্তা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
নিজ দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাজের পাশাপাশি সরকারের দেওয়া বাড়তি দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন। উপজেলার ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি মাদ্রাসা, ৩টি কারিগরি কলেজ ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে ইউএনও কে। দেখতে হয় তাদের ফাইলপত্র, কোনো প্রতিষ্ঠানের মামলা থাকলে সেখানে বাড়তি সময় ব্যয় করতে হয়।
এছাড়া উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে তাকে ৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে।
জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি না থাকায় এভাবে অন্তত ১৩৫টি পদের দায়িত্ব সামলাতে গলদঘর্ম অবস্থা তার।
উপজেলা চেয়ারম্যান, দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সভাপতি না থাকায় সব পদের দায়িত্ব সামলাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন এই ইউএনও। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের স্থায়ী কমিটির ৯টিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আর আটটিতে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কয়েকটি কমিটিতে উপদেষ্টা এবং ৮-১০টি কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকতেন।
তবে তারা না থাকায় উপজেলা প্রশাসক হিসেবে সব কমিটির দায়িত্ব এখন ইউএনওর কাঁধে। এছাড়া জুলাই বিপ্লবপরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ নানা জনের লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ শোনা এবং সেগুলোর সমাধানও অনেক ক্ষেত্রে তাকেই করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষা, কৃষি উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ভাতা, হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা, বয়স্ক-বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, মাতৃত্ব ভাতা, চোরাচালান প্রতিরোধ, এনজিও সমন্বয়, টেন্ডার, টিআর-কাবিটা, বিভিন্ন দিবস উদযাপনসহ উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তরগুলোর বিভিন্ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইউএনও। এখন সমন্বয় সভাও পরিচালনা করতে হচ্ছে তাকেই।
উপজেলা পর্যায়ে একজন ইউএনও স্বাভাবিকভাবে ৪০ থেকে ৪৫টি কমিটির সভাপতি থাকেন। তবে এখন তার কাঁধে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বসহ অন্তত ১৩৫টি পদের ভার।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক জানান, তাদের কাছে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসতেন বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে। এখন উপজেলা চেয়ারম্যান না থাকায় সব কাজের চাপ পড়েছে ইউএনওর ওপর। একা এত দায়িত্ব সামলানো সত্যিই খুব কঠিন। তারপরও তিনি যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন সেটা প্রশংসার দাবিদার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, এতগুলো দায়িত্ব একা পালন করা কষ্টকর হলেও তা করতে হবে। কাজ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। অতিরিক্ত সময় দিয়ে হলেও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।কাজের চাপ থাকলেও কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, অফিসের কর্মীদের নিয়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করছি আমরা। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন উপজেলা পরিষদে এসে যেন ভোগান্তিতে না পড়েন, সেজন্য স্টাফসহ আমরা সবাই সেদিকেও নজর রাখছি।