22 C
Dhaka
Thursday, February 13, 2025
More

    চট্টগ্রামে বৈধ ইটভাটার চেয়ে অবৈধ বেশি

    আরও পড়ুন

    ::: রাহাত আহমেদ :::

    চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বৈধ ইটভাটার চেয়ে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রাম জেলায় বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১১৭ টি, আর লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ২৯৬ টি।পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের  এক ‘ পর্যালোচনা বৈঠকে’ এমন তথ্য উঠে আসে। জানুয়ারী মাসের শুরুতে পর্যালোচনা বৈঠকের পর বুধবার  (১লা মার্চ) মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত প্লাস্টিকের ব্যবহার, ইটভাটার স্থান ও পরিবেশ দুষণের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে অতিসত্বর  অবৈধ এসব ইটভাটার বন্ধ করার ব্যবস্থা নেবার কথাও বলা হয়েছে।

    সুত্রমতে, চট্টগ্রামে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় নি স্থানীয় প্রশাসন। পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের  তথ্যমতে চট্টগ্রামে ইটভাটার সংখ্যা ছিলো ৪০৮টি। এর মধ্যে ৩১২টিই ছিল অবৈধ। তবে সেসময় যে ৯৬টিকে বৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিলো, এর অধিকাংশ ইটভাটার মালিক সময়মতো  ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেন নি। এর মধ্যে ফিক্সড চিমনি (৮০-১২০ ফুট) ২৮৪টি, জিগজ্যাগ চিমনি ১২১টি এবং অনান্য ইটভাটা আছে ৩টি। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এসব ইটভাটার মধ্যে ৩১০টির পরিবেশগত ছাড়পত্র মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা অনুমোদনপত্রই নেই।

    শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ ইটভাটা স্থাপনে মানা হয়নি পরিবেশ দুষণ সংক্রান্ত নীতিমালা। লোক দেখানো অভিযানের ফাঁকে  প্রতি বছরই গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ইটভাটা। রাউজানে ৩৬টি, ফটিকছড়িতে ৪৬টি, সাতকানিয়ায় ৩৮টি, হাটহাজারীতে ৪০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৬৯টি, চন্দনাইশে ৩২টি, লোহাগাড়ায় ১৫টি, আনোয়ারায় ৩টি, বাঁশখালীতে ৩টি, সন্দ্বীপে ৪টি, মিরসরাইয়ে ৮টি, সীতাকুণ্ডে ৫টি, বোয়ালখালীতে ৭টি, পটিয়ায় ৩টি ইটভাটা অবৈধ রয়েছে। তবে বাস্তবে উপজেলাগুলোতে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

    চট্টগ্রামে বেশিরভাগ ইটভাটা গড়ে উঠেছে পাহাড় কেটে কিংবা ফসলি জমিতে। অনেক ইটভাটা রয়েছে লোকালয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে। এছাড়া পৌর এলাকায়ও রয়েছে অনেক ইটভাটা। এমনকি হালদা নদী ও কর্ণফুলী নদীর পাড় ঘেঁষেও অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে।

    ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত) ২০১৯) এর ৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো ইটভাটা লাইসেন্স ব্যতীত চালানো যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে আইনের ১৪ ধারা অনুসারে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় শত শত ইটভাটা চলছে এবং এতে করে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

    সাবেক পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের নিজ এলাকা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ইটভাটার নগরীতে পরিণত হয়েছে  এ উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক অবৈধ ইটভাটা। যার নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। জেলা ও উপজেলা, বন বিভাগ, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, রেঞ্জ, বনবিট অফিস, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাসহ বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে এসব ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান একাধিক সুত্র। তবে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ইটভাটা আছে ৬৯টি। এর মধ্যে ৬৬টি ইটভাটা অবৈধ।

    স্থানীয়রা জানান,  যেসব ইটভাটা বৈধ হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে সেগুলোতেও আছে নানা শুভংকরের ফাঁকি।উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ১২ ইউনিয়নজুড়েই রয়েছে শতাধিক ইটভাটা। কেবলমাত্র ইসলামপুর, দক্ষিণ রাজানগর এবং ১নং রাজানগর তিন ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় সত্তরোর্ধ্ব ইটাভাটা। অন্যান্য ইউনিয়নসহ এখানে প্রায় ১৩০টির মতো ইটভাটা রয়েছে, যার অধিকাংশ ভাটার নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। আবার এসব ইটভাটার বেশিরভাগ গড়ে উঠেছে পাহাড়ের পাদদেশে ও ফসলি জমিতে। এসব ভাটায় সংরক্ষিত ও অশ্রেণিভুক্ত বন থেকে শতকোটি টাকার কাঠ কেটে পুড়ানো হচ্ছে জ্বালানি হিসেবে। একই সঙ্গে ইট তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য যত্রতত্রভাবে মাটি কাটায় বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার সংরক্ষিত বন ও পাহাড়। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অনেক ইটভাটার অবস্থান জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর পাড় ঘেঁষেও অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ফলে প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি ক্রমশ ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশের।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর