আসিফ ইকবাল, টরেন্টো থেকে :::
কানাডার টরন্টোয় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হবার খবর গণমাধ্যমের কল্যাণে ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছে । এই দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন নিবিড় কুমার দে। তিনিও বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। দেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিতে ছেলে । পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গাড়িটি চালাচ্ছিলেন নিবিড়।
গেল সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় টরোন্টোর ৪২৭-সাউথ বাউন্ড হাইওয়ে ডানডাস এক্সিটে এ দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে দেশের তিন শিক্ষার্থীকে । এমন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন শাহরিয়ার খান, অ্যাঞ্জেলা বারুই ও আরিয়ান দীপ্ত। বর্তমানে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে আইসিইউতে আছেন কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার দে।
কানাডার অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশ (ওপিপি) জানায়, গাড়িতে থাকা চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ভিসায় টরন্টোতে বসবাস করছিলেন। গাড়িটি দ্রুত গতিতে চালানো হচ্ছিল। এছাড়া উচ্চগতি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ব্যান ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে। কানাডাসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে পয়েন্ট বেইসড সিস্টেমে কোন কারণে নিষিদ্ধ ড্রাইভাররা গাড়ি চালাতে পারেন না নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। কিন্তু নিবিড় সেই আইন না মেনে উচ্চগতিতে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। বলা হচ্ছের,চালক হিসেবে তার অনিয়ন্ত্রিত ড্রাইভিং এর বলি হয়েছেন তিন শিক্ষার্থী।
নিবিড় বলেছেন, ‘তিনি গাড়ি চালাচ্ছিন।’
স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশ বলছে, ১৫০ মাইল উচ্চ গতিতে চলছিল নিবিড়ের গাড়িটি। ডিভাইডারে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি আছড়ে পড়ে কংক্রিটের দেয়ালে। মুহূর্তেই গাড়িতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আগুন এতোটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে নেভাতে তাদের অনেক সময় লেগে যায়।
ওন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, দেশ থেকে মা বাবার পাঠানো টাকায় মাস্তি করতো চারজনই। দামি গাড়িতে লং ড্রাইভ, দামি রেস্তোরাঁয় চেক ইন, আর নামকরা ক্লাবে উইকেন্ড কাটানোর মতো বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে এই তরুন তরুণীরা। তাদের জীবনযাপন নিয়ে নানা সমালোচনা ভাসছে সহপাঠীদের মুখে। একইসাথে সহপাঠীদের করুন মৃত্যু হতবাক করে দিয়েছে কানাডায় পড়তে আসা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের, এমন কি পুরো বাংলাদেশী কমিউনিটিকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এমন দূর্ঘটনার জন্য অভিভাবকদের দোষ দিচ্ছেন। পড়াশোনার নামে বিদেশে পাঠানো শিক্ষার্থীদের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে পরিবারের নজরদারি ছিলো না ; বলছেন তারা।
বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘মাত্র বিশ থেকে ২২ বছর বয়স তাদের। অভিভাবকদের নজরদারি প্রয়োজন ছিলো। বাসা থেকে টাকা পাঠানো হতো অবাধে ; সেই টাকাই এমন করুন পরিণতি ডেকে এনেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করে কানাডায় অসংখ্য ছাত্র পড়াশোনা শেষ করেছে। এই দেশে পার্টটাইম চাকরির বিষয়টি নিচু কোন কাজ নয়। ‘
ইমরুল হাসান বলেন, স্প্রিডিং করতে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি এতো বেশি গতিতে চালানো হচ্ছিল ; দূর্ঘটনার পর আগুন ধরে যায়। ‘
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশন ফির টাকা বাংলাদেশ থেকে আনালেও। হাতখরচের টাকা ক্যাম্পাসে বা অন্য কোথাও পার্টটাইম কাজ করে যোগাড় করেন। সমস্যা হলে দেশ থেকে আনেন। কিন্তু একশ্রেণীর অভিভাবক তাদের সন্তানকে কাজে নিরুৎসাহিত করেন। মাসে মাসে বাড়তি টাকা পাঠান। এই কারণে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে অনেকেই। অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে যান।