::: মোল্লা নাসির উদ্দিন :::
দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কতখানি দূর্নীতিগ্রস্থ সেটি করোনার সংকটকালে হাড়েহাড়ে টের পাওয়া গেছে। অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের কাছে সারাদেশের হাসপাতালগুলো একপ্রকার জিম্মি। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১টি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম খুঁজে পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব প্রতিহতের জন্য মন্ত্রণালয়ে ২৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছিলো। দুদকের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসা দেওয়া, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইকুইপমেন্ট ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা হয়। ১৩ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়, বদলি করা হয় অনেক কর্মকর্তা মকে। কিন্তু দুই বছর পর পুরোনো রোগেই আবারও আক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টরের বেপরোয়া কমিশন বাণিজ্যের কারনে সরকারি হাসপাতালগুলো অনিয়মের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে । এতে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।সুত্রমতে, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সচিব ও মন্ত্রীর নামে বিশেষে বরাদ্ধসহ বার্ষিক বরাদ্দের নামে ১৫ থেকে ২০ ভাগ হারে কমিশন আদায়ের অভিযোগ রয়েছে লাইন ডাইরেক্টর প্রফেসর ডাঃ মোঃ মাজহারুল হক তপনের বিরুদ্ধে। ১১টি খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির সবকিছুই এখন তার হাতে। বিভিন্ন ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসা দেওয়া, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইকুইপমেন্ট ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কমিশন বাণিজ্য অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লাইন ডিরেক্টরের সম্পর্কে এমন অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মহাখালীস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর প্রফেসর ডাঃ মোঃ মাজহারুল হক তপন দেশের সকল সরকারি হাসপাতালের বার্ষিক বরাদ্ধ ও বিশেষ বরাদ্ধের উপর বেপরোয়াভাবে কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন ।অধিদপ্তরের সুত্রমতে , বার্ষিক বরাদ্ধে শতকরা ১০ ভাগ এবং বিশেষ বরাদ্ধে শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ঘুষ দিতে হয় লাইন ডিরেক্টর মাজহারুলকে । সরকারি হাসপাতালগুলোয় জরুরী চাহিদার কারণে বছরে চার বার বিশেষ বরাদ্ধ প্রদান করা হয়।
সারাদেশে ছোট বড় মিলে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮১৬টি এবং এসব হাসপাতালে গত অর্থ বছরে বিশেষ বরাদ্ধ দেওয়া হয় প্রায় চার’শ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা সামগ্রী, খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় করে।
অনুসন্ধানে জানা যায় , স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডাঃ মাজহারুল হক তপন বিশেষ বরাদ্ধের ১৫-২০ শতাংশ টাকা গুণে নিয়েই বরাদ্ধপত্র ধরিয়ে দেন। এসব বরাদ্ধপত্রের ঘুষের টাকা অগ্রীম প্রদান করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। তারা মাজহারুল হককে ঘুষের নগদ টাকা দিয়ে বরাদ্ধপত্র নেয়। যে হাসপাতালের বরাদ্ধপত্র ঠিকাদার সেটি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট দেয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ঠিকাদারকে অধিক লাভজনক কাজগুলোর কার্যাদেশ দেয়। এভাবেই গণলুটপাট চলছে স্বাস্থ্যসেবা খাতে।
একাধিক সুত্র জানান , হাসপাতালের বিশেষ বরাদ্ধের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার যোগসাজশে অধিক লাভজনক পণ্যের জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ( কয়েকগুণ বেশি) চাহিদাপত্র পাঠায়। আর বরাদ্ধ পেলে প্রয়োজনের কম সামগ্রী ক্রয় করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, লাইন ডিরেক্টর মাজহারুল হক তপনকে বলতে শোনা যায়, ঘুষের ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাসচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে দিতে হয়।
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘুষের এই টাকার সিংহভাগ যায় মাজহারুল হক তপনের পকেটে। সূত্রমতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাবেক পিএস আরিফুর রহমান এই চক্রের সাথে জড়িত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই প্রতিবেদককে বলেন, লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডা: মাজহারুল হক তপন গংরা গুলশানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সন্ধ্যার পর সেখানে ঘুষের টাকা ভাগাভাগি করে এবং নানান ধরণের আমোদ ফুর্তি করে।
সূত্রগুলো আরো জানায়, সম্প্রতি কয়েকটি হাসপাতালে ২২ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার চক্রের মধ্যে রয়েছে আলী এন্টারপ্রাইজের সাজ্জাদ, মুন্নাফ, আলী বাবা, রানা এন্টারপ্রাইজের সিরাজ, ফাহিম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা দুর্নীতিবাজ পলাতক আফজালের বিশেষ সাগরেদ মাজহারুল হক তপন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডাঃ মাজহারুল হক তপনের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি সাড়া দেন নি।