::: আন্তর্জাতিক ডেস্ক :::
বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের নানা টানাপোড়েনে পরিস্থিতি যখন সামাল দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন নতুন করে বিপত্তি রাশিয়াকে নিয়ে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ডামাডোলে আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশ আরো জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশ্লেষকরা। মস্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তলব এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে বলে মত তাদের।
মস্কোয় নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার জাহাজগুলো বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁকে তলব করা হয়েছে। গেল মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী রাশিয়ার জাহাজ দেশটির বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে যে খবর এসেছে, সে বিষয়ে দেশটির কূটনৈতিক মিশনের প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এরআগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে জাতিসংঘে মিসাইল হামলা ও ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখল করে নেওয়ায় রাশিয়ার বিপক্ষে নিন্দা প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল, সেটি তখন কূটনৈতিক মহলে ততটা গুরুত্ব না পেলেও বর্তমানে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি করেছে। ভারত ও চীন নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ভোটদানে বিরত থাকলে বাংলাদেশের ভোট সম্পর্ক প্রভাব ফেলেছে বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ সময় রাশিয়াকে নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩টি দেশ। মোট ৩৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে, যার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও পাকিস্তান।পূর্ব ইউরোপের মুসলিম-প্রধান দেশ আলবেনিয়ার উত্থাপিত নিন্দা প্রস্তাবের বিপক্ষে এবং রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেয় রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, নিকারাগুয়া এবং সিরিয়া।
রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু হওয়ায় দেশটির বিপক্ষে ভোট দেওয়া বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। কারণ বন্ধু হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাছাড়া যেখানে চীন-ইরান-রাশিয়া জোট গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং রাশিয়া এশিয়াভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে, সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন বলয়ে অবস্থান নেওয়া যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মস্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তলব এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া। ইউক্রেন বাহিনীও তাদের প্রতিরোধ শুরু করে। ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এরই মধ্যে রাশিয়ার ওপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে থাকা রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। রুশ ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায়। ইতিমধ্যে এসব নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে, পড়েছে বাংলাদেশেও । বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এদিকে, যুদ্ধ বন্ধ করে অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। এতে ভোটদানে বিরত থেকেছে বাংলাদেশসহ ৩২ দেশ।দুই প্রতিবেশী দেশে যুদ্ধের এক বছর পূর্তির আগের দিন বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সাধারণ পরিষদের জরুরি বিশেষ অধিবেশনে ১৪১ ভোটে ওই প্রস্তাব পাশ হয়।
প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে রাশিয়াসহ সাতটি দেশ। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোটদাতা হিসাবে রাশিয়া পাশে পেয়েছে বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া, মালি, নিকারাগুয়া ও সিরিয়াকে।বাংলাদেশের সঙ্গে ভোটদানে বিরত দেশের তালিকায় রয়েছে ভারত, চীন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিউবা, কঙ্গো, আর্মেনিয়া ও ভিয়েতনাম।