::: রাহাত আহমেদ :::
শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাপড়, মাদকসহ অবৈধ পণ্য পরিবহনে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস এস এ পরিবহন। গোপন খবরের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ী এলাকার এস এ পরিবহন থেকে ৫১.৯১ লক্ষ টাকা মুল্যের নিট ফেব্রিকস কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে আটক হবার পর বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য । শুল্কমুক্ত কোটায় আমদানি করা এসব ফেব্রিকস খোলা বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্য পাচার করছিল একটি চক্র। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পোষাক কারখানার নামে আমদানি করা ফেব্রিকসের এই চালান আটক করতে গিয়ে এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মচারীদের বাধার মুখে পড়েন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
চোরাচালানের উদ্দেশ্য জড়ো করা এসব ফেব্রিকস পুলিশের উপস্থিতিতে চট্টগ্রামের কাজির দেউরির এস এ পরিবহন প্রাঙ্গণ আটক করা হয়। ৫১ লাখ টাকা মূল্যের ৮ দশমিক ৬ মে. টন নিট ফেব্রিকস (গার্মেন্টের কাপড়) আটকে দুই দিন আগে অভিযান চালানো হলেও রোববার এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় ফৌজদারি মামলা হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দার কর্মকর্তাদের সরকারি কাজে বাধা প্রদান, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ সহকারে প্রাণনাশের ভয়ভীতি ও মারমুখী হয়ে ঘেরাও করে পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানমালের নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
রবিবার ( ২৬ ফেব্রুয়ারী) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর বন্ডেড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্যচালান খোলাবাজারে বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যাপক তৎপর থাকার খবরে চোরাকারবারিরা তাদের চোরাচালানকৃত পণ্য পরিবহনে রুট পরিবর্তন করে কুরিয়ার সার্ভিসের সহায়তায় পণ্য চোরাচালান করছে মর্মে কাস্টমসের কাছে নিকট সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে। এরই ভিত্তিতে চট্টগ্রামের কাজির দেউরির এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঙ্গণে কোতোয়ালি থানা পুলিশ, এস এ পরিবহন কর্তৃপক্ষ, আটককৃত নিট ফেব্রিকসের মালিকানা দাবি কারি মো: নজরুল ইসলামের উপস্থিতিতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর চট্টগ্রামের কার্যালয়ের গোয়েন্দা দল কর্তৃক সিলগালাকৃত কাভার্ড ভ্যান নং ঢাকা মেট্রো-ট ১১-৯১২১ আটক করা হয়েছে।
আটককৃত পণ্যের জব্দ তালিকা তৈরিকালে ৩৫৬টি প্যাকেজ (১২৮টি বস্তা এবং ২২৮টি রোল) সাদা, সাদা প্রিন্ট, হলুদ, জলপাই, হালকা বেগুনিসহ আটটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের ৮৬১২.৭৯ কেজি নিট ফেব্রিকস পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, আটককৃত কাভার্ড ভ্যানের চালকের লিখিত বিবৃতি অনুযায়ী পণ্য চালানটি চরলক্ষা নামক স্থানে অবস্থিত একটি গার্মেন্ট গুদাম থেকে নিট ফেব্রিকস লোড করা হয়েছিল। পণ্যচালান পরিবহনের পক্ষে দলিলাদি প্রদর্শনের অনুরোধ জানালে গাড়িচালক পণ্যচালানটির আমদানি সংক্রান্ত কোনো দলিলাদি বা বিক্রয় সংক্রান্ত দলিলাদি (মূসক চালান ৬.৩) দাখিল করতে সক্ষম হননি। কাভার্ডভ্যানটি চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার জন্য বুকিং মানি হিসেবে ৫৫ হাজার টাকা ভাড়াও পরিশোধ করা হয় বলে সূত্র জানায়। সাধারণত চট্টগ্রাম হতে নারায়ণগঞ্জ এ ধরনের কাভার্ডভ্যানে পণ্য পরিবহনে ১৬-১৭ হাজার টাকার বেশি লাগার কথা নয় । সুত্রমতে, বাড়তি টাকা নিয়ে এসএ পরিবহন এসব পণ্য চোরাচালানে সহযোগিতা করেছে।
সুত্রমতে, নানামুখী তদবিরের কারণে এসএ পরিবহন থেকে ফেব্রিকসের চালানটি আটক করার দুইদিন পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে কক্সবাজার থেকে সারাদেশে ইয়াবা সরবরাহের নিরাপদ উপায় হিসেবে একটি চক্র এস এ পরিবহনকে ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।