::: ওয়াহিদ জামান :::
চট্টগ্রাম বন্দরের যান্ত্রিক বিভাগ মহা আড়ম্বরে বনভোজনের আয়োজন করে শেষ মুহুর্তে বাতিল করা হয়েছে। ৩ রা মার্চ ৮০০ কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে কক্সবাজারে যাবার কথা ছিলো। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ টি বাস, ছয়টি হোটের বুকিং দেয়া হয়। ৩ ও ৪ মার্চ দুদিনের আয়োজনে মেজবানসহ নানা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ১ লা মার্চ সেই ‘ বনভোজন ‘ বাতিল করে দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। যান্ত্রিক বিভাগেন করা উপ কমিটির নথি অনুযায়ী পিকনিকের চাঁদা টাকা জমা দেবার শেষ দিন ছিলো ১০ ই ফেব্রুয়ারী।
জানা যায়, বনভোজন আয়োজনের জন্য কমিটিও গঠন করা হয়েছিলো। সেই কমিটির তিনটি আহবায়ক করা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, নাসিম আলী জোয়াদ্দার, কিশোর ক্লান্তি দাশকে । যান্ত্রিক বিভাগের ২৪ জন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে এই বনভোজন কমিটি শেষ পর্যন্ত বনভোজন বাতিল করে।
কমিটি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিলাসবহুল বনভোজনের খরচ মেটাতে যান্ত্রিক বিভাগে কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২২০০ টাকা করে সংগ্রহ করা হয়। বন্দরের সত্তর জন ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রতি এক লক্ষ টাকা করে চাঁদাও নেয়া হয়। বনভোজনের আয়োজন বাতিল করার কারণে বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের টাকা ফেরত দেয়া হলেও, ঠিকাদারদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়া হয় নি। সুত্রমতে, বৃহৎ দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাঁদা দিয়েছেন দুই লাখ টাকা করে ; পিকনিক বাতিল করার কারণে সেই টাকাও ডুকেছে যান্ত্রিক বিভাগের প্রকৌশলীদের পকেটে।
কক্সবাজারের ছয়টি হোটেলে আটশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থার পাশাপাশি হোটেল সৈকতের মাঠ প্রস্তুত করা হয় মেজবান আয়োজনের জন্য। ঢাকা থেকে সংগীত শিল্পীদের বুকিংও করা হয়েছিলো। ফলে বনভোজনের খরচ মেটাতে হোটেল, বাসসহ বিভিন্ন খাতে অগ্রিম পরিশোধ করা টাকা ফেরত পায় নি কমিটি। সুত্রমতে, বনভোজন বাতিল করার কারণে বন্দরের যান্ত্রিক বিভাগের শ্রমিক কর্মচারীদের চাঁদার টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। কিন্তু বন্দর সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের টাকায় পরিশোধ করা হয়েছে অনুষ্ঠান বাতিলের লোকসান।
এদিকে, হঠাৎ করে পূর্বনির্ধারিত বনভোজন বাতিল করার কারণে বিপাকে পড়েছে কর্মচারীরা। কারণ বন্দরের অনেক কর্মচারী গ্রামের বাড়ি থেকে স্ত্রী পরিজনকে চট্টগ্রামে এনেছেন বনভোজনে যোগ দিতে। এরমধ্যে এক কর্মচারী গ্রামের বাড়ি থেকে নিজের স্বজনদের চট্টগ্রামে আনার মাঝপথে হৃদক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারাও গেছেন।
এবিষয়ে যান্ত্রিক বিভাগের তিনজন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রকৌশলীদের অনুরোধে টাকা দেয়া হয়েছে। বনভোজন বাতিল হলেও, ঠিকাদারি কাজের বিল আটকে যাবে, সেই ভয়ে চাঁদার টাকা ফেরত চান নি। তিনজন ঠিকাদারই বনভোজনের খরচ মেটাতে ১ লাখ টাকা করে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বন্দরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বলেন, ‘ পিকনিক আয়োজনের জন্য দুই লাখ টাকা ডোনেশান দিয়েছি। তাদের পিকনিক বাতিল করার বিষয়টি জানা নেই। ‘
যান্ত্রিক বিভাগের পিকনিক আয়োজন করার জন্য দুই লাখ টাকা ডোনেশন দেবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের আরেকটি বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানও।
হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, মার্চের ৩ এবং ৪ তারিখ কক্সবাজারের রয়েল বীচ রিসোর্টে ৩২০ টি কক্ষ বুকিং করা হয়েছিল। বে- মেরিনায় ১২০ টি, হোটেল সেন্টমার্টিনে ১০০,টি হোয়াইট বীচে ১০০টি , বীচ পার্ক হোটেল ১৬০টি , হোটেল এলাফে ১০০ টি কক্ষ বুকিং করা হয়েছে। এছাড়া হোটেল শৈবালের মাট ভাড়া করা হয়েছিল ১ লক্ষ টাকা দিয়ে। মেজবান আয়োজন এবং কনসার্টের জন্য নির্ধারিত এই মাঠটির বুকিংও বাতিল করা হয়েছে।
রয়েল বীচ রিসোর্টের ম্যানেজার ইয়াসিনের মাধ্যমে এসব আবাসিক হোটেল বুকিং করা হয়েছিলো। রুম বুকিং এর অগ্রীম হিসেবে আড়াই লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। জানতে চাইলে ইয়াসিন জানান, সব বুকিং বাতিল করা হয়েছে। ‘
পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা জানান, কক্সবাজারে বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আনা নেবার জন্য ২৪ টি বাস বুকিং দেয়া হয়। ১ লা মার্চ সেই বুকিং বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ১৪ টি হাইস, দশটি কার বুকিং করা হয় পিকনিকে যাবার জন্য। সেগুলোও শেষ মুহুর্তে বাতিল করা হয়েছে। বন্দরের যানবাহন শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান পরিবহনের বিষয়টি তদারকি করছিলেন।